বুদ্ধিমানরা কি বেশি বেশি গালি দেয়?
কেউ গালি শুনলে জিভ কেটে, মুখ লাল করে কানে হাত চাপেন। আবার অনেকের কাছে গালি এক ধরনের 'শিল্প'। তবে প্রতিটি সংস্কৃতিতেই গালি একটি ট্যাবু।
গালি নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ কথা বাড়াতে না চাইলেও বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকতে পারেননি। গত কয়েক বছরে তাদের অনেক গবেষণায় গালির সম্ভাব্য কিছু স্বাস্থ্যকর দিকের কথা জানা গেছে। গালির ভালো-খারাপ দিক নিয়ে এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানিয়েছে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক।
গালি কি আপনাকে স্মার্ট বানায়?
'যে নিজের ক্ষোভ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে না, সে-ই গালিতে কাজ সারে'- এ কথা হয়তো আপনিও শুনেছেন। কিন্তু ২০১৫ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে বিপরীত তথ্য।
গবেষণাটিতে অংশগ্রহণকারীদের একটি অক্ষর দিয়ে ওই অক্ষরে শুরু হওয়া কিছু সাধারণ শব্দ, কিছু গালি, ও কিছু প্রাণীর নাম লিখতে বলা হয়। দেখা যায়, যারা বেশি গালি লিখেছিল, তারা বেশি সাধারণ শব্দও লিখতে পেরেছিল।
এ রিসার্চের ভাষ্য- মোটাদাগে গালি মানুষকে বুদ্ধিমান করে তোলে হলেও এটির কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।
নেই পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ
সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার একটি মতবাদ হলো সহ-সম্বন্ধ (কোরিলেশন) দ্বারা কার্যকারণ (কজেশন) বোঝায় না। এর অর্থ হলো দুটো চলকের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকলেও তার মানে এ নয় যে ওই দুই চলক একে অপরের কারণে পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ দুটো ঘটনার মধ্যে সহ-সম্বন্ধ থাকলে তার ওপর নির্ভর করে ওই দুই ঘটনার মধ্যে কোনো কার্যকারণ সম্পর্কের সিদ্ধান্তে আসা যায় না।
এ কারণেই গালি দেওয়ার সঙ্গে মেধার কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করার জন্য এখনো আমাদের হাতে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
ঠিক বিজ্ঞানও নয়
এ ধরনের গবেষণা কিন্তু সত্যিকার অর্থে ব্যক্তির বুদ্ধির পরিমাপও করতে পারে না। কারণ স্রেফ একটি চলক ব্যবহার করে মানুষের বুদ্ধিমত্তা মাপার মতো জটিল কাজ করা সম্ভব নয়।
গালির কি কোনো উপকারিতা আছে?
অনেক গবেষক গালিকে একটি বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখেন। তাদের ধারণা অনুযায়ী, গালির ফলে শারীরিক সংঘাতের আশঙ্কা কমে যায়।
আবার আরেকদলের বিশ্বাস, গালির মাধ্যমে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এগুলো স্রেফ অনুমান যদিও।
গালি, সততা ও সৃজনশীলতা
গালি নিয়ে বেশিরভাগ আলাপ এখনো তত্ত্বীয় পর্যায়েই রয়েছে। তবে কিছু কিছু ধারণার ওপর পরীক্ষাও চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
২০১৭ সালে করা তিনটি আলাদা গবেষণায় গালির সঙ্গে সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ইতিবাচক সংযোগ পাওয়া গিয়েছে। একই ব্যাপার দেখা গেছে গালির সঙ্গে মানুষের সৃজনশীলতার সম্পর্কেও।
ব্যথা সহ্যের ক্ষমতা বাড়ায় গালি
গালি নিয়ে আরেকটি প্রচলিত গবেষণা করা হয় ঠান্ডা পানিতে হাত চুবিয়ে। মূলত এ ধরনের গবেষণায় অংশগ্রহণকারীকে বরফ-শীতল পানিতে যতক্ষণ সম্ভব হাত ডুবিয়ে রাখতে হয়।
২০০৯ সালের একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেক পানিতে হাত ডোবানোর সময় বারবার গালি দেন। বাকি অর্ধেক সাধারণ শব্দ দিয়ে বেদনা প্রকাশ করেন। দেখা যায় যারা গালি দিয়েছিল, তারা ঠান্ডা পানিতে বেশিক্ষণ হাত ডুবিয়ে রাখতে পেরেছিল। তাদের কাছে ওই পরীক্ষাটি বাকিদের তুলনায় কম কষ্টকর মনে হয়েছিল।
তবে ২০১১ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি বেশি গালি দিলে ব্যথা কমানোর ওপর এর প্রভাব কমে যায়।
গালির স্থলে অন্য গ্রহণযোগ্য প্রতিশব্দ ব্যবহার করলে তার প্রভাব কেমন হয় তা নিয়েও গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০২০ সালের একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশকে গালির বদলে কিছু প্রতিস্থাপক শব্দ ব্যবহার করতে বলা হয়।
দেখা যায়, ঠান্ডা পানিতে হাত চুবিয়ে রাখার সময় এ ধরনের গালি-প্রতিস্থাপক শব্দ ব্যবহার করলে তা-তে শারীরিক ব্যথা কমে না। অর্থাৎ, কেবল গালিতেই কাজ হয়, অন্য কোনো শব্দ দিয়ে গালির বিকল্প তৈরি করা যায় না।
গালি দেওয়া বাড়াবেন কি?
গালির কিছু ইতিবাচক স্বাস্থ্যগত দিক রয়েছে। তাই বলে আপনার কি উচিত হবে যখন তখন গালির বাণ ছোঁড়া?
মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক ড. গ্রেস টোরেক এক্ষেত্রে আপনাকে অনুৎসাহিতই করছেন। তিনি বলেন, 'আর যা-ই হোক, কারও গালি ও আচরণ দেখে তার প্রতি দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত নয়।'
কারণ, আমরা সবাই আমাদের গালির চেয়েও বেশি কিছু।