নিউজিল্যান্ড সফর: লিটন দাস কিংবা লিটমাস টেস্ট
একটি স্টেটমেন্টকে হাইপোথিসিসে উন্নীত করতে হলে প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক বহু কথা লিখতে হবে। যাদের ধৈর্য কম, ধন্যবাদ আবার আসবেন।
স্টেটমেন্টটা কী?
যারা ক্রিকেটকে নারিশ এবং রেলিশ করে তাদের পক্ষে লিটন দাস বিদ্বেষী হওয়া অসম্ভব এবং বাংলাদেশের সব যুগ মিলিয়ে যে কোনো ব্যাটসম্যানের চাইতে তাকে আলাদা করতে বাধ্য হওয়ার কথা।
এই বিবৃতি বিভ্রান্তিকর এবং কিছুক্ষেত্রে মিসলিডিং; এই বিবৃতির মানে এই না যে লিটন বাংলাদেশের এযাবৎকালের সেরা ব্যাটসম্যান। সেটা সেরা সময়ের তামিম অথবা ২০১৪-১৯ সময়ের মুশফিকের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতে পারে আপাতত।
আবার স্টেটমেন্ট এটাও বোঝায় না যে লিটন দাস বাংলাদেশের সবচাইতে ন্যাচারালি গিফটেড ব্যাটসম্যান; আশরাফুলের ব্যাটিং দেখা কারো পক্ষে এমন মন্তব্য করার অবকাশই থাকতে পারে না।
স্টেটমেন্টের মূল ব্যাপারটা একদম সহজ, যার উপাংশ দুটি। প্রথমত, ক্রিকেট সম্পর্কে প্রজ্ঞা থাকলে আপনার পক্ষে লিটন বিরোধী বা বিদ্বেষী হওয়ার অপশনটাই বন্ধ। আপনার রুচি ও মনন আপনাকে বাধা দিবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সব কাল মিলিয়ে ১০০ জন ব্যাটসম্যানের ব্যাটিংও যদি দেখেন; লিটনকে তাদের চাইতে আলাদা মনে হবে।
এই স্টেটমেন্টের মানে কিন্তু এটাও নয় যে লিটনের আন্ডার পারফরম্যান্সকেও জাস্টিফাই করতে হবে কিংবা ট্রল বা সমালোচনা করা যাবে না। দর্শক হিসেবে ট্রল,নিন্দা বা সমালোচনা করার পূর্ণ অধিকার আপনার আছে।
কিন্তু যখন আপনি বলবেন ইমরুল কায়েস, নাঈম শেখ, মোহাম্মদ মিঠুন, এনামুল বিজয় প্রমুখ ক্রিকেটার সুযোগ পায় না লিটনের কারণে এবং এত বেশি সুযোগ পেলে তারা লিটনের চাইতে বেটার পারফর্ম করত। অথবা জিম্বাবুয়ে বাদে লিটন অচল (যদিও জিম্বাবুয়েকে বাদ দিলে তামিম, সাকিব, মুশফিকের ক্যারিয়ারের অর্ধেক অর্জনও হাওয়া হয়ে যাবে)... ঠিক সেই মুহূর্তে ক্রিকেট দর্শক হিসেবে আপনার ক্যাটেগরি নির্ধারিত হয়ে যায় এবং আপনার জন্য মুখ টিপে হাসির বাইরে ভিন্ন জবাব থাকে না।
ক্রিকেট দর্শক সাড়ে ৩ প্রকার।
প্রথম শাখায় আছে যারা খেলা কেন দেখে জানে না, কিশোর বয়সে নিজেরা টুকটাক খেলেছে, খেলাটার সাথে সংশ্লিষ্টতা তৈরি হয়েছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে আসক্তিও জন্মেছে। এরা দল হারলে মন খারাপ করে, জিতলে উচ্ছ্বসিত হয়।
দ্বিতীয়ত, যারা খেলা দেখে ঠিকই কিন্তু নানা প্রায়োরিটিতে খেলার টেকনিক্যাল বিষয়াদি নিয়ে জানাশোনার সুযোগ হয় না। কিন্তু ক্রিকেটের মতো জটিল নিয়মকানুনের এক খেলা সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাব, এ বিষয়টা তাদের জন্য মানসম্মানের ব্যাপার হয়ে উঠে। তাই এটি তারা যে কোনোভাবে গোপন রাখতে চায় এবং সেটা করতে গিয়ে উগ্রবাদী আচরণ করে।
প্রথম ও ২য় শ্রেণির সংকরায়ণে আরেকটি সেমি-গ্রুপ আছে যারা মূলত বাজিকর অথবা হতাশ বেকার; ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকাহীন অথবা শংকায় ভুগে।
তৃতীয় আরেকটি শ্রেণী আছে, খেলাটা যাদের কাছে মেডিটেশন বা মেডিসিন এর মতো। ট্যাকটিকাল, স্ট্র্যাটেজিকাল, টেকনিকাল, সায়েন্টিফিক, আর্টিস্টিক, কমার্শিয়াল, সোশিও কালচারাল বহু আঙ্গিক থেকে একটা ম্যাচকে দেখে।
স্টেটমেন্টটার পটভূমি বিশ্লেষণে আপাত অপ্রাসঙ্গিক একটি ব্যক্তিগত হাইপোথিসিস শেয়ার করা যাক।
তামিম-সাকিব-মুশফিক-রিয়াদের ক্যারিয়ার অস্বাভাবিক দীর্ঘ। এজন্য ছোট-বড়-মাঝারি মানের পারফরম্যান্সের যেমন ভূমিকা, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাজমুল হাসান পাপনের টিকে যাওয়ারও অবদান কম নয়। একই সাথে মাশরাফির ৫ বছর অধিনায়ক থাকাটাও বিরাট ইস্যু.
মাশরাফি নিজে যেহেতু ইনজুরিতে ভুগেছে এবং মাঠে অনেক কৌশল অবলম্বন করত (কখন বোলিংয়ে আসবে, কখন বোলিং কোটা শেষ করবে, কখন ড্রেসিংরুমে গিয়ে আবার ফিরবে)। এই ব্যাপারটা নিরঙ্কুশ করতে দলের কোর গ্রুপকে ম্যানেজ করতে হয়েছে, একধরনের এক্সচেঞ্জ এর মতো।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মাশরাফি যেহেতু মিডিয়ায় ট্রাজিক হিরো ( ক্যারিয়ারে যা হয়েছে তার চাইতে কী হতে পারত সংক্রান্ত হা-পিত্যেশ) এবং প্রায় সব মিডিয়া হাউজের প্রিয়পাত্র, তাই মাশরাফির মাধ্যমে সেই কোর গ্রুপ 'মিডিয়া ক্যু' এর সুযোগ নিয়েছে।
তার ফলশ্রুতে তাদের একটা সাধারণ পারফরম্যান্সও অতিরঞ্জিত ভাবে বারবার বিজ্ঞাপনের মতো করে উপস্থাপন করা হয়েছে। কোনোকিছু বড় তখনই বোঝা যায় যখন তার চাইতে ছোট কোনোকিছু চোখে পড়ে। সেই নীতির পরম্পরায় কোর গ্রুপ এর বাইরে যারা তাদের আন্ডার পারফরম্যান্সকে হাইলাইট করা হয়েছে এবং ভালো পারফরম্যান্সকে হালকা বা আড়াল করা হয়েছে, যাতে সেই বড়ত্ব বজায় থাকে।
পাপন তার প্রেসিডেন্সির প্রথম দিকে সাকিবকে নিষিদ্ধ করেছিল, বুমবুম তামিমের নাম দিয়েছিল ঘুম ঘুম তামিম, কিন্তু কোর গ্রুপ এর জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করার অভিপ্রায়ে সেও তার পূর্বেকার অবস্থান বদল করে নেয়।
অবশেষে সারমর্ম দাঁড়াচ্ছে-
১. কোর গ্রুপের সমর্থন ব্যতীত মাশরাফির পক্ষে ক্যারিয়ার এবং ক্যাপ্টেন্সি প্রলম্বিত করা সম্ভব হত না।
২. মুশফিক অধিনায়ক না হলে ২০১২ এর এশিয়া কাপ ফাইনালেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ার সমাপ্ত হয়ে যেত।
৩. মাশরাফি ক্যাপ্টেন না হলে ২০১৫ বিশ্বকাপই হত তামিমের ক্যারিয়ারের অন্তিম চ্যাপ্টার
৪. মিডিয়া হাউজগুলোর অন্তহীন সাপোর্ট না থাকলে ২০১১ বিশ্বকাপের পরে মাশরাফি নামে কোনো ক্রিকেটারের বাংলাদেশ দলে অস্তিত্ব থাকতো না।
সাকিব এবং মুশফিকের ক্যারিয়ার বড়ো করার ক্ষেত্রে বাইরের কোনো ফ্যাক্টর কাজ করেনি। সাকিব বাকিদের তুলনায় এতটাই দীর্ঘ যে কখনো কম্পিটিটর ম্যানেজমেন্ট পলিসি নিয়ে ভাবতে হয়নি। আগে ব্যাটসম্যান, পরে কিপার হিসেবে মুশফিকের চ্যালেঞ্জ ছিল মাত্র ২ জন- জহুরুল ইসলাম অমি এবং ২০১২ থেকে এনামুল হক বিজয়। ২০১১ জিম্বাবুয়ে সফরের পরে সাকিবের পরিবর্তে সে অধিনায়ক হওয়ায় সেই চ্যালেঞ্জটাও আর চ্যালেঞ্জিং থাকেনি।
২০১৯ বিশ্বকাপে মাশরাফির অকল্পনীয় জঘন্য পারফরম্যান্স এবং বছরের শেষদিকে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া তামিম এবং রিয়াদের ক্যারিয়ারের ২য় লাইফলাইন। মাঠের বাইরে থেকেও মিডিয়াতে থাকার জন্য মাশরাফির প্রয়োজন ছিল দলের সাথে কানেক্টড থাকা; তামিম তার সেই চাহিদা পূরণ করেছে। বিনিময়ে সে দিয়ে যাচ্ছে অধিনায়ক তামিমকে নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে মিডিয়া হাউজগুলোই গডফাদার। তারাই কোনো ক্রিকেটারের মার্কেট ভ্যালু বাড়ায়, কারো ভ্যালু ডাউন করে দেয়। পারফরম্যান্স খুব বড় ভূমিকা রাখে করে না। কারণ দল হিসেবে বাংলাদেশের বিশেষ কোনো অর্জনই নেই। এওয়েতে সাফল্য নেই, বড় কোনো ইভেন্টে ট্রফি নেই, প্লেয়ারদের দক্ষতাও মাঝারি মানের। ৪-৫ ম্যাচ পরে একটা কোনোরকম ফিফটি করলেও সেটা চড়া দামে বিক্রি করা যায়। সেই বিক্রির কাজটাই মিডিয়া হাউজ করে দেয়, অর্থলগ্নি করে বিভিন্ন স্পন্সর কোম্পানি।
এই ওপেন সিক্রেট মিডিয়া ক্যু এর সর্বশেষ নজির মাশরাফির বিপিএল প্লেয়ার ড্রাফটে 'এ' ক্যাটেগরিতে থাকা, ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি বিদায় করে বিসিবির নিজ কাস্টডিতে নেয়া এবং তামিম-রিয়াদের একই দলে খেলা।
কিন্তু প্রাকৃতিকভাবেও একটি গাছ বা যেকোনো প্রাণীর মৃত্যু হয়। মৃত্যু বলতে বোঝাচ্ছি সমাপ্তি। মিডিয়া ক্যু এর মাধ্যমেও কি খালেদ মাহমুদ সুজন, বা দুর্জয়ের পক্ষে সম্ভব হবে জাতীয় দলের হয়ে খেলা? তামিমদের প্রজন্মের সেই মাস্তানগিরির শেষ সীমা ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এরপর চাইলেও কি তাদের পক্ষে খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব? ইতোমধ্যে ইনজুরি প্রবণতা বেড়েছে, বাংলাদেশের প্রায় প্রতি মাসেই খেলা থাকছে এবং জিম্বাবুয়ের সাথে হোম সিরিজও নেই নিকট ভবিষ্যতে। আল্টিমেটলি মুশফিক বাদে বাকিরা বেছে বেছে ক্যালকুলেটিভ উপায়েই কোনো সিরিজ খেলবে, কোনোটাতে ইনজুরির অজুহাতে বাইরে থাকবে কিন্তু আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত বিসিবির কনট্রাক্ট লিস্টে থাকা চাই। তারপর দলের যা ইচ্ছা হোক। ২০২২ সাল এসে পড়েছে, ২০২৩ এর নোঙর তো পরের বছরই।
মিডিয়া ক্যু এর প্রথম ইশতেহার ছিল- বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ যতদূর এসেছে তার সমস্ত কৃতিত্ব কথিত পঞ্চপাণ্ডবের (যদিও সাকিবের মতো আমিও বিশ্বাস করি সাকিবের সাথে বাকি ৪ জনকে একই ব্র্যাকেটে রাখলে তাদের অতিমূল্যায়ন আর সাকিবের অবমূল্যায়ন করা হয়) এবং তারা চলে গেলে পাইপলাইনের যে দূরাবস্থা তাতে বাংলাদেশের অবস্থা কেনিয়ার মতো হবে। একাধিক মিডিয়ায় যখন ভয় আর হতাশার মার্কেটিং করা হয় সেটা বিশ্বাস করে নেয়া মানুষেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকে, কারণ যে সাড়ে ৩ প্রকার ক্রিকেট দর্শকের কথা বললাম এদের মধ্যে আড়াই গ্রুপই ক্রিকেট বিষয়ে সিরিয়াস আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা পড়াশোনায় সময় দেয় না।
মিডিয়া ক্যু এর ২য় ইশতেহার- 'সিনিয়র ক্রিকেটারদের সম্মান দেয়া হচ্ছে না এবং কোচের সাথে সিনিয়র প্লেয়ারদের দূরত্ব'। মমিনুলের অভিষেক ২০১২ সালে, রুবেলের ২০০৯ এ, মিঠুন ২০০৮ সালে অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেছে। কিন্তু এদের নামের আগে কখনো সিনিয়র বিশেষণ বসবে না। মজার বিষয় হলো পঞ্চপাণ্ডব বলতে কী বোঝায় জিজ্ঞেস করলে অন্তত ৭০ শতাংশ ক্রিকেট ফ্যান সঠিক উত্তর দিতে পারবে না।
স্টেটমেন্টের ২য় অংশে এবার আসি তাহলে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে তামিমদের প্রজন্ম অতীত হয়ে যাবে।
পরের প্রজন্মে ব্যাটসম্যান হিসেবে যদি ১৫ জনের নাম বলি যারা জাতীয় দলের রাডারে আছে, যেমন নাজমুল শান্ত, নাঈম শেখ, আফিফ, সৌম্য, মোসাদ্দেক, ইয়াসির, তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন, তৌহিদ হৃদয়, শাহাদত দিপু, সোহান, শামীম, আকবর আলি, মিজানুর, মুনিম শাহরিয়ার, জাকির হাসান, আনিসুল ইমন-- এর বাইরে কিন্তু কেউ নেই যে নিকট ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে বা টি-২০ খেলবে।
প্রত্যেকের ব্যাটিং টেকনিক, ফুটওয়ার্ক, শট রেঞ্জ, স্ট্রাইক রোটেশন প্রভৃতি প্যারামিটার বিবেচনায় নিয়ে বলুন এদের মধ্যে কে ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটনের সমকক্ষ? একজনও নয়। ২০১৮ এর পরে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি খেলেছে জিম্বাবুয়ে আর উইন্ডিজের বিপক্ষে, সেটা কি লিটনের দোষ?
যেহেতু লোকাল সার্কিটে লিটনের মানের কোনো ব্যাটসম্যান নেই এই মুহূর্তে, তার মানে কীভাবে ম্যানেজ করলে লিটনের থেকে বেস্ট আউটপুট পাওয়া যাবে সেটাই হওয়া উচিত মূল কনসার্ন। এখনো পর্যন্ত লিটনের ব্যাটিংয়ের একটাই দুর্বলতা- ইনসুইংয়ে আনকমফোর্টেবল। এই দুর্বলতা হয়ত সারা ক্যারিয়ারেই যাবে না। রিকি পন্টিং, জয়াবর্ধনের মতো গ্রেটরা এই দুর্বলতা জিইয়ে রেখেই রান করেছে। রোহিত শর্মাও তাই। মুশফিকও বের হতে পারেনি। তাই এটা ইস্যু নয়।
লিটন আনুপাতিক হারে শর্টার ফরম্যাটে পারে না কারণ পাওয়ার প্লে-তে তাকে এক্সপেনসিভ শট চেষ্টা করতে হয় যেটা তার খেলার বেসিকের সাথে সাংঘর্ষিক। সুতরাং তার প্লেয়িং রোল অতি অবশ্যই বদল করতে হবে। সাকিব বা মুশফিকের একজনকে ব্যাটিং অর্ডার (৩ এবং৪) স্যাক্রিফাইস করে লিটনের জন্য স্পেস বের করতে হবে। কারণ তাদের খেলায় বয়সের ছাপ পড়ে গেছে, ব্যাটিংয়ের সেই ফ্লেয়ারটা আর নেই। অথবা তামিমকে ওপেন ছেড়ে লিটনকে এংকর রোল দিতে হবে, এগ্রেসর হবে অন্য কেউ।
কিন্তু মিডিয়া ক্যু এর ৩য় ইশতেহার হলো- স্যাক্রিফাইস মানে কন্ট্রোল লুজ করা, যে কারণে পুরো টিম ওলটপালট হলেও 'সিনিয়র এর সোল ডিস্ট্রিবিউটরশিপ' নেয়া প্লেয়ারদের নিয়ে টু শব্দটি উচ্চারণ করা যাবে না।
সেই এজেন্ডা তখনই বাস্তবায়িত হবে যখন প্রচুর বিদ্বেষ স্প্রেড করা যাবে। একটা সরল কেইস উল্লেখ করি। নিউজিল্যান্ডের সাথে চলমান টেস্টে বাংলাদেশ ৩ দিন ধরে ডমিনেট করছে। এই নিউজটা প্রচারিত হবে এভাবে, তামিম-সাকিব-রিয়াদ না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এত দূর এসেছে। এটা অবশ্যই অর্জন। অর্থাৎ তারা থাকলে বাংলাদেশ ৫০০-৬০০ করে ফেলত, না থাকায় ৪০০ তুলেছে। অথচ রিপোর্টগুলো তো এমন হতে পারত শান্ত-লিটনরা দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে। ভাষা মানুষের সংবেদনকে কীভাবে প্রভাবিত করে এর চাইতে ক্লাসিকাল উদাহরণ কি হয় আরো?
লিটন অলস, তার এম্বিশন ছোট, ভাবলেশহীন… সাদা চোখে এগুলোই তার ঘাটতি। বিশ্বাস করুন, এসব ঘাটতির কারণেই সে লিটন, নইলে সে হত মুশফিক। প্রত্যেক মানুষের মূল চরিত্র থাকে একটা, সেটা পরিবর্তন হয় না। মনে করে দেখুন আপনারও এমন অনেক ঘাটতি আছে যেটা নিজে পরিবর্তন করতে চান, অন্যরাও বলে, তবু পারেন না কেন?
লিটনের ভাবলেশহীনতার আড়ালে তার মনের মধ্যে হয়ত চলে অন্য কোনো সমীকরণ। ভাবলেশহীনতা চলে গেলে সে হয়ত আর ব্যাটিংটাই উপভোগ করবে না। পরিবর্তন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাকফায়ার করে, বরং কিছুটা ফাইন টিউন করলে যদি সামান্য গ্রোথ আসে সেটাই টেকসই সমাধান। অপটিমাইজেশন শিখি না বলি আমাদের চিন্তা শূন্য অথবা এর বাইনারি নিয়মে ঘুরপাক খায়।
তাই লিটনের প্রতি আপনার প্রত্যাশা থাকবে, প্রত্যাশাভঙ্গের জন্য ক্ষোভ-অভিমান-বিরক্তিও থাকবে, কিন্তু ভালোবাসাটাও জমিয়ে রাখুন। কারণ একটা নিঃসঙ্গ শিলকড়ই গাছেরও বেঁচে থাকতে শিকড়-বাকড় লাগে; মানুষ তো সে তুলনায় অনেক বড়ো।
যখন ভালোবাসার বদলে বিদ্বেষটাই উৎসব হয়ে উঠে সত্যি বলছি আপনিও একটা ফুটবল হয়ে যান তখন। ফুটবলের নিয়তিটা যেন কী?