অস্ট্রেলিয়া শিবিরে আতঙ্কের নাম মুস্তাফিজ
ব্যাটসম্যানদের ফরম্যাট টি-টোয়েন্টি। এ কারণেই টি-টোয়েন্টিকে বলা হয় মারকাটারি ফরম্যাট। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম এই সংস্করণে যতটা চার-ছক্কার ফুলঝুরি দেখা যায়, বাকি দুই ফরম্যাটে ততোটা নয়। কম ইকোনমির বোলারদের এই ফরম্যাটে বেশ কদর। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে এমন বোলার কে? ক্রিকেটের খবর রাখেন যারা, তারা চোখ বন্ধ করে বলে দেবেন মুস্তাফিজুর রহমানের নাম।
সেটা অনুমেয়ই, বাংলাদেশের বাঁহাতি এই পেসারের নামই আসার কথা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মুস্তাফিজের বোলিং ফিগার দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা টি-টোয়েন্টির বোলিং। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৪-০-৯-০, চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে ৪-১-৯-২। রান খরচায় নজর দিলে টেস্ট বোলিং মনে হতে পারে। এমনকি টেস্টেও এতো কম ইকোনমি সচরাচর দেখা যায় না।
চলমান সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার কাছে মুস্তাফিজ রীতিমতো যমদূত হয়ে উঠেছেন। মুস্তাফিজ বোলিং প্রান্তে গেলেই পাল্টে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং পরিকল্পনা। অন্য বোলারদের বিপক্ষে চার-ছক্কা মারার চেষ্টা করছেন সফরকারী ব্যাটসম্যানরা, সফলও হচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু মুস্তাফিজের ডেলিভারি বুঝতেই সময় শেষ। তার স্লোয়ার-কাটারে রীতিমতো নাভিশ্বাস অবস্থা অজি ব্যাটসম্যানদের।
চার-ছক্কা তো দূরের কথা, মুস্তাফিজের ডেলিভারি ব্যাটে-বলে করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অজিদের জন্য। কীভাবে খেললে তার বিপক্ষে সফল হওয়া সম্ভব, দীর্ঘ পড়াশোনা করেও উপায় মিলছে না।
প্রথম তিন টি-টোয়েন্টি জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ ম্যাচে এসে অজিরা জয়ের দেখা পেয়েছে। বাংলাদেশের দেওয়া ১০৫ রানের লক্ষ্য সাত উইকেট হারিয়ে পাড়ি দিয়েছে তারা। ব্যাটিং করতে হয়েছে ১৯তম ওভারের শেষ বল পর্যন্ত। এতেই স্পষ্ট, ছোট এই লক্ষ্য পাড়ি দিতেও ঘাম ঝরেছে অস্ট্রেলিয়ার।
অল্প পূঁজিতেও অস্ট্রেলিয়াকে যে চেপে ধরা গেছে, সেটা মূলত মুস্তাফিজের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ের কারণেই। এই ম্যাচের সবচেয়ে খরুচে সাকিব আল হাসান (৪ ওভারে ৫০ রান) ছাড়া বাকিরাও কিপ্টে বোলিং করেছেন। কিন্তু মুস্তাফিজকে মোকাবিলা করতে অজি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যে ভীতি দেখা গেছে, অন্য কাউকে খেলার ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায়নি।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভার ছিল মুস্তাফিজের প্রথম ওভার। এই ওভারে মুস্তাফিজকে মোকাবিলা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার দুজন ব্যাটসম্যান। কিন্তু ড্যান ক্রিশ্চিয়ান ও ময়জেস হেনরিকসের কেউ-ই এই ওভার থেকে রান নিতে পারেননি। নিজের প্রথম ওভার মেডেন দিয়ে একটি উইকেট নেন মুস্তাফিজ। ব্যাট হাতে ঝড় তোলা ক্রিশ্চিয়ানকে ফিরিয়ে অজিদের রান তোলার দুর্দান্ত গতিতে লাগাম টানেন তিনিই।
দ্বিতীয় ওভারে মুস্তাফিজের খরচা ২ রান, সঙ্গে আরেকটি উইকেট। ২ ওভারে এক মেডেনসহ ২ উইকেট নিয়ে অজিদের মনোবলে ফাটল ধরান বাংলাদেশের এই পেসার। মুস্তাফিজের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ২ রান নেন অ্যাস্টন অ্যাগার। এরপরের তিনটি বল অ্যাগার বুঝতেই পারেননি। মুস্তাফিজের গতিময় 'স্পিনে' রীতিমতো দিশেহারা হয়ে ওঠেন তিনি। পঞ্চম বলে এক রান নিয়ে অ্যাস্টন টার্নারকে স্ট্রাইক দেন অ্যাগার। বাংলাদেশ পেসারের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারিতে ব্যাট ছোঁয়ানোর চেষ্টাই করেননি টার্নার।
নিজের শেষ ওভারে মুস্তাফিজের সর্বোচ্চ খরচা, সেটাও কেবল চার রান। এটা ছিল ইনিংসের ১৯তম ওভার, এই ওভারে অজিদের জয় নিশ্চিত হয়। ৯ রান খরচা করা মুস্তাফিজকে ছক্কা হজম করতে হয়নি, তার বলে কোনো চারও মারতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। ৪ ওভারে ২৪ বলের মধ্যে ১৭টি বল ডট করেছেন তিনি। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে তার দেওয়া ডট বলের সংখ্যা ছিল ১৫টি।
চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে সাকিব আল হাসানকে এক ওভারে ৫ ছক্কা মারার পর মুস্তাফিজের শিকার হন ড্যান ক্রিশ্চিয়ান। ম্যাচের পর তিনি জানালেন, মুস্তাফিজ হচ্ছেন গতিময় রশিদ খান। আফগান লেগ স্পিনারের কথা উল্লেখ করে ক্রিশ্চিয়ান বলেন, 'তার বল খেলাটা দারুণ গতিময় রশিদ খানকে খেলার মতো। তার বল কেমন হবে, বোঝার উপায় নেই। অবশ্যই আমরা কোনো সমাধান বের করতে পারিনি। সত্যিই দুর্দান্ত বোলিং, কন্ডিশনটাকে নিজের পক্ষে দারুণভাবে কাজে লাগাচ্ছে সে।'
প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে ভালো করলেও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের এতো ভোগাতে পারেননি মুস্তাফিজ। প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ১৬ রান খরচায় ২ উইকেট নেন তিনি। পরের ম্যাচে ২৩ রান খরচায় তার শিকার ৩ উইকেট। কিন্তু তৃতীয় টি-টোয়েন্টি থেকে অজিদের জন্য আতঙ্ক হয়ে ওঠেন 'কাটার মাস্টার' নামে পরিচিত বাংলাদেশের এই পেসার। আর নিজেকেই প্রতিদিন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। সিরিজের শেষ ম্যাচেও হয়তো মুস্তাফিজের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে অজি ব্যাটসম্যানদের।