পাচার হওয়া টাকা দেশে আনতে সাধারণ ক্ষমার কথা ভাবছে সরকার
দেশের বাইরে অপ্রদর্শিত সম্পদ পাচার করা বাংলাদেশি নাগরিকরা কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই তা দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ পেতে পারে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে মাত্র ৭-১৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দেওয়ার শর্তে বৈধতার এ সুযোগ দেওয়া হবে।
'অফশোর ট্যাক্স অ্যামনেস্টি' দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরের জন্য সম্পদ দেশে আনার ক্ষেত্রে এ সাধারণ ক্ষমা কার্যকর থাকবে বলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট অনুসারে জানা গেছে।
অপ্রদর্শিত সম্পদের অধিকারীরা এর আওতায় ট্যাক্স রিটার্নে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে দেশের বাইরে থাকা তাদের স্থাবর সম্পত্তি প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন। নগদ অর্থ, ব্যাংক হিসাব, সিকিউরিটিজ এবং অন্যান্য আর্থিক উপকরণ (ফিন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট)-সহ অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে ফিরিয়ে না এনেই বৈধ করার ক্ষেত্রে তাদের ১০ শতাংশ কর দিতে হবে বলে জানিয়েছেন এ বিষয়ে অবহিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
এছাড়া, যেকোনো প্রকার নগদ অর্থ, ব্যাংক ডিপোজিট, ব্যাংক নোট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, রূপান্তরযোগ্য সিকিউরিটিজ এবং আর্থিক উপকরণ যদি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করা হয়, তাহলে ৭ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
ট্যাক্স অ্যামনেস্টি এ ধরনের সম্পদ আর নগদ অর্থের অধিকারীদের ট্যাক্স সম্মতি পাওয়ার পাশাপাশি জরিমানা ও ফৌজদারি চার্জ এড়ানোর সুযোগ দেবে।
বর্তমান অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, যেকোনো ব্যক্তি যে অর্থ পাচারের অপরাধ সংগঠিত করে বা করতে সহায়তা করে বা ষড়যন্ত্র করে, সে সর্বনিম্ন চার বছর এবং সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। এর পাশাপাশি অপরাধে জড়িত সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ জরিমানা বা ১০ লাখ টাকা, (বা) যেটি সর্বোচ্চ হয়, তা ধার্য করা হবে।
অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি, স্পেন, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের মতো প্রায় ১৭টি দেশ বিদেশের কর স্বর্গে গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা অপ্রদর্শিত সম্পদ ফিরিয়ে আনতে অফশোর ট্যাক্স অ্যামনেস্টি দিচ্ছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আলাপকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, 'দেশের বাইরে অপ্রদর্শিত সম্পদধারীদের সাধারণ ক্ষমা- দুর্বলতার চিহ্ন। এটি নৈতিকভাবে সঠিক নয় বা অর্থনীতির জন্য কোনো সুবিধা বয়ে আনবে না। অতীতেও এ ধরনের সুযোগ ইতিবাচক ফলাফল দেয়নি।' এই সিদ্ধান্ত বরং প্রকৃত করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, 'যারা তাদের সম্পদ প্রদর্শন করেননি তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমার সুযোগ ব্যবসায়িক খাতের বড় করদাতাদের প্রতি অন্যায় হবে। এই ব্যবসায়ীরা মোট রাজস্ব আদায়ের ৩৮ শতাংশ দেন।'
বিল্ড বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আবুল কাশেম খান বলেন, অপ্রদর্শিত বিদেশি সম্পদকে বৈধ করতে এমন সাধারণ ক্ষমা বর্তমান সংকটকালীন সময়ে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। যদিও এটি নৈতিকভাবে সঠিক নয়।
'নিয়মিত করদাতাদের প্রয়োজনে তাদের অর্থও বিদেশি অ্যাকাউন্টে রাখতে দেওয়া উচিত'- বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ টিবিএসকে বলেন, এই ক্ষমা অর্থপাচারকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আইনি সুরক্ষাও দেবে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে ন্যূনতম কর আদায় দেশের অর্থনীতির জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের অভ্যন্তরে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার বিদ্যমান নীতি
চলতি অর্থবছরে ২৫ শতাংশ কর এবং ১০ শতাংশ জরিমানা প্রদান সাপেক্ষে কর বহির্ভূত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। একই রকম শর্তে ফ্ল্যাট, ব্যাংক আমানত এবং সঞ্চয়পত্রের মতো অঘোষিত সম্পত্তিকে বৈধ করার সুযোগও আছে। ফ্ল্যাটের আকার ও অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে জরিমানাসহ প্রতি বর্গ মিটারের জন্য ২০০-৬,০০০ টাকা দিয়ে বৈধ করা যাবে।
এছাড়া, কালো টাকা বন্ড, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কে ১০ শতাংশ কর দেওয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।