লাইসেন্সধারী হাসপাতালেও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, রিএজেন্ট
চারটি করে বেড নিয়ে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড, ছোট ছোট তিনটা কেবিন, আইসিইউ বলতে শুধু বেড, তালাবদ্ধ ফার্মেসি, অন্ধকার-অপরিচ্ছন্ন অপারেশন থিয়েটর, একজন মেডিকেল অফিসার ও দুজন নার্স নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের ৫ম তলায় চলছে যমুনা জেনারেল হাসপাতাল। ২০ বেডের হাসপাতালে রোগী ভর্তি মাত্র তিনজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সধারী এ হাসপাতালে সোমবার অভিযান চালিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ সাপোজিটার ও জানুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
শুধু যমুনা জেনারেল হাসপাতাল নয়, বাবর রোডের বিডিএম হাসপাতাল ও হুমায়ূন রোডের ঢাকা ল্যাবে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট পেয়েছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই লাইসেন্স থাকায় প্রতিষ্ঠান দুটিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
শুধু লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল নয়, যমুনা, বিডিএম এর মত লাইসেন্সধারী হাসপাতালেও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে, মানহীন পরিবেশে সেবা দেয়া হচ্ছে। তাই লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান শেষে লাইসেন্সধারী হাসপাতালের শুদ্ধি অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির টিবিএসকে বলেন, 'বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে লাইসেন্স দিয়ে ফেলেছি মানে এই নয় যে আমরা মানুষ হত্যার লাইসেন্স দিয়েছি। আমরা মানুষকে সেবা দেয়ার লাইসেন্স দিয়েছি। অবৈধ হাসপাতাল চিহ্নিত করার পর আমরা লাইসেন্সধারী হাসপাতাল শুদ্ধিকরণে অভিযান চালাবো।'
অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে আহমেদুল কবির বলেন, '৭২ ঘণ্টা ছিল একটি প্রতীকী শব্দ। যতক্ষণ আমরা সব অবৈধ হাসপাতাল চিহ্নিত করতে না পারবো ততদিন অভিযান চলবে।'
'অনিবন্ধিত যেসব হাসপাতাল আছে সেগুলোর মধ্যে যেগুলোতে মানুষ ন্যূনতম চিকিৎসা সুবিধা পাবে সেগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনার চেষ্টা করবো। আর যেগুলোতে একেবারে চিকিৎসার পরিবেশ নাই সেগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিবো, সেগুলোর কোন আবেদন আর ভবিষ্যতে গ্রহণ করা হবে না', বলেন ডা. আহমেদুল কবির।
লাইসেন্সধারী প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে তাদের সার্ভিসের ভিত্তিতে এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বৈধ হাসপাতালের তালিকা ওয়েবসাইটে তুলে দেয়া হবে।
আহমেদুল কবির বলেন, 'আমরা যখন বৈধ হাসপাতালের লিস্ট পাবো, সেগুলো মনিটরিংয়ের আওতায় আসবে। আমরা আশা করি আগামী তিন মাসের মধ্যে একটা ভালো বদল আসবে। বেসরকারি ও সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটা ডিসিপ্লিন নিয়ে আসা, যাতে জনগণ কোনভাবে প্রতারিত না হয়- সেটিই আমাদের আল্টিমেট উদ্দেশ্য।'
সোমবার সারাদেশে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার বলেন, 'হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালিয়ে আমরা দেখছি তারা ওষুধ, রিএজেন্টের মেয়াদ চেক করেনা। আমরা পাঁচ-দশ মিনিটের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট ওষুধ পাচ্ছি, যেগুলোতে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী, আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা করছি।'
গত ২৬ মে সারা দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আল্টিমেটাম শেষে সারা দেশে চলছে অভিযান।
এখন পর্যন্ত অভিযানে সারা দেশের ১,১৪৯টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।