৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযান
লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে সারাদেশে অভিযান শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। লাইসেন্স ছাড়াই প্রায় ৯ হাজার প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ধারণা, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে এ অভিযান চলছে।
তবে বিভিন্ন সময় অবৈধ ও অনিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হলেও এর ধারাবাহিকতা খুব একটা লক্ষ করা যায়নি। জনবলের অভাব, স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উদাসীনতা, অভিযানকালে নিরাপত্তার অভাব এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্ধের অসহযোগিতার কারণে মনিটরিং অব্যাহত থাকে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শনিবার অভিযানের প্রথম দিনে নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, সিলেট, পাবনা, চট্টগ্রাম, সাভার, ধামরাই, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৮৮টি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে জরিমানা এবং সিলগালা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ রোববার জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিকের তথ্য নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তারা।
এর আগে গত ২৬ মে দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আরও বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করলেও নবায়ন করেননি, তাদের নিবন্ধন নবায়নের জন্য সময়সীমা প্রদান করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নবায়ন গ্রহণ না করলে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ২০ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে যার মধ্যে লাইসেন্স আছে ১০,৮৯৩টির। কর্তৃপক্ষের ইনস্পেকশনের অধীনে আছে আরও ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লাইসেন্সের জন্য আবেদন না করেই ৩ হাজারের বেশি প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা।
২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু হয়। চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত এর আওতায় আসেনি সবগুলো বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এর আগে ২০২০ সালের ২৩ আগস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন না করলে হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে সময় জোরালোভাবে অভিযান চলেছিলো। তারপর তা থেমে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক নিবন্ধিত করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সময় বেধে দিয়ে অভিযান চালালে কাজ হয়। ২০২০ সালের আগে নিবন্ধিত প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিলো মাত্র ৪ হাজার, গত দেড় বছরে কিন্তু সেটি ১০ হাজার ছাড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এবারও দ্রুত অধিক প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনা ও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, 'বিভাগীয় কমিশনার ও সিভিল সার্জনদের পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখবো আমাদের সাফল্যের হার কেমন, কতগুলো অবৈধ হাসপাতাল আছে। তারপর সেগুলোর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলবে। লাইসেন্সের জন্য যারা আবেদন করেছে তাদের দ্রুত লাইসেন্স দেয়া হবে। অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।'
মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, 'যেসব হাসপাতাল এখন পর্যন্ত লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেনি সেসব হাসপাতাল খুঁজে বের করা সিভিল সার্জনদের জন্য অনেক সহজ। কারণ একটি জেলায় যে কয়টি হাসপাতালের লাইসেন্স আছে তা সিভিল সার্জনেরা জানেন। বাকিগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।'
হবিগঞ্জের মাধবপুরে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাবনা জেলার নয়টি উপজেলাতে ১৫টি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে চাটমোহর উপজেলার তিনটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লায় রোববার সকাল থেকে অভিযান শুরু হবে।
ঢাকার সাভার উপজেলায় অনিবন্ধিত ২টি হাসপাতাল সিলগালা করার পাশাপাশি একটি হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ, ধামরাইয়ের নিবন্ধনহীন ৭টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে বন্ধের নির্দেশ ও মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলায় একটি অনিবন্ধিত হাসপাতাল সিলগালা করার পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নাটোর সদর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে সাতটি অবৈধ ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে। নাটোর জেলায় অবৈধ ক্লিনিকের সংখ্যা ২০টির বেশি। অবৈধ ক্লিনিক বন্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন।
পাবনায় ১৫টি অবৈধ ক্লিনিকের সন্ধান পেয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ, চারটি বন্ধ করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বাকিগুলো বন্ধ করা হবে।