তবু দিনটা বাংলাদেশেরই
প্রতিপক্ষ যেই হোক, পরিস্থিতি যেমনই থাকুক; টেস্ট ক্রিকেটে ১৭২ রানে অলআউট হয়ে স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংসে অল্পতেই গুটিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের শিবিরে নিশ্চয়ই গুমট অবস্থা ছিল। উইকেট বিলিয়ে আসার আক্ষেপ ছিল, হয়তো হতাশা কাজ করছিল বড় সংগ্রহ না গড়তে পারার। কিন্তু দিনশেষে বাংলাদেশ শিবিরেই বইছে স্বস্তির হওয়া, স্বাগতিকরা নিজেদের এগিয়ে রাখার কথা বলে দিচ্ছে অকপটে!
বাস্তব চিত্র সেটাই, বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া টেস্টের প্রথম দিন শেষে এগিয়ে বাংলাদেশই। ১৫ উইকেটের মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনটা তাদেরই। ১৭২ রানে অলআউট হলেও বল হাতে দুর্বার শুরুতে কিউইদের কোণঠাসা করে ফেলে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। স্পিন ভেল্কিতে ৪৬ রানের মধ্যেই নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম।
৫ উইকেটে ৫৫ রান তুলে দিন শেষ করে সফরকারীরা, বাংলাদেশ এগিয়ে ১১৭ রানে। আলো স্বল্পতার কারণে ৮.২ ওভার আগে খেলা শেষ না হলে আরও এগিয়ে থেকে দিন শেষ করার সুযোগ ছিল তাদের। মিরাজ-তাইজুল যেভাবে উইকেট বৃষ্টি নামান, এই কয় ওভারে ইনিংসও গুটিয়ে যেতে পারতো কিউইদের। বাংলাদেশ অবশ্য এতোটুকুতেই সন্তুষ্ট। প্রথম দিন শেষেই যে নিজেদের হাতে নাটাই, প্রশ্ন করতেই তাতে সায় দিলেন দারুণ বোলিংয়ে শেষ বিকেল রাঙানো মিরাজ।
দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা ডানহাতি এই অফ স্পিনার বললেন, 'অবশ্যই আমরা নিজেদের এগিয়ে রাখছি। কারণ আমরা ওদের ৫ উইকেট ফেলে দিয়েছি, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুবিধা। আমরা যে চেষ্টা করেছি, যতো দ্রুত ওদের অলআউট করতে পারি। এবং আমরা যতো লিড নিতে পারি, যা আমাদের জন্য সুবিধার। প্রথম ইনিংসে আজ দেখেছেন এখানে রান করা কতো কঠিন। প্রতিটা রানই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি ওদের ভালো একটা লিড দিতে পারি, তখন আমাদের জন্য কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।'
মিরপুরের উইকেটে যে ব্যাটিং করা সহজ হবে না, বাংলাদেশের ইনিংসের পরই তা বুঝে যায় নিউজিল্যান্ড। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি, উইকেটে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন কিউই ব্যাটসম্যানরা। এই উইকেটে টিকে থাকার চেয়ে রান তোলায় বেশি মনোযোগ দিতে হবে, ব্যাপারটি বুঝে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন সফরকারী দলটির দুই ওপেনার টম ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়ে।
যদিও তাদেরকে বড় জুটি গড়তে দেননি মিরাজ। দলীয় ২০ রানে কনওয়েকে ফিরিয়ে দেন তিনি। ১৪ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১১ রান করা কিউই ওপেনারের স্টাম্প উপড়ে নেন মিরাজ। পরের ওভারে ল্যাথামকে সাজঘর দেখিয়ে দেন তাইজুল। ২ রানে দুই উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড তখন বিপদে, একটু পর তাদের বিপদ আরও বাড়ান তাইজুল। এবার তার শিকার হেনরি নিকোলস।
এরপর কিছুটা প্রতিরোধ, মনে হচ্ছিল চাপ কাটিয়ে উঠেছে কিউইরা। কিন্তু ১২তম ওভারে যমদূত হয়ে হাজির মিরাজ। এক বলের ব্যবধানে কেন উইলিয়ামসন ও টম ব্লান্ডেলকে ফিরিয়ে দেন তিনি। ১৪ বলে ২টি চারে ১৩ রান করা উইলিয়ামসন ক্যাচ তুলে আউট হন, এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন ব্লান্ডেল। মিরাজ ৬ ওভারে ১৭ রানে ৩টি ও তাইজুল ৫.৪ ওভারে ২৯ রানে ২টি উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। তুলে মারতে গিয়ে আউট হন ২৪ বলে ৮ রান করা জাকির হাসান। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আত্মাহুতি দেন। সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহিম হাত দিয়ে বল ফিরিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে 'অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড' আউট হন।
সাবলীল ব্যাটিংয়ে ৩১ রান করা তরুণ শাহাদাত হোসেন দিপুও হতাশজনকভাবে আউট হন। শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন নুরুল হাসান সোহান। ১৪ রান করা মাহমুদুল হাসান জয় বল না বুঝে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন। মিরাজ ২০, শরিফুল ১০ ও নাঈম অপরাজিত ১৩ রান করেন। বাংলাদেশের পাঁচজন দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি।