দ্বিতীয় প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিলের নতুন নীতি বাস্তবায়ন এবং পরিশোধের সুযোগ শিথিল করায় চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা কমেছে।
এর আগে সেপ্টেম্বরে মোট খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। ডিসেম্বরে তা ১ লাখ ২০ হাজার কোটিতে টাকায় নেমে আসে।
সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ৯.৩৬ শতাংশ ছিল, যা ডিসেম্বরে কমে ৮.১৬ শতাংশ হয়।
যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ কমার অন্যতম কারণ হলো ঋণ পুনঃতফসিলের সহজ সুবিধা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিনের খেলাপি ঋণগুলোকে এখন ব্যাংকের বোর্ডই নিয়মিত করতে পারবে। এর আগে ঋণ পুনঃতফসিলে প্রায় ৮-১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হতো, যা এখন মাত্র ২-৪ শতাংশ'।
যমুনা ব্যাংকের এমডির মতে, 'সাধারণত ব্যাংকগুলো বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রতিটি সূচকের বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কারণ এর উপর ভিত্তি করে রেগুলটরি প্রতিষ্ঠান বার্ষিক নিরিক্ষা করে থাকে। যেকারণে এই সময়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ব্যাংকাররা অনেক তোরজোর করে থাকেন। আবার গ্রাহকও নতুন বছরে নতুন ঋণ পাওয়ার জন্য তাদের খেলাপি ঋণকে স্বাভাবিক করতে চান'।
মহামারির কারণে গত দুই বছরে ঋণ পরিশোধ অনেকাংশে শিথিল ছিল উল্লেখ করে মির্জা ইলিয়াস বলেন, ব্যবসায়ীদের অনুরোধে এমনকী ২০২২ সালেও পরিশোধে ছাড় অব্যাহত রাখা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিশোধের সময় পেছানো (ডেফার্ড পেমেন্ট) এবং মেয়াদি ঋণের অর্ধেক কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দেয় সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরের জন্য। এর ফলেও খেলাপি ঋণ কমেছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান একই মতপোষণ করেন। তবে তিনি ব্যাংকগুলোর ক্যাশ রিকভারি পর্যালোচনার ওপর গুরুত্ব দেন।
এদিকে ব্যাপক ঋণ পুনঃতফসিলের ফলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমলেও, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এধরনের ঋণকে দুর্বল সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। চলতি বছরে বছরের জুন থেকে খেলাপি ঋণের তথ্যসহ পুনঃতফসীলকৃত ঋণের পরিমাণ জানাতে বলেছে।
বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের কান্ট্রি রিপোর্টে আইএমএফ জানায়, ঋণ পুনঃতফসীলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সর্বোত্তম চর্চাকে চলতি বছরের জুন থেকে গ্রহণ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিটের দুর্বলতা দূর করতে চলতি বছরের জুনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি সার্বিক ও সময়নিষ্ঠ খেলাপি ঋণ নিষ্পত্তির কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যা আইএমএফ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পারফরম্যান্সের মানদণ্ড হিসাবে নির্ধারণ করেছে।
খেলাপি ঋণকে নন-পারফর্মিং ঋণ (এনপিএল)-ও বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের গড় এনপিএল অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য তা ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনবে।
ডিসেম্বর শেষে মোট খেলাপি ঋণের ২০.২৮ শতাংশই ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা ৫.১৩ শতাংশ, বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৪.৯১ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ১২.৮০ শতাংশ।
গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ডাউন পেমেন্ট কমানো এবং পুনঃপরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর পর থেকে ঋণ পুনঃতফসিল প্রায় ৫০ শতাংশ হারে বাড়ে।
গত ১৮ জুলাই জারি করা এক প্রজ্ঞাপন অনুসারে, নিজেদের মোট খেলাপি ঋণের ন্যূনতম ২.৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪.৫ শতাংশ এককালীন পরিশোধ করে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন খেলাপিরা।
এর আগে এককালীন পেমেন্টের সীমা ছিল ১০-৩০ শতাংশ। তবে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই ছাড় পায় খেলাপিরা।