সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ায় মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে আরসা
সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে। সে কারণেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) নামক একটি সংগঠন গড়ে তুলে তার রোহিঙ্গাদের পক্ষে সোচ্চার অবস্থান নেওয়া কিছুতেই মানতে পারেনি মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) শীর্ষ নেতারা। ফলে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আহম্মার ওরফে জুনুনির নির্দেশেই ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে গুলি করে হত্যা করা হয় মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়।
সোমবার (১৩ জুন) কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রে এমন তথ্য রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম অভিযোগপত্রে এমন তথ্য থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া, নাগরিকত্ব আদায়ে সোচ্চার ছিলেন মুহিবুল্লাহ। একই সঙ্গে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কথা বলতেন তিনি।
ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হতো। একই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসব কারণে মুহিবুল্লাহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার প্রধান নেতা জুনুনি মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বকে মেনে নিতে পারছিলেন না এবং ভবিষ্যতে আরসার কর্মকাণ্ডের জন্য মুহিবুল্লাহ হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন, এ ভাবনা থেকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুই দিন আগে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে বৈঠকে মুহিবুল্লাহকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আরসার ৩৬ সদস্য পরিকল্পিতভাবে এ হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করে। যদিও ঠিকানা না পাওয়ায় আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আহম্মার ওরফে জুনুনিসহ ৭ শীর্ষ নেতার নাম বাদ পড়েছে অভিযোগপত্রে। পুলিশ ২৯ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আর ওই ২৯ জনই আরসার বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ও নেতা বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ্য রয়েছে।
অভিযোগপত্রে নাম থাকা আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন ১৫ জন, পলাতক আছেন ১৪ জন। আর নাম-ঠিকানা শনাক্ত না হওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে ৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
উখিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) আল আমিন জানিয়েছেন, মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার নিয়মিত ধার্য দিন আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর। স্বাভাবিক নিয়মে ওই দিন আদালতে দাখিল হওয়া মামলার অভিযোগপত্রের গ্রহণ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম জানান, স্বাভাবিক নিয়মে মামলার ধার্য দিন আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হয়। তবে যেহেতু মামলার অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল হয়ে গেছে বিচারক চাইলে তার আগেও অভিযোগপত্র গ্রহণ শুনানি করতে পারেন। এটা আদালতের বিচারকের উপর নির্ভর করে।
সোমবার সকালে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আকতার জাবেদের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দিন। এতে ২৯ জনকে অভিযুক্ত ও ৩৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।