উপার্জন নয়, উত্তরাধিকার সূত্রে তারা বিলিয়নিয়ার
ওয়ালমার্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের বড় ছেলে রব ওয়ালটন বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে কয়েক বিলিয়ন ডলারের সম্পদ পেয়েছিলেন। ২৩ বছর ওয়ালমার্ট-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ওয়ালটনের এখন মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের ১৫তম শীর্ষ ধনী তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উত্তরাধিকারসূত্রে ধনী হওয়াদের তালিকায় তিনি আছেন পঞ্চমে।
ওয়ালটন পরিবারের সদস্যরা এখনো অর্ধেকের বেশি ওয়ালমার্ট-এর মালিক। তাদের মধ্যে সাতজনের সম্পদের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
ফোর্বস-এর তৈরি করা সেরা ধনীর তালিকায় দেখা যায় অনেক ধনীই উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের জোরে ধনী হয়েছেন। অবশ্য অনেকেই সেই সম্পদ নিজ চেষ্টায় বাড়িয়ে তুলেছেন।
কিন্তু এ ধরনের বিলিয়নিয়ারেরা কেবল অল্প কয়েকটি কোম্পানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিভিত্তিক বড় কোম্পানি কার্গিল-এর মালিকদের ১২ জন বিলিয়নিয়ার উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদ পেয়েছেন। একইরকম আরেকটি কোম্পানি হচ্ছে উইসকনসিনভিত্তিক এসসি জনসন।
কক ইন্ডাস্ট্রিজ-এর মালিক চার্লস কক ও তার তিন ভাই বাবার মৃত্যুর পরে ব্যবসার হাল ধরেন। বর্তমানে ফোর্বস-এর হিসাবমতে চার্লস ককের সম্পদ ৬০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। নিজের বাবার কাছ থেকে অস্ট্রেলিয়ার দুইটি সংবাদপত্রের মালিক হন রুপার্ট মারডক। সেই দুই পত্রিকা থেকেই মিডিয়া মোগল হয়ে ওঠেন তিনি।
সবমিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ জন বিলিয়নিয়ার উত্তরাধিকারী মোট ৫৬৮ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সম্পদের মালিক। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৭০১ জন বিলিয়নিয়ারের ৪.২ ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদের ১৩.৫ শতাংশ। চলুন উত্তরাধিকারসূত্রে হওয়া কয়েকজন বিলিয়নিয়ারকে চিনে নেওয়া যাক।
চার্লস কক (৫৯.৬ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: কক ইন্ডাস্ট্রিজ
তেল ও পরিশোধন কোম্পানি হিসেবে ১৯৪০ সালে কক ইন্ডাস্ট্রিজ-এর প্রতিষ্ঠা করেছিলন ফ্রেড। পরে তার দুই ছেলে চার্লস কক ও ডেভিড কক ওই সম্পদের মালিক হন। ২০১৯ সালে ডেভিড মারা যান। এখন কক ইন্ডাস্ট্রিজ-এর চেয়ারম্যান ও সিইও চার্লস কক। তার কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো।
জুলিয়া কক (৫৯.৬ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: কক ইন্ডাস্ট্রিজ
প্রয়াত ডেভিড ককের স্ত্রী জুলিয়া কক। স্বামীর মৃত্যুর পর তার সম্পদের উত্তরাধিকারী হন তিনি। কক ইন্ডাস্ট্রিজ-এ ডেভিডের থাকা ৪২ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা স্থানান্তরিত হয় জুলিয়া ও তার তিন সন্তানের মধ্যে।
জিম ওয়ালটন (৫৮.৩ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: ওয়ালমার্ট
১৯৬২ সালে স্যাম ওয়ালটন ওয়ালমার্ট প্রতিষ্ঠা করেন। তার ছোট ছেলে জিম ওয়ালটন এখন কোম্পানিটির ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ২০১৬ সালে ছেলে স্টুয়ার্টের ওপর কোম্পানির দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন তিনি। বর্তমানে পারিবারিক মালিকানাধীন আর্ভেস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
অ্যালিস ওয়ালটন (৫৭.৫ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: ওয়ালমার্ট
স্যাম ওয়ালটনের একমাত্র কন্যা অ্যালিস পারিবারিক ব্যবসায় নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করেছেন এখন পর্যন্ত। তবে তাকে কখনো শীর্ষ কোনো পদে দেখা যায়নি। বরং তার আগ্রহ ঘোড়া পোষা, শিল্প সংগ্রহ ইত্যাদি বিষয়ে।
রব ওয়ালটন (৫৭.২ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: ওয়ালমার্ট
১৯৯২ সালে স্যাম ওয়ালটন মারা যাওয়ার পর তার বড় ছেলে রব কোম্পানির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৫ সালে তার পদত্যাগের সময় ওয়ালমার্ট-এর মোট কর্মীসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৩০ লাখে। এখনো ওয়ালমার্ট-এর পরিচালনা পর্ষদে আছেন তিনি।
ম্যাকেঞ্জি স্কট (৩০.৭ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: অ্যামাজন
২০১৯ সালে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস তাদের বিচ্ছেদের সময় নিয়মানুযায়ী ম্যাকেঞ্জিকে ৭৮.৮ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেন। এরপর নিজের অনেক সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন ম্যাকেঞ্জি। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার দান করেছেন তিনি।
জন মার্স (২৯.৭ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: ক্যান্ডি, পোষা প্রাণীর খাবার
১৯১১ সালে দাদা ফ্রাংক মার্স ক্যান্ডির ফার্ম চালু করেছিলেন। এরপর বাবার হাত ধরে জন ও তার দুই ভাই-বোন ওই ফার্মের মালিক হন। জন ও তার ভাইয়ের হাত ধরে কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় বাড়াতে সক্ষম হয়।
জ্যাকেলিন মার্স (২৯.৭ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: ক্যান্ডি, পোষা প্রাণীর খাবার
২০ বছর ধরে পারিবারিক ক্যান্ডি ফার্মে কাজ করেছেন জ্যাকেলিন মার্স। ছিলেন পরিচালনা পর্ষদেও। বাবা ফরেস্ট সিনিয়র ১৯৯৯ সালে মারা যাওয়ার পর দুই ভাই জন ও ফরেস্ট জুনিয়রের মতো তিনিও বিপুল সম্পদের মালিক হন।
মিরিয়াম অ্যাডেলসন (২৫.১ বিলিয়ন ডলার)
সস্পদের উৎস: ক্যাসিনো ব্যবসায়
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে স্বামী শেল্ডনের মৃত্যুর পর তার জুয়ার ব্যবসার মালিক হন মিরিয়াম। নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত লাস ভেগাস স্যান্ডস-এর ৫২ শতাংশের মালিক মিরিয়াম। এ কোম্পানিটির সিঙ্গাপুর ও মেক্সিকোতেও ক্যাসিনো রয়েছে।
লেনার্ড লডার (২০.৭ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: এসটে লডার
১৯৪৬ সালে লডারের মা-বাবা এসটে লডার নামক এই প্রসাধনী কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। লেনার্ড লডার বর্তমানে কোম্পানিটির ২০ শতাংশের মালিক। প্রায় তিন দশক কোম্পানির সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ১৯৯৯ সালে পদ থেকে অবসর নেন লেনার্ড।
অ্যাবিগ্যালি জনসন (১৮ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: অর্থ ব্যবস্থাপনা
১৯৪৬ সালে বোস্টনভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ড ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন দ্বিতীয় এডওয়ার্ড সি. জনসন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সিইও ও চেয়ার হচ্ছেন অ্যাবিগ্যালি জনসন। ২০১৬ সালে বাবার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি।
রুপার্ট মারডক (১৭.৭ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: গণমাধ্যম
ফক্স নিউজ, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য সান ইত্যাদি গণমাধ্যমের মালিকানা রুপার্ট মারডকের হাতে। ২২ বছর বয়সে বাবার কাছ থেকে প্রথম সংবাদপত্রের মালিকানা পান মারডক। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রুপার্ট মারডক এখন বিশ্বব্যাপী মিডিয়া মোগল হিসেবে পরিচিত।
লুকাস ওয়ালটন (১৪.৬ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: ওয়ালমার্ট
স্যাম ওয়ালটনের নাতি লুকাস তার বাবার কাছ থেকে সম্পদের মালিক হন। ২০০৫ সালে বাবা জন ওয়ালটন বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। তখন বাবার সম্পদের তিন ভাগের একভাগের উত্তরাধিকারী হন লুকাস। তবে পারিবারিক ব্যবসায় তার কোনো পদ নেই।
লরেন পোয়েল জবস (১৩.৯ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: অ্যাপল, ডিজনি
২০১১ সালে স্বামী স্টিভ জবস মারা যাওয়ার পর অ্যাপল ও ডিজনির শেয়ারের কিছু অংশের মালিক হন লরেন। তারপর ওই অর্থে দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিন, বিভিন্ন ক্রীড়াদলে শেয়ার কেনেন তিনি।
ডোনাল্ড নিউহাউজ (১২.১ বিলিয়ন ডলার)
সম্পদের উৎস: গণমাধ্যম
ছোট একটি সংবাদপত্র দিয়ে শুরু করেছিলেন নিউহাউজের বাবা স্যাম। এরপর তিনি অ্যাডভান্স পাবলিকেশন্স প্রতিষ্ঠা করেন। এটির অধীনে রয়েছে দ্য নিউ ইয়র্কার, ভ্যানিটি ফেয়ারের মতো ম্যাগাজিন। পারিবারিক এ ব্যবসা ডোনাল্ড ও তার ভাই স্যামুয়েল ভাগ করে নেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রেসিডেন্ট পদে আছেন তিনি।
- সূত্র: ফোর্বস