অভিনব প্রতিবাদ: বিচারপতির ১০০ রুপি জরিমানায় ৫০ পয়সার কয়েন নিয়ে হাজির আইনজীবী
কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে ৫০ পয়সার কয়েন সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। অবশ্য, নিছক শখের বশে নয়। গত ৬ জুলাই সর্বোচ্চ আদালতের জরিমানার এক আদেশের প্রতিবাদ জানানোর কৌশল হিসেবেই প্রায় বিরল এ ধাতব মুদ্রা জোগাড়ের প্রচেষ্টায় যুক্ত হন তারা।
ন্যায়বিচার সবার জন্য সমান হয় না। সুপ্রিম কোর্টেও ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই এগিয়ে। আদালতে এমনই অভিযোগ করেছিলেন তাদের সহকর্মী আইনজীবী রিপক কনসাল।
তিনি হাতেনাতে প্রমাণও দিয়েছিলেন। আগেরদিন রাত আটটায় রেজিস্টার হওয়া মামলার শুনানি হয় পরেরদিন কোর্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গেই। কারণ সেই মামলা দায়ের করেছিলেন কোনও এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। রিপক সেই প্রমাণ তুলে ধরেছিলেন আদালতের সামনে।
তিনি অভিযোগ করেন, রেজিস্ট্রার সব সময় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের মামলার শুনানি আগে করানোর ব্যবস্থা করে দেয়। ফলে রেজিস্ট্রার খাতার অনেক পিছনে থাকা কোনও প্রভাবশালীর দায়ের করা মামলার শুনানি হয়ে যায় নির্ধারিত সময়ের আগেই। সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচার পেতে দেরি হয় কোনও সাধারণ মানুষের।
গত ৬ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের বিচারক অরুণ মিশ্রা, এস আব্দুল নজির ও এম আর শাহের বেঞ্চ অভিযোগটি শুনানির পর খারিজ করেছেন।
বিচারকরা এসময় জানান, সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রির সব সদস্য দিন-রাত এক করে কাজ করেন। এই মামলা তাঁদের মনোবলে আঘাত হানতে পারে। রেজিস্ট্রাররা সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁদের বিরুদ্ধে এই ভিত্তিহীন অভিযোগের কোনও মানে নেই।
আদালত এসময় রিপককে ১০০ রুপির প্রতীকী জরিমানা প্রদানের নির্দেশ দেন।
এঘটনায় অন্য আইনজীবীরা রিপকের পক্ষই নেন। আদালতের সিদ্ধান্তটির প্রতিবাদ জানাতে বেছে নেন অভিনব এক পন্থা।
কারণ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও মনে করেন, বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা এগিয়ে। তাদের মামলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তবে এনিয়ে কেউই বিচারপতির কাছে অভিযোগ করতে পারেননি। রিপক শেষমেশ বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধেন। তাই আদালত তাঁকে জরিমানা করলে সব আইনজীবীরা মিলে তার প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নেন।
৫০ পয়সায় কয়েন এখন তেমন পাওয়া যায় না; কিন্তু সব আইনজীবীরা মিলে 'Contribute Rs 100' নামের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খুলে ৫০ পয়সার কয়েন সংগ্রহ করতে শুরু করেন। তারপর ২০০টি কয়েন কোর্টে জমা করা হয় জরিমানা হিসাবে। বার কাউন্সিল-এর তরফে এভাবেই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।