বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর আরো বেশি নির্ভর করবে সরকার
আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি কমানোর জন্য ব্যাংকিং খাতের উপর আরো বেশি নির্ভর করতে যাচ্ছে সরকার। বিশ্লেষকদের ধারণা, এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ কমে যাবে; পরিণামে বিনিয়োগের বৃদ্ধি ধীরগতির হয়ে যেতে পারে।
আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭.৬০ লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড প্রাপ্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক নথি অনুসারে, বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২.৬০ লাখ কোটি টাকা। এরমধ্যে ১.৩৬ লাখ কোটি টাকার ঘাটতি ব্যাংকিং খাত থেকে পূরণের তাগিদ লক্ষ্য রয়েছে।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছর বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে চলতি অর্থবছরের লক্ষমাত্রার তুলনায় প্রায় ২৮% বেশি ঋণ নেবে সরকার।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ১,০৬,৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। শুধু এপ্রিল মাসেই সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২৯,৬৯৬ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে কোনো মাসে ব্যাংক থেকে নেওয়া সর্বোচ্চ ঋণ।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পাবলিক প্রকিউরমেন্টের জন্য তহবিলের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সরকারকে ব্যাংক ঋণ বাড়াতে হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের অনুমান অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রে সরকারের সুদের ব্যয় এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পেতে পারে।
এতে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা নিরুৎসাহিত হতে পারেন বলে মনে করেন তারা।
আগামী অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে প্রায় ২৪,০০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হতে পারে; যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩১% কম।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের আনুমানিক বাজেট ঘাটতি মোট জিডিপির ৫.২% এবং আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট বরাদ্দের সমান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, জিডিপির অনুপাতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মনে হলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ যে হারে বাড়ছে, তাতে এত বেশি ঘাটতির বাজেট কাম্য নয়।
তাছাড়া, অপচয় কমাতে পারলে এতো বেশি ঋণ নেওয়া প্রয়োজন হতো না।
তিনি বলেন, "ব্যাংকগুলোতে এখন তারল্য সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের যখন ঋণ দরকার, তখন সরকার ব্যাংক থেকে আরও বেশি ঋণ নিলে বেসরকারিখাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাবে।"
সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া কমানোর উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, "সঞ্চেয়পত্রে যে বাড়তি সুদ দেওয়া হয়, তা দেশের সাধারণ মানুষই পাচ্ছে। সাধারণ মানুষই ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখে। সরকারের সুদব্যয় কমানোর নামে পুরনো তথাকথিত যুক্তি দিয়ে আমলারা সঞ্চয়পত্রের সুদ কমাচ্ছে, যা সামগ্রিক উন্নয়ন নীতি বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য নয়।"
অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ টিবিএসকে বলেন, বর্তমানে ইনভেস্টমেন্ট রেটের তুলনায় সেভিংস রেট বেশ কম। এমন অবস্থায় সরকার ব্যাংক থেকে ১.৩৬ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলে আগামী অর্থবছর বেসরকারিখাতের বিনিয়োগে যে ৩৩% প্রবৃদ্ধি সরকার আশা করছে, তা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঘাটতি অর্থায়নের পরিবর্তে বিদেশি উৎস থেকে কম সুদের অর্থায়ন বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিদেশি উৎস থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে। এটি চলতি অর্থবছরের লক্ষমাত্রার তুলনায় মাত্র ৪,৫০০ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছর বিদেশি উৎস থেকে ৯৫,৪৫৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষমাত্রা রয়েছে।