দেশে নিউক্লিয়ার মেডিসিন সেবার পরিধি বাড়বে
দেশের ৫ টি নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইনস্টিটিউটে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এতে ঢাকার বাইরে কম খরচে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের মাধ্যমে রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার সুযোগ পাবে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি ইনস্টিটিউটগুলোর রোগ নির্ণয়ের সামর্থ বৃদ্ধি এবং রোগীর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত হবে।
মোট ২১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসের (আইএনএমএএস) আধুনিকায়ন করা হবে। বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন ২০২৫ সালের মধ্যে এ কাজ শেষ করবে।
ইতোমধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে আগামী অর্থবছরে শুরু হবে প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেেসর পিইটি-সিটি বিভাগের পরিচালক ও প্রধান, ডা. শামীম মমতাজ ফেরদৌসী বেগম টিবিএস-কে বলেন, সূক্ষ্ম নির্ভুলভাবে ক্যান্সার, থাইরয়েডের জটিল রোগ নির্নয় ও চিকিৎসা প্রদানের সক্ষমতার কারণে দিন দিন নিউক্লিয়ার মেডিসিন ট্রিটমেন্টের ব্যবহার বাড়ছে।
"ঢাকার বাইরে মেডিকেল কলেজগুলোতে পরমাণু চিকিৎসা পদ্ধতির সুযোগ থাকলেও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও জনবলের অভাবে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। তাই সেবা নিতে অর্থ ও সময় ব্যয় করে ঢাকায় আসতে হচ্ছে তাদের। এ পরিস্থিতিতে এ প্রকল্প নিউক্লিয়ার মেডিসিন চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"
১৯৬২ সালে ঢাকা মেডিক্যাল ক্যাম্পাসে সর্বপ্রথম 'রেডিও আইসোটোপ' নামে বাংলাদেশে পরমাণু চিকিৎসার যাত্রা শুরু হয়। সাধারণ জনগণকে স্বল্পমূল্যে পরমাণু চিকিৎসা সেবা দিতে দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসের (আইএনএমএএস) স্থাপনের মাধ্যমে এ চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
তবে ঢাকার বাইরের বেশিরভাগ আইএনএমএএস সেন্টারের যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে গেছে, রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে পারছে না বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
ফরিদপুর আইএনএমএএসের পরিচালক ডা. শংকর কুমার দে জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে ফরিদপুর আইএনএমএএসে স্থাপিত স্ক্যানিং মেশিন ৬ মাস ধরে নষ্ট হয়ে পরে আছে। মেশিনটির আর সার্ভিসিং করা যাবেনা বলে কোম্পানি জানিয়ে দিয়েছে। ফরিদপুর ইনমাসে ক্যান্সার নির্নয়ের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পেট-সিটি স্ক্যান মেশিন নেই।
তাই ক্যান্সার, থাইরয়েডের বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ফরিদপুরের মানুষকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হয়। ঢাকায় রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় সিরিয়াল পেতে দেরি হয় ও খরচও বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অত্যাধুনিক মেশিন আসবে, তখন মানুষ আরো উন্নত সেবা পাবে। তবে মেশিন দেয়ার পাশাপাশি জনবল বাড়ানো জরুরি।
এখন স্যাংশন যে পদ রয়েছে তাতেও চিকিৎসকসহ জনবল ঘাটতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানসম্মত সেবা দিতে জনবলের পোস্ট বাড়াতে হবে ও নিয়োগ দিতে হবে।
প্রস্তাবিত ডিপিপিতে বৈদেশিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় বাবদ ১২২ কোটি টাকা প্রস্তাব কনা হয়েছে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫৬.৩৭%।
স্থানীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় বাবদ ১৮ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮.৬৩%।
নিউক্লিয়ার চিকিৎসার চাহিদা বাড়ছে
ক্যান্সার, থাইরয়েডসহ বিভিন্ন ধরণের ননকমিউনিকেবল রোগ বেডে যাওয়ায় সঠিকভাবে রোগ নির্নয় ও চিকিৎসার জন্য নিউক্লিয়ার চিকিৎসার চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু ঢাকার বাইরের আইএনএমএএস সেন্টারগুলোতে পেট সিটি স্ক্যানসহ অত্যাধুনিক মেশিন না থাকায় বিএসএমএমইউতে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে যায়। সেখানে সিরিয়াল না পেলে অনেক বেশি টাকা খরচ করে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা নিতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরমাণু চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগ নির্নয়ের পাশাপাশি রেডিও আইসোটোপ প্রয়োগের মাধ্যমে থাইরয়েড ক্যান্সারসহ থাইরয়েড সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
বরিশাল আইএনএমএএসের পরিচালক ডা. নাফিসা জাহান টিবিএস-কে বলেন, আগের তুলনায় আমাদের রোগী অনেক বেড়েছে। দিনে গড়ে ১৫০ রোগী আসে সেবা নিতে। রোগীদের বসার জায়গা দিতে পারি না, সেবা পেতে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়।
''আমাদের সেন্টারে এখনো পেট সিটি স্ক্যান মেশিন নেই। বৃহত্তর বরিশালবাসীর এ সেবার জন্য ঢাকায় যেতে হয়, ঢাকার ওপর চাপ বাড়ে। তাই এ অঞ্চলের মানুষকে সেবা দিতে পিইটি-সিটি মেশিন জরুরি'', বলেন তিনি।
ডা. শামীম মমতাজ ফেরদৌসী বেগম টিবিএস-কে বলেন, পিইটি-সিটি অ্যাডভান্স টেকনোলজি। এর ফলে ক্যান্সার নির্ণয় সহজ হচ্ছে।
''ক্যান্সার কোন স্তরে আছে, কোথাও ছড়িয়ে গেছে কিনা, চিকিৎসা অর্থাৎ কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপিতে ঠিকমত রেসপন্স করছে কিনা, নতুন করে আবার রোগ ফিরে আসে কিনা সেটা দেখা, ক্যান্সারের সঠিক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়।এতে রোগীর কষ্ট ও খরচ কমে যায়।''
'এই প্রকল্পের আওতায় পরমাণু সেবা ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নের পাশাপাশি আইএনএমএএস সমূহের চাহিদার ভিত্তিতে আধুনিক মানের পিইটি-সিটি, স্পেক্ট-সিটি, বিএমডি, থাইরয়েড গামা ক্যামেরা, থাইরয়েড আপটেক, এবং কালার ডপলার মেশিন স্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে স্বল্পব্যয়ে মানুষের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে।
''গ্রামের দরিদ্র মানুষের কম খরচে জেলা শহরে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের মাধ্যমে উন্নত সেবা পাবে।''