অশ্লীলতা নিবারণী সমিতি: দেড়’শ বছর আগের এক সেন্সর বোর্ড
১৮৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর টাউন হলে জড়ো হয়েছেন কলকাতার যত আছেন ভদ্রজন। উদ্দেশ্য পুস্তকের, খেউড়ের, কবিগানের, যাত্রার বা সংমিছিলের অশ্লীলতা নিবারণ। অথচ তখনকার কলকাতায় সংস্কৃতি বলতে এর চেয়ে বেশি কিছু ছিলও না। কিন্তু ভদ্রজনেরই বা উপায় কী? সং সেজে ওই সব চাষাভুষো, ফেরিওয়ালা, দর্জি, মুদ্দোফরাশ, ভিস্তিওয়ালা, জেলে, মুচি, কাঁসারিরা সব ফাঁস করে দিচ্ছে। ভদ্র বাবুদের কে ইংরেজের দালাল, কে গোপনে হিন্দু অথচ ভাবে ব্রাহ্ম, কে রাতের আধারে বেশ্যাবাড়ি যায়, তার সবকিছু যে ওই সংওয়ালাদের জানা।
সব ব্রেকিং নিউজ তখন ওদের কাছেই। লোকে ভিড় করে ওদের কথা শোনে, হাসে আর পরে ছড়ায়। চৈত্রসংক্রান্তির দিন, গাজনের মেলায়, স্নানযাত্রায় বা বারোয়ারি পুজোয় ওরা বেড়িয়ে পড়ে। শিবপুর, খুরুট, মেদিনীপুর, ঢাকা, হাওড়ার রাধাপুর, শ্রীরামপুর, তালতলা, বেনেপুকুর, খিদিরপুর, কাঁসারিপাড়া আর জেলেপাড়া কোথায় নেই ওরা? রুপচাঁদ পক্ষী, দাদাঠাকুর মানে নলিনীরঞ্জন পতি এবং রসরাজ অমৃতলাল বসু ওদের জন্য গান লেখেন। অমৃতলাল বসু মারা যাওয়ার পর যে গানটি রচিত হয়েছিল, সেটিও সোৎসাহে শোনার মতো.
এ বছরে কপাল পোড়া
ভেঙে গেল রসের ঘড়া
তাই তো এবার সঙের ছড়া
হয়নি তেমন মিঠে কড়া।
প্রখ্যাত ধনী তারকনাথ প্রামাণিক আর হিন্দু পেট্রিয়টের সম্পাদক কৃষ্ণদাস ওদের উৎসাহ দিত। বিশেষভাবে তৈরি ঘোড়ার কাটরা গাড়ি বা মোষ টানা ট্রাকে করে সঙের দল বের হতো। মাইলটাক দীর্ঘ হতো সঙের মিছিল। বাড়ির বারান্দায়, ছাদে ও জানালায় আবালবৃদ্ধবণিতা সংযাত্রা দেখতে ভিড় করত। গৃহস্থের অতিথির জন্য তৈরি হতো শরবত। থাকত পান-তামাকের ব্যবস্থা। পথের ওপর শামিয়ানাও টাঙিয়ে দেওয়া হতো। সংমিছিল হয়ে উঠেছিল মিলনমেলার নামান্তর। সংযাত্রীরা নাচত, গাইত, হাসত আরও কত কিছু। তাদের সাজ হতো বিদঘুটে, ততধিক বিদঘুটে ছিল তাদের অঙ্গভঙ্গি।
ব্রাহ্ম-ব্রাহ্মণ আর খ্রিষ্টান তাই বাধল জোট, ঠেকাতে হবে অশ্লীলতা, কমিটিও হলো। ব্রাহ্মদের নেতা কেশবচন্দ্রের রেগে যাওয়ার কারণ তো যথেষ্টই ছিল। নিজে ঘোষণা করেছিলেন, মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স হবে চৌদ্দ। আর তিনিই কিনা নিজের মেয়েকে বাল্যাবস্থায় বিয়ে দিলেন কোচবিহারের রাজপুত্রের সঙ্গে। সঙের দলের বুঝতে কি আর বাকি ছিল যে রাজপরিবারের সঙ্গলাভ এই বিবাহের অন্যতম কারণ। ঘটনাটি ঘিরে সঙের গান তখনকার মানুষদের মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। স্বনামধন্য বা প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান বা ধনী কাউকেই ছাড়ত না সং। অশ্লীলতা নিবারণী সভা প্রতিষ্ঠা হলে তা নিয়েও গান বেঁধেছিল সঙের দল-
শহরে এক নূতন
হুজুগ উঠেছে রে ভাই
অশ্লীলতা শব্দ মোরা আগে শুনি নাই
বৎসরান্তে একটি দিন
কাঁসারিরা যত
নেচেকুদে বেড়ায় সুখে
দেখে লোকে কত
যদি ইহা এত মন্দ
মনে ভেবে থাকো
নিজের মাগকে চাবি দিয়ে বন্ধ করে রাখো।
ভণ্ডামি, নষ্টামি, দালাল, মাতাল সকলের বিরুদ্ধেই তারা অস্ত্র শাণাত। ওরা অশিক্ষিত, গরিব মানুষের দল। বিদ্রুপই তাদের অস্ত্র, তাদের সাহসও ছিল জবর। তাই তো বুক চিতিয়ে বলতে পেরেছিল,
আমরা সবাই শিবের চেলা ভূত গাজনের সং
বছর ভরে তা ধেই তা ধেই নাচছি জবর জং
এক চোখেতে মায়ের কান্না, এক চোখেতে হাসি
ঝগড়াঝাটি কুৎসা হুজুগ স্বার্থ ভালোবাসি।
সঙের কার্টুন বকা ধার্মিকের ধরনটি হুতোম প্যাঁচার নকশা রচয়িতা কালীপ্রসন্ন সিংহের বেশ পছন্দ হয়েছিল। বিবরণটি এমন- বকা ধার্মিকের শরীরটি মুচির কুকুরের মতো নাদুর, ভুঁড়িটি বিলাতি কুমড়োর মতো, গলায় মালা, চুলে ও গোপে কলপ দেওয়া। ইংরেজ সরকারও সঙের মিছিল, গান, ছড়াকে দেখত সন্দেহের চোখে। কারণ, সরকারের চাটুকারদের ওপর সঙের কুঠার সদাই থাকত উদ্যত। এদের ব্যঙ্গ করে বাঁধা একটি গান ছিল এমন-
ডান্ডা ধরে গাধা পিটলে
ঘোড়া কভু হয় না
ধরে যখন কান মলা দেয়
তখন বাকা থাকতে পারে না।
নতুন ইঙ্গবঙ্গ যুবক তথা ব্রিটিশ সাজতে যাওয়া ছেলেপেলেরাও ছাড় পায়নি সঙের বিদ্রুপ-বাণ থেকে। পায়নি নতুন আরোপিত আইনকানুনও। দুর্নীতি আর সামাজিক অনাচারও হয়ে উঠত সঙের গানের বিষয়। খিদিরপুরের সঙের যেমন মুখ্য বিষয় ছিল জমাদার, যে কিনা সমাজের জঞ্জাল দূর করার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। কালে কালে সং জাতীয়তাবাদী ভাবধারায়ও উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। তাতে খুশি হয়েছিল আপামর জনসাধারণ সবাই। তবে সং ভাব প্রকাশে প্রায়ই ভদ্রজনের ভ্রু কুচকে যাওয়ার মতো কথা ও ভঙ্গির আশ্রয় নিত, যাকে তারা শ্লীলতার সীমা অতিক্রম করার মতোই দোষনীয় ভাবত।
তাই তো অশ্লীলতা নিবারণী সভা হলে তার স্বেচ্ছাসেবকেরা কম হয়রানি করেনি বটতলার বইয়ের ফেরিওয়ালাদের। হামলা-মামলাও হয়েছে অনেক। তত্ত্ববোধিনী থেকে বঙ্গদর্শন অনেক সাময়িকপত্রই তখন অশ্লীলতা নিবারণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তখনকার বঙ্গদর্শনের ভূমিকা সম্পর্কে এক সমালোচক এমন লিখছেন- বঙ্গদর্শনের মতে অশ্লীলতা ছিল বাঙালির জাতীয় দোষ। তদানীন্তন বাঙালি রসিকতা বলতে বুঝত অশ্লীলতা, গালাগালি বা ইতর ইঙ্গিত। যাহা ভদ্রের অশ্রাব্য বা অপাঠ্য এবং সুনীতির বিনাশক, তাহাই তাহাদের কাছে রসিকতা।
উনিশ শতকের বঙ্গদেশ
আঠারো শতকের শেষ থেকে এক শ বছর বঙ্গদেশে দুর্ভিক্ষ, কৃষক বিদ্রোহ, সিপাহি বিদ্রোহের মতো ঘটনা ঘটেছে। নানা বিতর্কে মুখর ছিল বাঙালি সমাজ। ওই সময় ইতিহাসের গতি ছিল বিচিত্র। ওই একটি শতাব্দীতে এত অজস্র গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে গেছে যে বাঙালির ইতিহাস পার করে ফেলেছে কয়েক শতাব্দীর দূরত্ব। ভাষার ক্ষেত্রেও রূপান্তর আর অগ্রগতি অবাক করার মতো। গদ্যসাহিত্যের উদ্ভব সাহিত্যের বাংলা ভাষাকে কথ্যভাষার কাছাকাছি এনে দিয়েছিল। নকশা, প্রহসন, তর্ক-বিতর্ক এবং আরও সব বিবরণধর্মী রচনায় কথ্যভাষা তথা স্ল্যাং প্রাধান্য পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে বটতলার বইয়ের অবদান বিরাট।
তবে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নানা ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফলে এক ধরনের শুদ্ধ ও অবিকৃত রুচিবোধ গড়ে তোলারও একটি সচেতন প্রয়াস লক্ষ করা যায়। ব্রাহ্মধর্ম আন্দোলন এ ক্ষেত্রে ছিল অগ্রগণ্য। নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মদের সুরুচি ও বিশুদ্ধ মানসিকতার মধ্যে পবিত্রতার একটি ধারণা জড়িত ছিল। এ প্রসঙ্গে হেরম্বচন্দ্র মৈত্রের কথা মনে পড়ে গবেষক অভ্র ঘোষের। হেরম্ব মৈত্র এক যুবকের রুচি বিকার যেন না হয়, সে জন্য স্টার থিয়েটারের হদিশ জানা সত্ত্বেও তাকে তা জানাতে অস্বীকৃত হন।
কারণ, সেখানে গেলে নাটক বা নাটকের সঙের কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গিতে তার রুচির বিকার ঘটতে পারে। গবেষকেরা আরও জানাচ্ছেন, উনিশ শতকের নাগরিকতার একটি বিশেষ দিক হলো বেশ্যা ও বাইজি সংস্কৃতির বিকাশ। তখন নিষিদ্ধ পল্লীতে নানা ধরনের ছড়া, প্রবচন ও গান প্রচলিত ছিল, যৌনতা ছিল যার মুখ্য বিষয়। তবে উনিশ শতকের শেষার্ধে মনীষীরাও ক্রমে মনোযোগী হয়ে উঠেছিলেন কথ্যভাষা বা স্ল্যাংয়ের প্রতি। ব্রাহ্মসমাজ তথা হিন্দুসমাজের রক্ষণশীলতা এবং বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের মতো দুজন সাহিত্যিকের আবির্ভাবে বিংশ শতাব্দীতে গ্রাম্যতাবর্জিত, ব্যঙ্গদীপ্ত, মার্জিত মানে যথার্থ নাগরিক স্ল্যাংয়ের উদ্ভব ঘটে। উল্লেখ্য স্ল্যাং বেশি ব্যবহার হয় শহরাঞ্চলে।
কলকাতার আগে বাংলায় মুর্শিদাবাদ বা কষ্ণনগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর থাকলেও কলকাতাকে কেন্দ্র করেই আরবানাইজেশনের সূচনা। মনে করিয়ে দিই, অষ্টাদশ শতকের শেষ থেকেই কলকাতায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব। কোম্পানির আমলে উপার্জনের নানা উপায় বের হয়। ভাগ্য অন্বেষণে নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ কলকাতায় আসতে শুরু করে। ফলে নানান উপভাষার মিশ্রণে এক নতুন মান্য চলিত স্ল্যাং তৈরি হয়- মাগ, ভাতার, মিনসে যেমন। উইলিয়াম কেরির কথোপকথন প্রকাশিত হয় ১৮০০ সালে। এর কয়েকটি বাক্য এমন- 'এই যে বেণে মাগীর অহঙ্কার আর চকে মুখে পথ দেখে না বা হাঁলো ঝি জামাই খাগি কি বলছিস কিংবা আরে পেটফেলানী খানকি।' বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসেও মাগি শব্দের ব্যবহার অনেক আর সেখানে শব্দটির সঙ্গে হীনতার বোধ নেই।
স্ল্যাং আসলে কী
যদিও 'ভাষার ইতিবৃত্ত' গ্রন্থে সুকুমার সেন বলছেন, 'যে শব্দ বা পদ ভদ্রলোকের কথ্যভাষায় ও লেখ্যভাষায় প্রয়োগ হয় না এবং যাহার উৎপত্তি কোন ব্যক্তিবিশেষের অথবা দলবিশেষের হীন ব্যবহার হইতে তাহাই ইতর শব্দ (স্ল্যাং)।' কিন্তু গবেষক অভ্র ঘোষ মনে করেন, অপশব্দ, অপভাষা, ইতর ভাষা ইত্যাদি সব কটি পরিভাষাই হীনতাসূচক।
কিন্তু স্ল্যাং সবসময় হীনতাবাচক নয়। স্ল্যাংয়ের ব্যবহার মানুষ করে থাকে সচেতনভাবে এবং সামাজিক প্রথা বা সমাজ-স্বীকৃত আচার-আচরণের বিরুদ্ধতার একটা মনোভাব থাকে এর মধ্যে। কথ্যবাক্রীতির (কলোকয়ালিজম) ঠিক পরের থাকের বাক্রীতি হলো স্ল্যাং। এটি কিন্তু উপভাষাও নয়, কারণ উপভাষা মানুষের অভ্যাসজাত আর স্ল্যাংয়ের ব্যবহার সচেতন মনের ব্যাপার। উপভাষার তুলনায় স্ল্যাংয়ের বৈচিত্র্যও বেশি। কারণ, এর শব্দভান্ডার পরিবর্তনশীল এবং বর্ধমান। স্ল্যাংয়ে বলতে গেলে প্রতিনিয়ত প্রতিশব্দের প্রচলন ঘটে, তাই এটি একঘেয়ে নয়।
এসব সত্ত্বেও স্ল্যাংয়ের সংজ্ঞা নির্ধারণ সহজ নয় বলেই বলছেন অভ্র ঘোষ। তিনি স্ল্যাংয়ের কিছু লক্ষণের কথা বলছেন, সেগুলো হলো মান্যভাষাবহির্র্র্র্র্ভূত, অপ্রচলিত অর্থে প্রচলিত, ইনফরমাল পরিবেশে ব্যবহৃত, ক্ষণজীবী এবং তথাকথিত ভদ্ররুচিবিরোধী। বিশেষ উল্লেখ, স্ল্যাংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অশ্লীলতা বা ভালগারিজম, তবে সবটা নয়। স্ল্যাংয়ের সীমানা নির্দেশ করাও সহজ নয়, তবে জার্গন (পেশাগত ভাষাবৈশিষ্ট্য), অপরাধজগতের ভাষা, বাগধারা ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত। ভিড়ের মধ্যে অন্যদের বুঝতে না দিয়ে কথাবার্তা চালানোর জন্য অপরাধজগতের ভাষার উদ্ভব। পুলিশকে ফাঁকি দেওয়াও একটি উদ্দেশ্য।
স্ল্যাং ব্যবহারের কিছু কারণ এরূপ হইহল্লা বা ফুর্তি প্রকাশের একটি ভালো মাধ্যম স্ল্যাং, ভাষার একঘেয়েমি কাটাতেও স্ল্যাং প্রয়োজন, স্বাতন্ত্র্য বা নিজস্বতা দেখানোর জন্য স্ল্যাংয়ের বক্তা স্ল্যাং ব্যবহার করেন, বক্তব্যকে টানটান, সংক্ষিপ্ত বা চাঁচাছোলা করার জন্য স্ল্যাং ব্যবহার করা যেতে পারে, সভার গাম্ভীর্য ভেঙে দেওয়ার জন্যও স্ল্যাং কার্যকর, প্রেমের সম্পর্ক ভাঙনের দুঃখমোচনেও স্ল্যাং ভালো ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ট্যাবুবিষয়ক কথা বলার জন্যও স্ল্যাংয়ের প্রয়োগ বেশ দেখা যায়। এ জন্য সব ভাষাতেই যৌন স্ল্যাংয়ের প্রচলন বেশি দেখা যায়, মদ্যপান ও মদ্যপায়ীদের স্ল্যাংও ওই কারণেই বেশি।
অধস্তনদের তাদের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন করে দেওয়ার জন্যও স্ল্যাং ভালো মাধ্যম। গোপনীয়তার জন্য যে স্ল্যাং জরুরি, তা অপরাধজগতের ভাষা থেকেই টের পাওয়া যায়। তবে মনে রাখা দরকার, গোষ্ঠীগত স্ল্যাং এবং মান্য স্ল্যাংও আছে। ধর্ম, রাজনীতি, বৃত্তি বা বয়সের কারণে মানুষের মধ্যে গোষ্ঠিচেতনা গড়ে ওঠে। যেমন উকিলরা ইনজাংশান বোঝাতে ইনজেকশন বলেন। বাসের কন্ডাক্টররা ছোট গাড়ি বোঝাতে প্লাস্টিক বলেন। ফুটবল মাঠে জাল কাঁপানো গোল কথাটি বহুল প্রচলিত। গোপনীয়তা রাখতে দোকানদারদেরও আছে নিজস্ব শব্দভান্ডার। কসাইরা যেমন চর্বিকে চিটটি বলে। আর যে স্ল্যাং কোনো গোষ্ঠী বা বৃত্তির আওতায় সীমাবদ্ধ থাকে না, তাকে বলে মান্য স্ল্যাং। যেমন মিথ্যা বলা বা ফাঁকি অর্থে ঢপ দেওয়া। মধ্যযুগের বাংলা স্ল্যাং নিয়ে কোনো অভিধান না থাকায় সাহিত্যে স্ল্যাংয়ের অনুসন্ধান করতে হয়েছে। তাতে বিমুখও হতে হয়নি। প্রবাদ বা ছড়ায় স্ল্যাংয়ের অনেক নজির পাওয়া গেছে, যেমন একে বউ নাচনি, তায় খেমটার বাজনি, খানকি, তার মান কি, পার হলে পাটনি শালা, সতি মাগির তাঁতি নাঙ ইত্যাদি। অশ্লীলতার দায়ে মধ্যযুগের একটি প্রণয়কাব্য 'বিদ্যাসুন্দর', যার ধারায় পরে কৃষ্ণরাম, বলরাম, কবিশেখর, ভারতচন্দ্র রায় প্রমুখ কাব্য রচনা করে যশস্বী হয়েছিলেন, সেটি অশ্লীলতা নিবারণী সভার (অনিস) কাঁচিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। বিশেষ করে ভারতচন্দ্র রায়ের (১৭১২-১৭৬০) বিদ্যাসুন্দর পোড়ানোর উৎসবও করেছে অনিস। ঊনবিংশ শতাব্দীতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু ভদ্রসমাজ তার বর্ণনায় প্রত্যক্ষ যৌন অশ্লীলতা লক্ষ করেন।
বিদ্যাসুন্দর, গোপাল উড়ে ও কবিয়ালরা
বিদ্যা ও সুন্দরের প্রণয়কাহিনি নিয়ে বিদ্যাসুন্দর। রূপবান ও গুণবান রাজকুমার সুন্দর কালিকাদেবীকে তুষ্ট করে সুন্দরী রাজকন্যা বিদ্যার পাণিলাভের বর পায়। পরে দেবীর দেওয়া শুকপাখি নিয়ে বিদ্যার পিতৃরাজ্যে উপস্থিত হয়। রাজপ্রাসাদের মালিনীর মাধ্যমে চিত্র ও প্রণয়লিপি পাঠিয়ে বিদ্যাকে আকৃষ্ট করে সুন্দর। তারপর সুড়ঙ্গপথে বিদ্যার ঘরে ঢোকে এবং তারা মিলিত হয়। আঠারো ও উনিশ শতকের কলকাতায় এই কাহিনি এত জনপ্রিয় হয় যে বিশ্বনাথ মতিলাল নিজের যাত্রাদলের নাম দেন বিদ্যাসুন্দর।
গোপালের জন্ম ওডিশায় এক চাষি পরিবারে। জীবিকার জন্য সে কলকাতা আসে এবং ফল ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন। মতিলাল গোপালের 'চাপাকলা চাই' হাঁক শুনে ডেকে আনেন কাছে। গোপাল দেখতে সুদর্শন ছিল। গলাও ছিল মিঠা। তাই মতিলাল তাকে যাত্রাদলে ভর্তি করে নেন। একপর্যায়ে গোপাল দলের অভিনেতা ও গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। এই সময়ে রাজা নবকৃষ্ণের (১৭৩৩-১৭৯৭) এক বাড়িতে আসর বসে। সেখানে গোপাল মালিনীর (তখন যাত্রায় পুরুষরাই নারীর ভূমিকায় অভিনয় করত) ভূমিকার অভিনয় ও গান করে বিশেষ সুনাম অর্জন করে।
উল্লেখ্য শোভাবাজার রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নবকৃষ্ণ। রবার্ট ক্লাইভের উপস্থিতিতে তিনি কলকাতায় দুর্গাপূজা শুরু করেন। তিনি তাঁর মায়ের শ্রাদ্ধে ৯ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন। শ্রাদ্ধসভা উপলক্ষে আগত অতিথিগণের জন্য আবাসস্থল তৈরি করান, তা থেকেই অঞ্চলের নাম হয় সভাবাজার বা শোভাবাজার। যা হোক গোপাল উড়ে পরে নিজেই একটি যাত্রাপালার দল করেন। সেই সূত্রে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, সম্পদেরও অধিকারী হন। গোপাল তখনকার হালকা জনরুচি বুঝতেন। তাঁর নারী ভক্তও ছিল অনেক। এদের কেউ ধোপানি, কেউ গয়লানি, কেউ ঢপওয়ালি। বাবুসমাজের অন্তঃপুরেও তাদের যাতায়াত ছিল। তারাই অন্দরমহলে পৌঁছাত বটতলার বই আর গোপালের গান। গোপালের গানের কথা ছিল এমন-
হায়, রসিক সুজন, নারীর মনোরঞ্জন
প্রিয়া সনে সঙ্গোপনে করেন সুখ-আলাপন।
সেকালের সেন্সর বোর্ড যে গোপালকেও 'খারাপ' জ্ঞান করত, তা বুঝি বলে দিতে হয় না। কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী, তাই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিষবৃক্ষ উপন্যাসেও গোপালের গানের কথা আছে।
এবার আসা যাক কবিগানের কথায়। ১৭৬০-১৮৩০ হলো কবিয়ালদের প্রকৃত বিকাশকাল। এই সময় বাংলা কাব্যের ধর্মীয় উপাদানগুলো ফিকে হয়ে আসতে শুরু করে। মুদ্রণযন্ত্রের আবির্ভাব সে প্রয়াসকে সফল করে তোলে। কবিগান হলো প্রতিযোগিতামূলক গান। দুটি দল পালাক্রমে গান পরিবশেন করে এতে। কবিয়ালরা ছিলেন নিচুতলার মানুষ। মুখে মুখে তারা গান রচনা করত। সেই সঙ্গে শ্রোতাদের চমকে দিতে তারা বিভিন্ন শব্দ কৌশল প্রয়োগ করত, যেমন একই শব্দ একাধিকবার ব্যবহার করে ধ্বনিতরঙ্গ সৃষ্টি করা, একই শব্দ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা ইত্যাদি।
উনিশ শতকের কলকাতায় বিখ্যাত কবিয়ালরা ছিলেন হরু ঠাকুর, রাম বসু, ভোলা ময়রা, যজ্ঞেশ্বরী দাসী, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি প্রমুখ। জাতিতে পর্তুগিজ ছিলেন অ্যান্টনি। তাকে নিয়ে দুটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হয়েছে, একটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার, অন্যটিতে (জাতিস্মর) অ্যান্টনির ভূমিকায় ছিলেন প্রসেজিৎ। ভোলা ময়রার জনপ্রিয়তাও ছিল বলার মতো। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বলে গেছেন, বাংলাকে জাগাতে যেমন রামগোপাল ঘোষের মতো বাগ্মী, হুতোম প্যাঁচার মতো আমুদে লোকের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন ভোলা ময়রার মতো লৌকিক গায়কদের।
উল্লেখ্য কবিগানের প্রসারের পেছনেও ছিল কলকাতার নব্য ধনিকশ্রেণি। তারা চাইত উন্মত্ত আনন্দ। তাই তাৎক্ষণিক আনন্দ দিতেই কবিয়ালরা কাব্য সৃজন করত। এসব পদ্যে রুচির চিহ্ন খুব একটা থাকত না। দুটি দলের প্রথম দলের কথাকে বলা হতো চাপান আর দ্বিতীয় দলের কথাকে বলা হতো উতোর। পাচালি, খেউড়, আখড়াই, হাফ-আখড়াই, বসা কবিগান, দাঁড়া কবিগান, ঢপ, টপ্পা, তর্জা ইত্যাদি ছিল কবিগানের বিভিন্ন ধরন। সাধারণত একে অপরকে কথার আক্রমণে পর্যুদস্ত করে ক্ষণিকের আনন্দ লাভই ছিল মূল লক্ষ্য। সেই সঙ্গে এর শিল্পগুণও অবহেলা করার মতো নয়। সাধারণ মানুষের নানা দ্বন্দ্ব, সমস্যা ও ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতেন কবিয়ালরা। কবিয়াল নিধুবাবুরই একটি গানের পঙ্ক্তি এটা-
বিনে স্বদেশি ভাষা
পুরে কি আশা?
অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির একটি পঙ্ক্তি এমন:
খ্রিষ্ট আর কষ্ণ কিছু প্রভেদ নাই রে ভাই
শুধু নামের ঘোরে মানুষ ফেরে, এ-ও কোথা শুনি নাই।
তারপর কবিয়াল রাজেন্দ্র সরকার, যিনি জন্মেছিলেন নমশুদ্র সম্প্রদায়ে। ব্রাহ্মন ও কায়স্থ গোষ্ঠীর ঘৃণার শিকার ছিল এই সম্প্রদায়, অথচ তারাই ছিল প্রধান উৎপাদক শ্রেণি, ঘৃণা করার প্রতিবাদে তিনি রচনা করেছিলেন এই গানÑ
কত মদের নেশায়, বদের দশায়, ব্রাহ্মনে খায় বেশ্যাদিগের ভাত
বেশ্যারা কি ঠাকুর জগন্নাথ?
এবার আর ভদ্রজনে মাথা ঠান্ডা রাখে কীভাবে? সেন্সর বোর্ড রে রে করে উঠেছিল, ঠান্ডা করতে চেয়েছিল কবিয়ালদেরও। তবে সেন্সর বোর্ডের কাঁচির তলায় বেশি রক্তাক্ত হয়েছিল বটতলা, এবার সে গল্প বলে শেষ করা যাক।
বটগাছ ঘিরে আখড়া
বটতলার উকিল কথাটিও চালু হয়েছিল শোভাবাজার-চিৎপুরের ওই বটতলার ভাব নিয়েই। উনিশ শতকের বাংলার মুদ্রন ও প্রকাশনাশিল্প চালু হয়েছিল ওই বিরাট বটগাছ কেন্দ্র করেই। তবে তা মূলত কম শিক্ষিত ও সাধারণ মানের পাঠকের চাহিদা মেটাত। সুকুমার সেন তাঁর বটতলার বই প্রবন্ধে বলছেন, সেকালে অর্থাৎ আজ থেকে দেড় শ বছরেরও বেশি কাল আগে শোভাবাজার কালাখানা অঞ্চলে একটা ব বনস্পতি ছিল। সেই বটগাছের শানবাঁধানো তলায় তখনকার পুরবাসীদের অনেক কাজ চলত। বসে বিশ্রাম নেওয়া হতে; আড্ডা দেওয়া হতো; গানবাজনা হতো। বইয়ের পসরাও বসত। অনুমান হয় এই বই ছিল বিশ্বনাথ দেবের ছাপা, ইনিই বটতলা অঞ্চলে এবং সেকালের উত্তর কলকাতায় প্রথম ছাপাখান খুলেছিলেন, বহুকাল পর্যন্ত এই বান্ধা বটতলা উত্তর কলকাতায় পুস্তক প্রকাশকদের ঠিকানা চালু ছিল। ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য ছোট সস্তার প্রেস গড়ে ওঠে। এগুলোর চৌহদ্দি ছিল দক্ষিণে বিডন স্ট্রিট ও নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, পশ্চিমে স্ট্র্যান্ড রোড, উত্তরে শ্যামবাজার স্ট্রিট এবং পূর্বে কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট।
এখান থেকে প্রকাশিত বইগুলোকে বলা হতো বটতলার পুঁথি। পাচালি, পঞ্জিকা, পুরাণ, লোককাহিনি ও পুঁথি বটতলা থেকে প্রকাশিত হতো। আরও বের হতো গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো গুপ্তকথা, রতিশাস্ত্র, যৌনতা উদ্রেগকারী প্রহসন, বেশ্যাকাহিনি ও গাইডের মতো রগরগে বই। এবং সর্বোপরি শহরের নামী পরিবার বা সমাজপতিদের পরিবারের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির কথাও প্রকাশিত হতো পুস্তকাকারে। বটতলায় ছাপা পঞ্জিকা তখন কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় ঝাঁকায় করে বিক্রি করত ফেরিওয়ালারা আর সেই পঞ্জিকার ফাঁকেই অন্তঃপুরে ঢুকে পড়ত কেচ্ছাকাহিনি। তাই তৎকালীন ভদ্রসমাজ বটতলার সাহিত্যকে ভালো চোখে দেখেনি তা বলাই বাহুল্য।
অথচ বটতলার বইয়ের সম্ভারের মধ্যে ঘরবাড়ি ও রাস্তা তৈরির শিক্ষা, চাকরি পাওয়ার পদ্ধতি, ব্যায়াম শিক্ষা, অদৃশ্যলিপি লিখন পদ্ধতি, ধাঁধা-ম্যাজিকও ছিল। মাইকেল মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্রের বইও বের করেছিল বটতলা। জনপ্রিয় ধর্মগ্রন্থগুলো তিন রকম সংস্করণে বের হতো- সাধারণ, সচিত্র ও শোভন। বটতলা সজাগ-সচেতনও ছিল, যেমন ১৮৫৫ সালে প্রকাশিত আয়ুর্বেদ চিকিৎসার বই 'চিকিৎসার্ণব'-এ লেখা ছিল, 'যেসব চিকিৎসক মাত্র চারি আনা ভিজিট নেন, তাদের জন্য মানে হাতুড়ে ডাক্তারদের জন্য লেখা।' বটতলার বই 'রেলপ্রহসন' পড়তে পড়তে পাঠক হাসি থামাতে পারত না। নানা পরিস্থিতিতে আমরা যেসব প্রবাদ ব্যবহার করি, আদতে সেগুলোর অনেকগুলোই ছিল বটতলার বইয়ের শিরোনাম, যেমন চোরের উপর বাটপারি, পান্তা ভাতে ঘি ইত্যাদি।
বটতলার বই আসলে কোনো কিছুকেই বাদ দিত না। তবে খ্যাতি ছিল আদিরসাত্মক বইয়ের জন্যই বেশি। তাই তো ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া নামের আরেক সেন্সর বোর্ড ১৮২০ সালে চারটি আদিরসাত্মক বইকে চিহ্নিত করে, যেগুলোর নাম 'রসমঞ্জরী', 'রতিমঞ্জরী', 'আদিরস' ও 'শৃঙ্গারতিলক'। ১৮৫৫ সালে রেভারেন্ড জেমস লংয়ের বাংলা বইয়ের তালিকায় নাম ছিল 'বেশ্যারহস্য', 'প্রেমবিলাস', 'রসসাগর', 'রতিকেলির'ও। তিনি এগুলোকে ফরাসি সাহিত্যের কুৎসিত রূপের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। বইগুলোতে উডকাট ব্লকে আঁকা ছবিও থাকত। লেখকদের মধ্যে পঞ্চানন ব্যানার্জি পরিচিত ছিলেন আদিরসের শেক্সপিয়ার বলে। ওই সময়ে আদিরসের অত চাহিদা কেন দেখা দিল?
প্রশ্নের উত্তরে গবেষকেরা বলছেন, নতুন গজিয়ে ওঠা বাবুরা নিত্যনতুন আদিরসের সাহিত্য খোঁজ করতেন; বেশ্যাবাড়িতে যা পাঠ করলে গা গরম হয়ে ওঠে। বাবুদের গা গরমের রসদ তখন যুগিয়েছে বটতলা। লং সাহেবের চেষ্টায় ইংরেজ সরকার ১৮৫৬ সালের জানুয়ারিতে একটি আইন প্রণয়ন করে, যাতে কুৎসিত ছবি ও শৃঙ্গাররসঘটিত পুস্তক প্রকাশ ছিল দণ্ডনীয়। তিনজন সে আইনে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেনÑপঞ্চাশ আর এক শ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল। আইনের চোটে কিছুদিন চুপ মেরে গিয়েছিল বটতলা। তারপর আবার ১৮৬৩ সালে ছাপা হয় 'লজ্জতন্নেছা', যাতে তেইশটি উত্তেজক ছবি ছিল, বইটিও হয়েছিল বেস্ট সেলার। তারপরই কিনা গঠন করা হয়েছিল অশ্লীলতা নিবারণ সমিতি।
এদের স্বেচ্ছাসেবকেরা ঘরে ঢুকে ঢুকে অশ্লীল বই খুঁজত, ফেরিওয়ালার ঝাঁকা নামিয়ে দেখত, অশ্লীল বই অছে কি না। কেউ রাস্তায় অশ্লীল গান করলেও তুলে দিত পুলিশের হাতে। শেষে বটতলার প্রকাশকেরা চাদা তুলে ব্যারিস্টার নিয়োগ করলেন। মামলার ফল অবশ্য প্রকাশকদের বিপক্ষেই গিয়েছিল। তাতে সমিতির উৎসাহ বেড়ে গিয়েছিল দশ গুণে। তবে তাদের বাড়াবাড়িতে একসময় লোকেরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। সমিতি প্রমাণ গোনে আর উৎসাহেও ভাটা পড়ে। পত্রিকায় ব্যঙ্গ করে লেখা হয়, এরা (অশ্লীলতা নিবারণী সমিতি) এবার বটতলার বদলে নিমতলায় গেলে ভালো করবে। নিমপাতায় স্নান করে হতে পারবে শুদ্ধ-শুভ্র।