‘সুনামগঞ্জকে বাঁচান, কে বেঁচে আছে মরে যাচ্ছে জানতে পারছি না’
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে সারা দেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শহরের কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই, সব পানির নিচে। এই মুহূর্তে সুনামগঞ্জের সবার ঘরে খাওয়ার পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ।
পরিস্থিতি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
ছিন্নমূল মানুষ যেমন দাঁড়াবার জায়গা পাচ্ছে না, তেমনি যাদের বসতবাড়ি রয়েছে তারাও খাবার পানি ও খাদ্য সংকটে। জেলার বাইরে থাকা পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সময় পার করছেন। পরিবারের একটু খোঁজ জানার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আর্তনাদ করতে দেখা গেছে অনেককে। কেউ জানেনা কে বেঁচে আছে কে মারা যাচ্ছে বা কে অসুস্থ।
"সুনামগঞ্জকে বাঁচান। কেউ কারো খোঁজ নিতে পারছেনা। মানুষ কীভাবে বেঁচে আছে, না মরে যাচ্ছে কেউ জানতে পারছেনা। সর্বগ্রাসী বন্যা মহাপ্রলয়। এই দিনে স্থানীয় প্রশাসনের কোন হট লাইনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা, ফলে কার্যত বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সেবা।" ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জে থেকে কোনোভাবে উপায়ে সামাজিম মাধ্যমে এই লেখাটি পোস্ট করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক সামস শামীম।
আজ চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাওয়ার কথা ছিল ২ সন্তানের এক জননীর। কিন্তু গত দুই দিনে তার কোন খবরই পাওয়া যাচ্ছেনা। বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তার ভাই কল্লোল দাস বনি জানান, তার বোনকে নিয়ে আজ দুপুরের ফ্লাইটে সিলেট থেকে ব্যাংগালোর যাওয়ার কথা ছিল কিডনির চিকিৎসার জন্য। বিমানের টিকিট, হোটেল রিজার্ভেশন, ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়া, ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট, সব শেষ। এখন মনে হচ্ছে তার আর যাওয়া হচ্ছে না।
"তার ১৮ মাসের দুই জমজ বাচ্চা আছে। বর্তমানে তার অবস্থা বিশেষ সুবিধার নয়। পা দুইটা ফুলে কলাগাছের মত হয়ে গেছে। সারাক্ষণ সেই ফোলা পা থেকে পানি চুইয়ে পড়ছে। এভাবে চললে হয়তো আর বাঁচবে না। সরকারিভাবে কোন স্পিডবোটের সাহায্যে তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী বিমান বন্দর পর্যন্ত কি নিয়ে আসা সম্ভব? আছে কোন উপায়? এই নিয়ে গত দুইদিন ধরে চেষ্টা করেও পারিনি। এখন সিলেট বিমানবন্দরও বন্ধ।"
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নুতন পারা এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সঞ্চিতা দে এবং চাকুরীজীবী অসুস্থ স্বামী কাজল দে। তাদের দুই মেয়ে । এক মেয়ে মৌলভীবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত অন্য মেয়ে সিলেটে আছেন লেখাপড়ার জন্য।
তারা জানান, তাদের ৪তলা বাসার নিচ তলা পুরাটাই পানিতে ঢুবে গেছে। বাবা-মা নিচ তলায় থাকতেন এখন উপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছেন সাথে আশেপাশের আরও কয়েকটি বাসার মানুষ। গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে যোগাযোগ নেই বাবা বাইপাসের রোগী মাও অসুস্থ। তাদের খাদ্য নেই, বিশুদ্ধ পানির সংকট। দুই মেয়ে জানতেও পারছেন কী তাদের সর্বশেষ অবস্থা।
এই পরিবার তাদের অবস্থান জানলেও অনেকেই জানেন না কোথায় আছেন তার পরিবার । নিজের পরিবারে জন্য উদ্বিগ্ন তাবাসসুম তালুকদার পরিবারের খোঁজ পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, "কেউ কি আজ সুনামগঞ্জ যাবেন? গেলে কাইন্ডলি আমার আব্বুর একটু খোঁজ নিয়ে পারবেন। দুদিন ধরে খুব অসহায়।"