এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন চ্যালেঞ্জ: উৎপাদনশীলতা আরও বাড়িয়ে ব্যবসার ব্যয় কমানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পর বাণিজ্য ও বিদেশি সহায়তায় ক্ষতির সম্ভাব্য ঝুকি মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা, অবকাঠামো ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে ব্যবসার ব্যয় কমানো, পণ্যের ডিজাইন ও মান উন্নত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেছেন, ফ্যাশন-ডিজাইন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল (এপিআই) পার্ক দেশকে ২০২৬ সালের মধ্যে স্থায়ীভাবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
দ্য ইন্সষ্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এর আয়োজনে এক ওয়েবিনারে সোমবার সন্ধ্যায় বক্তারা এ সব কথা বলেন।
"এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন: চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ '' শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক সিনিয়র সচিব ও আইসিএবির সিইও শুভাশীষ বসু।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বিদেশি বাণিজ্যে অগ্রাধিকার সুবিধা, বিদেশি অনুদান ও নমনীয় ঋণ পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
উত্তরণের নেতিবাচক প্রভাবগুলি হ্রাস করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করা, অন্যান্য বাজারের প্রবেশাধিকার বাড়িয়ে তোলা, পণ্য এবং বাজারের বৈচিত্র্যকরণের পরামর্শ দেন শুভাশীষ বসু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দরিদ্র দেশের কাতার থেকে বের হয়ে আসাটা খুবই সম্মানের। তবে তা টেকসই করতে পারলেই উত্তরণ অর্থবহ হবে।
মন্ত্রী বলেন, আগামীতে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে গর্ব করা হচ্ছে। তবে জনসংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে নবম থাকায় অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারেও বাংলাদেশের নবম স্থানে উঠে আসা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এটা করতে হলে সবার কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে। আর এটা করা খুব সহজ নয়।
ওয়েবিনারে ব্যবসার বাড়তি ব্যয়, দুর্নীতি, ব্যবসাবিমূখ কর কাঠামোসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন বক্তারা। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বাতাসের মতোই সর্বত্র দুর্নীতি অনুপ্রবেশ করেছে, কিছুটা মেনে নিয়ে, কিছুটা পাশ কাটিয়ে, নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়ে এখানে কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সুশাসন নিশ্চিত না হলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। সব সমস্যা সমাধানে সরকার কাজ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরীফা খান বলেন, এলডিসি উত্তরণ নিয়ে সব আলোচনা আর চেষ্টা হাতেগোণা কয়েকটি খাতে সীমাবদ্ধ আছে। এ কারণেই শীর্ষ রপ্তানি খাত আরএমজিতে আয় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে, দ্বিতীয় শীর্ষ খাতের আয় মাত্র এক বিলিয়ন ডলার। বন্ডেড ওয়্যারহাউজসহ সব সুবিধা তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতের জন্যও উন্মুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ করা ছয়টি দেশেই এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) বেড়েছে। বাংলাদেশে এফডিআই বাড়াতে হাইটেক পার্ক আর অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ সব অবকাঠামোর সুবিধা দেশের উদ্যোক্তারাও পাচ্ছেন।
ওয়েবিনারে আইসিএবি প্রেসিডেন্ট মাহমুদউল হাসান খসরু এফসিএ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ হুমায়ুন কবির।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই- এর উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ বলেন, শিল্পের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে কস্ট অব বিজনেসে। আর ব্যবসার খরচ মূলত ট্যারিফ কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল। সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি তিনি কর কাঠামো সংশোধনের পরামর্শ দেন।
অ্যাপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, আমাদের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপিয় ইউনিয়ন। এই বাজার রক্ষায় সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েট করা গর্বের বিষয়। তবে সমস্যা হলো গ্রাজুয়েশনের পর দায়িত্ব বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, প্রতিবছর রপ্তানিতে বিপুল পরিমাণ প্রনোদনা দিয়ে আসছে সরকার। উত্তরণের পর এ প্রনোদনা বন্ধ করতে হবে মন্তব্য করে তিনি তার আগে থেকেই শিল্প খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।