৯ মাস বন্ধ থাকলেও কাগজ কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে ২৪৪ শতাংশ!
প্রায় ৯ মাস যাবৎ মাগুরা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানী লিমিটেডের কারখানা বন্ধ।
মূলত, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে এলসি খুলতে না পারায় কোম্পানীটির কারখানা চলছে না।
তারপরও পেপার ও পেপারজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানীটির রেভেনিউ ও মুনাফায় প্রবৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে।
ধামরাইয়ের শ্রীরামপুর এলাকায় অবস্থিত মাগুরা ইকোনোমিক জোন সরেজমিন পরিদর্শন ও দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে উৎপাদন বন্ধের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কোম্পানী সচিব মুস্তাফিজুল রহমান দাবি করেছেন, উৎপাদন চালু আছে। এখন কাজ কিছুটা কম হলেও কারখানা বন্ধের কারণ তার জানা নেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানাবেন বলে জানান তিনি।
মাগুরা ইকোনোমিক জোনের কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় এলসি খুলতে না পেরে সময়মত কাঁচামাল আমদানী করতে না পারা, কাজের অর্ডার না থাকায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী-মার্চের পর আর আর চালু হয়নি পেপার প্রসেসিং এন্ড প্যাকেজিং।"
তিনি বলেন, 'আপাতত কাজ না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক। নিয়মিত শ্রমিকের সংখ্যা কম, ব্যয়ও কম। এ বছর কাজের অর্ডার না থাকায় ফেব্রুয়ারী-মার্চের পর আর কোনো কাজ হয়নি। আশা করছি খুব শীঘ্রই কোম্পানীটি চালু হবে।"
মুস্তাফিজুল রহমান বলেন, "কাঁচামাল আমদানির কারণে উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে না। কারণ পাশেই গ্রুপের পেপার ফ্যাক্টরি রয়েছে। র' ম্যাটেরিয়ালে সমস্যা নেই।"
কাজ কিছুটা কম হলেও রাজস্ব আয় ও মুনাফা কিভাবে বাড়ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আগের প্রান্তিকের চেয়ে ব্যবসা ভালো হয়েছে।"
এদিকে কারখানা বন্ধ হলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) কিছুই জানায়নি বাংলাদেশ পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানী।
২০২১ সালের জুন মাসে ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) থেকে মূল মার্কেটে ফিরেছে বাংলাদেশ পেপার প্রসেসিং।
মূল মার্কেটে ফেরার পরই কোম্পানীটির শেয়ার দামে উল্লম্ফন শুরু হয়। শেয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর অভিযোগও উঠেছিল।
২০২১ সালের ১৩ জুন মূল মার্কেটে ফেরার সময় কোম্পানীটির প্রতিটি শেয়ার দাম ছিল ১৭.৬ টাকা।
চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিটি শেয়ার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩১৩ টাকা। যদিও এখন প্রতিটি শেয়ার ২০০ টাকার নীচে কেনাবেচা হচ্ছে।
পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর মুদ্রণ এবং প্যাকেজিং পোর্টফোলিওতে বই, স্টেশনারী এবং অফসেট প্রিন্টিং, ফটোকপি পেপার, রেজিস্টার, ডায়েরি, ক্যালেন্ডার, ম্যাগাজিন এবং বার্ষিক প্রতিবেদনের মতো নানাবিধ পণ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
১৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে তিন পরিচালক
ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফেরার সময় কোম্পানীর উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তিন বছর কোনো শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন না, এমন শর্ত থাকলেও শর্ত শিথিল করে কোম্পানীর তিন উদ্যোক্তা-পরিচালককে শেয়ার বিক্রির অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
মূলত, মূল মার্কেটে ফেরার ১০ মাসের মাথায় কোম্পানীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুধু ঋণ পরিশোধের জন্য চলতি বছরের এপ্রিলে এই শেয়ার বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়।
ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়ে ঋণ পরিশোধের নামে তিন পরিচালক ১৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। ইতোমধ্যে, কোম্পানীর তিন পরিচালক ৯.৩৬ লাখ শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করেছে।
অনুমোদন দেওয়ার সময় কমিশনের চেয়্যারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম টিবিএসকে বলেছিলেন, কোম্পানীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ঋণ পরিশোধের জন্য যতটুকু শেয়ার বিক্রি করা প্রয়োজন, ততটুকুই বিক্রি করতে পারবে।"
ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, কোম্পানীর স্পন্সর পরিচালক মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন বিক্রি করেছেন ১,০০,৯৮০টি শেয়ার, মাগুরা গ্রুপ দুই দফায় চার লাখ ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ বিক্রি করেছে ৪.৩৬ লাখ শেয়ার।
রাজস্ব ও মুনাফায় প্রবৃদ্ধি
পেপার খাতের ব্যবসায় বাজারে শীর্ষস্থানে আছে বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড। টিস্যু খাতের উপর ভর করে ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানীটির রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ।
পেপার পণ্যের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ হলেও টিস্যু খাতে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩৩ শতাংশ।
তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১৪৪ শতাংশ। আর মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ২৪৪ শতাংশ।
মহামারীর কারণে গত অর্থবছরে কোম্পানীটির রাজস্ব কমলেও ২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব মহামারী পূর্বের অবস্থাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানী সচিব মুস্তাফিজুল রহমান বলেন, "আগের বছর ব্যবসা ভালো ছিল না, এবার বেড়েছে। যার কারণে রেভেনিউ ও মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে।"
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরেও কোম্পানীটির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৩৯%।