যৌন হেনস্থার পুরনো বিতর্কে অধিনায়কত্ব ছাড়লেন টিম পেইন
অ্যাশেজ শুরু হতে মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। এমন সময়ে চার বছর আগের এক বিতর্কে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ত্ব ছাড়লেন টিম পেইন। চার বছর আগের সেই ঘটনা সম্প্রতি অস্ট্রেরিয়ান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার হোবার্টে স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে সংবাদমাধ্যমের সামনে লিখিত বিবৃতিতে পদত্যাগের কথা জানান পেইন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) মেনে নিয়েছে পেইনের পদত্যাগ। দ্রুতই তারা নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করবে। নেতৃত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন পেসার প্যাট কামিন্স।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ২০১৭ সালে এক নারী সহকর্মীকে অশ্লীল বার্তা ও ছবি পাঠিয়েছিলেন পেইন। সেই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ক্রিকেট তাসমানিয়া ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তদন্ত করে পেইনের বিরুদ্ধে।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের কোনো আইন ভঙ্গ করেননি বলে সেই অভিযোগ থেকে মুক্তও হয়েছিলেন পেইন। কিন্তু পুরনো সেই ঘটনা সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই বিতর্কের নাম হয়ে গেছে 'সেক্সটিং স্ক্যান্ডাল।' এমন খবর প্রকাশ হওয়ার পর নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩৫ টেস্ট, ৩৫ ওয়ানডে ও ১২টি টি-টোয়েন্টি খেলা পেইন হোবার্টে কান্নাজড়িত কণ্ঠে লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন। তার বিবৃতির উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো-
'আজ আমি অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি। অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন সিদ্ধান্ত এটা। তবে সঠিক সিদ্ধান্ত আমার জন্য, আমার পরিবারের জন্য ও ক্রিকেটের জন্য।
আমার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট প্রায় চার বছর আগের। সেই সময়ের এক সহকর্মীর সঙ্গে টেক্সট ম্যাসেজ বিনিময়ের ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলাম। সে সময় এই ব্যাপারটি নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ইন্টেগ্রিটি ইউনিট অনেক তদন্ত করেছিল, আমি যেটায় পুরোপুরি ও খোলামেলাভাবেই অংশ নিয়েছিলাম।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তদন্ত ও ক্রিকেট তাসমানিয়ার মানব সম্পদ বিভাগের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছিল যে, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আচরণবিধির কোনো ধারা ভাঙিনি আমি। যদিও আমাকে নির্দোষ রায় দেওয়া হয়েছিল, তার পরও সে সময় ওই ঘটনায় গভীর অনুশোচনা করেছিলাম আমি, এখনও অনুতপ্ত।
সে সময় স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম এবং ওদের ক্ষমা ও সমর্থনের জন্য দারুণ কৃতজ্ঞ আমি। ভেবেছিলাম, এই ঘটনা আমাদের জীবনে অতীত হয়ে গেছে এবং দলেই পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারব। গত তিন-চার বছর ধরে যেটি করেই আসছি।
কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারি, গোপন সেই টেক্সট ম্যাসেজগুলো সামনে চলে আসছে। ২০১৭ সালে আমার সেই কাজ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট অধিনায়কের মানদণ্ডের সঙ্গে ও বৃহত্তর সম্প্রদায়ের সঙ্গে যায় না। আমার স্ত্রী, পরিবার ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের যে ব্যথা ও যন্ত্রণা দিয়েছি, সে সবের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। আমাদের খেলাটার ভাবমূর্তির কোনো ক্ষতি করে থাকলেও দুঃখ প্রকাশ করছি।
আমি বিশ্বাস করি, অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোই সঠিক সিদ্ধান্ত, যা কার্যকর এই মুহূর্ত থেকে। অ্যাশেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের আগে আমার ঘটনা দলের জন্য অবাঞ্ছিত ব্যাঘাত ডেকে আনুক, তা আমি চাই না।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব আমি ভালোবেসেছি। আমার খেলোয়াড়ি জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন এটা। সতীর্থদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ সমর্থনের জন্য এবং একসঙ্গে যা অর্জন করেছি, সে সব নিয়ে আমি গর্বিত।'