খুলনা-মোংলা রেল সংযোগ: প্রকল্পের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ, চালু হবে ডিসেম্বরের মধ্যে
খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্প চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইনের নির্মাণকাজ চলছে দ্রুতগতিতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রকল্পের সার্বিক কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
বাকি কাজ শেষে এ বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী খুলনা-মোংলা রেলপথের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছে রেলওয়ে বিভাগ। আর এরমধ্য দিয়েই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর মোংলা যুক্ত হচ্ছে রেল নেটওয়ার্কে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে কথা বলার সময়, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আরিফুজ্জামান বলেন, "বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণ অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। ডিপিপি অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া সময় আছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আশাকরি এই সময়ই কাজ শেষ করতে পারবো।"
করোনাকালে ভারত থেকে মালামাল আসতে ও নানা সংকটে শুরুতেই নির্মাণকাজে বিলম্ব হয়েছে বলে জানান তিনি।
"সিগন্যালিং কাজের জন্য দুবার দরপত্র আহ্বান করেছি। কিন্তু কোনো বিদেশি ঠিকাদার ওই টাকায় মিলছে না। তবে দেশি ঠিকাদার পাওয়া সম্ভব। তাই দেশি ঠিকাদার দিয়ে ওই কাজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছি," বলেন তিনি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের (বিআর) মহাপরিচালক (ডিজি) ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, "যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি করতে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পটি ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়।"
জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন, রেলসেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর পাঁচবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এরইসঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
চলমান এ প্রকল্পের ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনালের প্রজেক্ট ম্যানেজার বলরাম দে জানান, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ছোট বড় মিলিয়ে ৩১টি ব্রিজ ও ১০৮টি কালভার্ট নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। পাইলিংয়ের কাজও প্রায় শেষ হয়েছে। এরপর মাত্র দুটি স্প্যান জোড়া লাগবে। এছাড়া এখনো ৯টি রোড আন্ডারপাসের কাজ বাকি আছে। এগুলোর ড্রয়িং হাতে এলেই দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, "খুলনা-মোংলা রেললাইন সংযুক্ত হলে মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়ার পাশাপাশি নিরাপদ ও আরামদায়ক রেলওয়ে পরিবহন সুবিধায় বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা।"
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, "পদ্মাসেতু চালুর পাশাপাশি মোংলা বন্দরে রেলপথ যুক্ত হলে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে যাবে। একইসাথে খানজাহান আলী বিমানবন্দর এবং চাহিদামতো গ্যাস মিললে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবেন। খুলনার হিমায়িতমৎস্য, পাট ও পর্যটনশিল্প থেকে আয় আরও বাড়বে। দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল।"
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মূসা জানান, ডিসেম্বরে চলমান এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের গতি আরও সঞ্চার হবে।
"ইতোমধ্যে আমরা বন্দরের নাব্যতা সংকট কাটিয়ে উঠেছি। পদ্মা সেতু চালুর ফলে রাজধানী ঢাকার সবথেকে কাছের এ বন্দর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে," যোগ করেন তিনি।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, "মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত হবে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের শিলিগুড়ির রেলযোগাযোগ। ফলে দেশের মধ্যেসহ কমখরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানের মালামাল পরিবহন সহজ হবে। এতে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কনটেইনার সার্ভিসও বাড়বে।"
স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, পদ্মাসেতু চালুর পাশাপাশি মোংলা বন্দরে রেলপথ যুক্ত হলে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়বে। ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ব্যবধান অনেক কমবে। সময় ও খরচ কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহারে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবেন।