ভলিবল ছেড়ে ক্রিকেট বলে ইতিহাস গড়ার নায়ক
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/01/05/ebadat_7.jpg)
'বৈচিত্র্যপূর্ণ' শব্দটার সমার্থক খুঁজছেন? সমার্থক হিসেবে এবাদত হোসেনের নামটা নিতে পারেন। অদ্ভুত শোনাতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের এই পেসারের জীবনের গল্প শুনলে যে কারও কাছে মনে হতে পারে বৈচিত্রপূর্ণ শব্দের সমার্থক এবাদত। বিমানবাহিনীর সৈনিক তিনি, খেলতেন বিমান ও জাতীয় ভলিবল দলে। সেখান থেকে জাতীয় ক্রিকেট দল, অতঃপর ইতিহাস গড়ার নায়ক।
আরও বৈচিত্র্য আছে। রবি পেসার হান্ট থেকে উঠে আসা এবাদতের বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজারে। কিন্তু ২০১৬ সালে আয়োজিত ফাস্ট বোলার অন্বেষণের এই কার্যক্রমে তিনি নিবন্ধন করেন ফরিদপুর থেকে। বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে সবচেয়ে গতিময় বোলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হন এবাদত। এরপর জায়গা মেলে বিসিবির পেস বোলিং ক্যাম্পে, পরের ধাপ জাতীয় দল এবং এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের নায়ক তিনি।
বিমানবাহিনীতে এবাদত যোগ দেন ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে। কয়েক বছর ভলিবল খেলেই কাটে তার। কিন্তু চাকরি, ভলিবল; সব চালিয়ে নিলেও তার মন পড়ে থাকতো ক্রিকেটে। পেসার হান্ট কার্যক্রমের কথা শুনে তার মুখে ফুটে ওঠে হাসির ঝিলিক। বিমানবাহিনী থেকে অনুমতি নিয়ে চলে যান সোজা ফরিদপুর। গতির পরীক্ষায় ১৩৯ কি.মি তুলে স্বপ্নের ভুবনে জায়গা করে নেন জাতীয় দলের এই পেসার।
জাতীয় দলেও এবাদতের পথচলা বৈচিত্র্যময়। ২০১৯ সালে টেস্ট অভিষেক হলেও নিজেকে প্রমাণ করা হচ্ছিল না তার। ১০ টেস্টে (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত) তার শিকার ছিল ১১ উইকেট। গত বছর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে দলে সুযোগ পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের শিকার হতে হয় তাকে। কিউইদের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টেও আবু জায়েদ রাহির বদলে তাকে দলে নেওয়ায় সমালোচনার শেষ ছিল না। সেই এবাদতই এখন নায়ক, আনন্দ উদযাপনের শিরোমনি।
কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৮ উইকেটে পাওয়া ঐতিহাসিক জয়ের নেপথ্যে দলীয় প্রচেষ্টা সবচেয়ে বড় কারণ। সবার চেষ্টায় অধরা জয়ের দেখা মিলেছে, অনেকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু যে নামটি সবচেয়ে বড়, সেটা এবাদত। কিউইদের প্রথম ইনিংসে সাদামাটা বোলিংয়ে এক উইকেট নেওয়া ডানহাতি এই পেসার দ্বিতীয় ইনিংসে রীতিমতো যমদূত হয়ে উঠেছিলেন।
তার বোলিং তোপের মুখে পড়েই দ্বিতীয় ইনিংসে আসা-যাওয়ার মিছিলে নাম লেখান নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। চতুর্থ দিনের শেষভাগ থেকে স্বাগতিকদের পরীক্ষা নেওয়া শুরু করা এবাদত শেষ দিনে হয়ে ওঠেন আরও ভয়ঙ্কর। অসাধারণ বোলিংয়ে ১৯ ওভারে ৪৬ রান খরচায় তুলে নেন ৬টি উইকেট। যা তার টেস্টের ক্যারিয়ার সেরা। এ ছাড়া প্রায় ৯ বছর ও ৪৭ ম্যাচ পর বাংলাদেশের কোনো পেসার হিসেবে টেস্টে ৫ বা তার বেশি উইকেটের স্বাদ পেলেন এবাদত।
এক টেস্টের ব্যবধানে কতো পরিবর্তন! ১০ টেস্টে ১১ উইকেটের মালিক এবাদতের নামের পাশে এখন ১১ টেস্টে ১৮ উইকেট। কদিন আগেই যাকে দলে নেওয়া নিয়ে সমালোচনায় সরব ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, কদিন পরে সেখানেই চলছে এবাদত স্তুতি। স্মরণীয় এই জয়ে বল হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ায় বাংলাদেশ পেসারকে ভাসানো হচ্ছে প্রশংসার বন্যায়।
স্বপ্ন মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, সেটার উদাহরণ এখন এবাদত। তবে সাফল্যের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলেও শেকড়ে ঠিকই দৃষ্টি আছে তার। এ কারণেই উইকেট নেওয়ার পর স্যালুট জানিয়ে উদযাপন করেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের অন্যতম এই সদস্য। যা গত কয়েক দিনে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে।
বিমানবাহিনী থেকে স্যালুট শিখেছেন জানিয়ে এবাদত ম্যাচের পরে এবাদত বলেন, 'আমি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একজন সৈনিক, তাই আমি জানি কীভাবে স্যালুট দিতে হয়। ভলিবল থেকে ক্রিকেটে, এটা অনেক বড় গল্প। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছি, ক্রিকেট উপভোগ করছি।'