এলডিসি গ্রাজুয়েশনের আগেই রপ্তানিতে প্রণোদনা হ্রাসের ঘোষণা
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণ হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। এই লক্ষ্যে, পর্যায়ক্রমে সব ধরনের রপ্তানিতে প্রণোদনা হ্রাস করার একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সার্কুলারে জানানো হয়, এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে একত্রে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ না করে- সরকার এখন থেকেই বিভিন্ন ধাপে নগদ সহায়তা/ প্রণোদনার হার অল্প অল্প করে হ্রাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
যেমন তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫ শতাংশ হারে করা হয়েছে।
এছাড়া, পোশাক খাতের নতুন রপ্তানি বাজারগুলোয় দেওয়া প্রণোদনার হার ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।
পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্যসহ আরও অন্যান্য খাতেও প্রণোদনার হার কমানো হয়েছে।
১ জানুয়ারি থেকেই হ্রাসকৃত প্রণোদনা কার্যকর হয়েছে, যা ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
এটি কার্যকর হওয়ার আগে প্রণোদনার সর্বোচ্চ হার ছিল কৃষিপণ্যের জন্য। যেমন আলু ও প্রক্রিয়াজাত মাংস রপ্তানিতে আগের ২০ শতাংশ প্রণোদনা এখন কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রধান তিনটি নতুন রপ্তানি বাজার– অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানে রপ্তানিতে ৪ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হতো। নতুন সার্কুলারে এসব বাজারকে প্রচলিত বাজারের তালিকায় আনা হয়েছে, যেক্ষেত্রে নগদ সহায়তার হার হলো শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
সরকারের হালনাগাদ তথ্যানুসারে, নগদ প্রণোদনার ৬৫ শতাংশ বা প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার মূল সুবিধাভোগী হলো তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত।
প্রণোদনা হ্রাসের বিষয়ে রপ্তানিকারকরা তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এতে তাঁদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তৈরি পোশাক প্রস্তত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন - বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান টিবিএস'কে বলেন, শুরুতে ৪টা ক্যাটাগরিতে প্রণোদনার হার কমানো হলো। তারপর ফাইনালি এসে সরকার বলছে, পাঁচটি এইচএস (হারমোনাইজড সিস্টেম) কোডের আইটেম এখন আর কোনো ইনসেনটিভ পাবে না। অথচ এই পাঁচ আইটেম পোশাক রপ্তানির অপরিহার্য অংশ।"
এইচএস কোডগুলো হলো– ৬১০৫, ৬১০৭, ৬১০৯, ৬১১০ এবং ৬২০৩। এই পাঁচটি কোডে বস্ত্র খাতের মোট ৫৬ শতাংশ রপ্তানি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নতুন বাজার হিসেবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, "আমরা এই তিনটা দেশে খুব কষ্ট করে মার্কেট ডেভলপ করেছিলাম। হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত আমাদের পুরো শিল্পকে ঝুঁকির মুখে ফেললো। নতুন সার্কুলারের পর এখন অল্প কিছু পণ্যে নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে।"
তিনি আরও বলেন, সার্কুলারের প্রথমে বলা হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটও)-র গাইডলাইন অনুযায়ী, ২০২৬ সালের পর আর নগদ প্রণোদনা দেওয়া যাবে না, সেজন্য এটি হ্রাস করা হয়েছে।
"কিন্তু, আমরা বারবার বলে আসছি এখন কমায়েন না। কারণ ফরেন কারেন্সিতে আমাদের কম্পিটিটিভ থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক এরমধ্যেই অর্ডার কম। দেশে ডলারের সংকট। সে কারণে দেশে কীভাবে আরও ডলার আনা যায়- সেকাজ করতে হবে। আমাদের রিজার্ভ কমতে কমতে এমন জায়গায় গেছে যে আপনারা এলসি খুলতেও দেন না।"
"একারণে কাঁচামাল আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আমরা প্রণোদনা না কমানোর কথা বলেছিলাম। কিন্তু, সরকার তাতে রাজি হলো না"- যোগ করেন তিনি।