অক্সফোর্ড ও স্পুটনিকের এখন যৌথ ট্রায়াল
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা'র টিকা এবং রাশিয়ার স্পুটনিক-ফাইভ টিকা যৌথপ্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্রিটিশ ও রুশ বিজ্ঞানীরা। উদ্দেশ্য, এর ফলে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে বাড়তি সুরক্ষা পাওয়া যায় কি না তার অনুসন্ধান করা।
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, একই পদ্ধতিতে তৈরি টিকা দুটির সম্মিলিত প্রয়োগে মানবদেহে জীবাণুটির বিরুদ্ধে আরও ফলপ্রসূ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এ সংক্রান্ত ট্রায়ালটি রাশিয়ায় করা হবে। অংশগ্রহণকারীদের সবাই ১৮ বছরের বেশি বয়সী হবেন। তবে ঠিক কতজন সেখানে অংশ নিবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার তৃতীয় ট্রায়ালের ফলাফল ইতোমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে টিকাটি নিরাপদ এবং কার্যকর বলে দাবি করা হয়। গবেষকরা কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং ইতোমধ্যেই ব্রিটিশ নিয়ামক সংস্থা এমএইচআরএ বরাবর টিকা জরুরি প্রয়োগের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
স্পুটনিক ফাইভ এবং ব্রিটিশ ভ্যাকসিন দুটোই অ্যাডনোভাইরাস গোত্রীয় টিকা। অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, নানা ধরনের অ্যাডনোভাইরাস টিকার সম্মিলিত ডোজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কি না, তারা সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। এই পদ্ধতি কার্যকর হলে সার্স কোভ-২ নামক নতুন করোনা জীবাণুর বিরুদ্ধে আরও বেশি সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।
গবেষকদের আশা, শক্তিশালী সুরক্ষার পাশাপাশি তার স্থায়িত্বও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
দুটি টিকাই অ্যাডনোভাইরাস বা করোনাভাইরাসের কাঁটা সদৃশ আবরণের নিষ্ক্রিয় প্রোটিন থেকে প্রস্তুত করা। ভাইরাসের জেনেটিক সংকেত নিয়ে তারা শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাছে এর বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর বার্তা পৌঁছে দেয়। এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অনেকটা ডাকবাহকের মতোই।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অ্যাডনোভাইরাস পদ্ধতির টিকাগুলো গ্রহণকারীদের দেহে প্রথমেই এমন প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যার কারণে এটির দ্বিতীয় বা রোগ প্রতিরোধ আরও চাঙ্গা করে তোলার ডোজটি দুর্বল হয়ে পড়ে।
ঠিক এ কারণেই অক্সফোর্ড টিকার অর্ধেক ডোজ যাদের প্রথমে দেওয়ার পর দ্বিতীয়বারে সম্পূর্ণ ডোজ দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রতিরোধের হার অনেক ভালো বলেই দেখা গেছে।
এখন একই পদ্ধতির দুই টিকা নিয়ে দুই ডোজে দেওয়ার কথা তাই ভাবা হচ্ছে। ভিন্ন মাত্রার এই পদক্ষেপ আরও সফলতার সুযোগ সৃষ্টি করবে, এমন প্রত্যাশাও রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের তৈরি টিকাটির মূল আবিষ্কারক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর এটির গবেষণা চালানো হয় অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। অন্যদিকে, রাশিয়ার তৈরি টিকাটি আবিষ্কার করেছে মস্কোতে অবস্থিত গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউড।
টিকা দুটি ফাইজার বা মডের্না ইঙ্কের কোভিড ভ্যাকসিনের চাইতে ভিন্নভাবে কাজ করে। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা বর্তমানে যুক্তরাজ্য, কানাডা, বাহারাইন এবং সৌদি আরবে জরুরি প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও টিকাটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
- সূত্র: বিবিসি