ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাতে এবারই নেইমারের শেষ সুযোগ!
ব্রাজিলের রক্ষা কবজের ভূমিকায় আছেন নেইমার। ২০১৪ সালে নিজ দেশের মাটিতে তিনিই পারতেন ব্রাজিলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে, কিন্তু হাঁটুর চোটের জন্য তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। কলম্বিয়ার সাথে ম্যাচ খেলতে নেমে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েন ২২ বছর বয়সী তরুণ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। খবর বিবিসির
২০১৪ সালে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত উঠে আসে ব্রাজিল। কিন্তু, জার্মানির সাথে ৭-১ গোলের বড় পরাজয়ে বিশ্বকাপের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। চার বছর আগে, রাশিয়া বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। ২০২২ সাল, কাতার বিশ্বকাপে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন ৩০ বছর বয়সী নেইমার। তাই ধারণা করা হয়, এই বিশ্বকাপ নেইমারের হতে পারে, হতে পারে ব্রাজিলের।
২০০৯ সালে সান্তোসের বিস্ময় বালক হয়ে ফুটবল দুনিয়ায় নেইমারের আবির্ভাব। ব্রাজিল সমর্থকেরা তাই নেইমারের উপর বাজি ধরেছিলেন, জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবলে তিনি নতুন নতুন চমক নিয়ে আসবেন। সেই হিসেবে, ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড অবশ্যই নেইমারের অর্জন নিয়ে গর্বিত হতে বাধ্য। ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার তিনি। বার্সেলোনার হয়ে ১৮৬ ম্যাচে গোল করেছেন ১০৫টি এবং পি-এসজি'র হয়ে ১৬৩ ম্যাচে গোল করেছেন ১১৫টি। ১২১ ম্যাচে ৭৫ গোল নিয়ে পেলের পর ব্রাজিলের জাতীয় দলে সর্বোচ্চ গোল দাতার নামটিও নেইমারের।
১২ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলেন নেইমার। এখনো বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দেখাতে পারেননি তিনি। ২০১৪ সালে নিজ দেশে ইনজুরিতে ভেঙ্গে পড়েছিলেন, হয়েছিল স্বপ্নভঙ্গ। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে খেলেছেন ঠিকই, কিন্তু দলের সাথে খেলার ছন্দে ছিলেন না। এক যুগ ধরে জাতীয় দলে নেইমারের সাফল্য বলতে, ২০১৩ সালে কনফেডারেশন কাপ ও ২০১৬ সালে অলিম্পিকে গোল্ড জিতিয়েছিলেন দলকে। চোটের কারণে ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকায় খেলেননি নেইমার। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল।
কাতার বিশ্বকাপে নেইমারের ওপর প্রত্যাশা ভক্ত-সমর্থকদের, রয়েছে ভালো পারফর্মেন্সের চাপও। কারণ, নেইমার গত বছর ঘোষণা দিয়েছেন, কাতার বিশ্বকাপ হতে চলেছে তার শেষ বিশ্বকাপ।
"আমি মনে করি, কাতার বিশ্বকাপ আমার শেষ বিশ্বকাপ। এরপর জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলার মত মানসিক দৃঢ়তা আমার আছে কিনা - এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। বিশ্বকাপে ভালো করার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। দেশকে জেতানোর জন্য আমি আমার সেরাটা খেলব। বিশ্বকাপ জেতা আমার ছেলেবেলার স্বপ্ন; এবারে আমি স্বপ্নকে সত্যি করতে চাই। আমি আশাবাদী।"
পরিসংখ্যান মতে, নেইমারের ক্যারিয়ারে সব চেয়ে বড় পথের কাঁটা তার ইনজুরি। চোটের কারণে দীর্ঘ সময় তিনি দলের বাইরেই থাকেন। ২০১৭ সালে পিএসজি'তে যোগ দেয়া থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১০০টি ম্যাচে তিনি খেলতে পারেননি । পিএসজির ম্যাচে নেইমারের অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে কেইলান এমবাপ্পের সাথে তার সম্পর্কের টানাপোড়েনের গুঞ্জনও রয়েছে।
এই মৌসুমে ক্লাব ফুটবলে দারুণ ছন্দে ছিলেন নেইমার। তার পারফর্মেন্স ও সতীর্থদের সাথে টিম কম্বিনেশন ছিল দুর্দান্ত। নেইমারের ফর্ম নিয়ে বেশ স্বস্তিতে আছেন ব্রাজিলিয়ান কোচ তিতে। বিশ্বকাপের আগে নেইমারকে নিয়ে বলেছেন, "নেইমার এখন রীতিমত উড়ছে। তার খেলার এই ছন্দে ফেরা সম্ভব হয়েছে- শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত অনুশীলনের জন্য।"
দলের নেতৃত্বে এসে "ব্রাজিলের মিশন-হেক্সা" সম্পন্ন করতে নেইমার সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ব্রাজিলের ইতিহাস বদলে দিতেও নেইমার বেশ এগিয়ে আছেন। ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলের ৭৭ গোল থেকে মাত্র ২ গোল পিছিয়ে নেইমার। তিনি নিজেও পেলেকে ছাড়িয়ে যেতে চান; দলের হয়ে নতুন রেকর্ড গড়তে চান। এনিয়ে সতীর্থদের সাথে আলাপ করেছেন যেন সবাই মিলে সহযোগিতা করে তাকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেয়। ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের গ্লানি মুছে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নেইমার।
কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্কোয়াড অন্যসব বারের চেয়ে বেশ শক্তিশালী বলে মনে করেন সাবেক ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা। ২০০২ সালের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলার কাফু মনে করেন, নেইমারের ওপর এবার খেলার চাপ বেশ কম। অন্য বিশ্বকাপগুলোতে যেখানে ফরোয়ার্ডে নেইমারের ওপর ভরসা করেই ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখা হতো, সেখানে কাতার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে মোট ৯ জন ফরোয়ার্ড রয়েছে, যারা প্রত্যেকেই নেইমারের সমতুল্য ।