মার্চ প্রান্তিকে শিল্পখাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৩৩ শতাংশ
করোনা মহামারির কারণে গেল বছর শিল্পখাতের বিনিয়োগ শ্লথগতিতে ছিল। এখন দেশের অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসায় ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোদমে শুরু হয়েছে। তাই চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩৩.৭৫ শতাংশ।
চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে দেশের শিল্পখাতে মোট ঋণ বিতরণ হয়েছে ১২৭,৬৭১ কোটি টাকা। গত ২০২১ সালের মার্চ প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ হয় ৯০,৯৬৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণের বিতরণ বেড়েছে ৩৬,৭০৫ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিল্পঋণ প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২০২১ সালের শেষ ডিসেম্বর প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ হয়েছে ১২৪,৮৬৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাস ব্যবধানে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২,৮০৬ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত বছরের মার্চে কোভিডের প্রভাব থাকায় শিল্পকারখানা অনেকটা বন্ধ ছিল। এছাড়া নতুন শিল্পকারখানা নির্মাণ অনেক কম ছিল যার কারণে শিল্পখাতে ঋণ বিতরণ কম ছিল। তবে সরকারের দেওয়া বিভিন্ন বিশেষ প্রণোদনার ঋণ প্রবাহ বাড়ায় সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণও কিছুটা বেড়েছে।
হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শিল্পঋণ আদায় হয়েছে ১০১,৮৭৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৮৪ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবছর আদায় বেড়েছে ২০.১৪ শতাংশ।
এদিকে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে মেয়াদী শিল্প ঋণ ( টার্ম লোন) বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র খাতে বিতরণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় কমেছে ৩৯ কোটি টাকা।
এছাড়া চলতি মূলধন ঋণ (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন) বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র খাতে বিতরণ করা হয়েছে ১০৪,৩৩০ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ৭৩ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে বৃদ্ধি পেয়েছে ৪১.৭৮ শতাংশ।
এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, 'মহামারি পরিস্থিতি কিছু উন্নতি হওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ বাড়ছে। আরও যেহেতু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ঋণ তারই একটা অংশ, এটা বাড়াটা স্বাভাবিক।'
তিনি আরও বলেন, 'দেশের আমদানি-রপ্তানি দুটোই বেড়ে যাওয়ায় শিল্প-কারখানাগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি কিনতে অধিক টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। যার কারণে অধিক পরিমাণে ঋণ নিচ্ছে। ফলে দেশের মোট আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে।'
এদিকে আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অধিক পরিমাণে মার্কেটে ডলার ছাড় করতে গিয়ে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে জুনে ৪১.৩৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের আগস্টে ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে।
চলতি বছরের জুলাই থেকে এপ্রিলের মধ্যে, আমদানি ৪১ শতাংশ বেড়ে ৬৮.৬৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যেখানে রপ্তানি ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৪১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এর ফলে ২৭.৫৬ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। যা গত বছরের এপ্রিল শেষে ছিল ১৪ লাখ ৬৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যাংক খাতে মোট ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।