বসে থেকেও দেখা মেলেনি ক্রেতার, বাধ্য হয়ে কম দামে চামড়া বিক্রি ও দান
কোরবানির জবাই করা পশুর চামড়া কেনার ক্রেতা সংকটে ছিলেন বগুড়ার বিক্রেতারা। ক্রেতা না পেয়ে অনেকে স্থানীয় মাদ্রাসায় চামড়া দান করে দিয়েছেন। সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল তার কোনো সুফল মেলেনি এবার। এরমধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা কিছু চামড়া কিনেছেন। তবে খুবই কম দামে।
সরকার নির্ধারণ করে দেয়া চামড়ার দাম, ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গত বছর যা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। একই চামড়া ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত বছর যা ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এছাড়াও সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। গত বছর যা ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা। পাশাপাশি প্রতি বর্গফুট বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা। গত বছর যা ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা।
বগুড়া শহরের জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা এলাকার আরিফ তালুকদার। তারা এবার ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির গরু কিনেছিলেন। গরুর চামড়া নিয়ে বিকেল পর্যন্ত বসে থেকেও পাননি কোনো ক্রেতার দেখা। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় মাদ্রাসায় চামড়াটি দান করেছেন। একই এলাকার বাসিন্দা আহসান হাবিব সেতু। তিনি কোরবানির জন্য ছাগল (খাসি) কিনেছিলেন। তবে ক্রেতা না থাকায় তিনিও স্থানীয় মাদ্রাসায় খাসির চামড়া দান করেছেন।
বগুড়া নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোখলেসুর রহমান। ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির গরু কিনেছিলেন। চামড়া বিক্রি করেছেন ৮০০ টাকায়। এছাড়াও তিনি আরেকটি খাসিও কোরবানি দিয়েছেন, সেই খাসির চামড়া বিক্রি করেছেন ১০ টাকায়। নন্দীগ্রাম ভাটগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা রেজাউল হক। তিনি ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন কোরবানির গরু। চামড়া বিক্রি করেছেন ২০০ টাকায়।
মোখলেসুর বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীরা যে দাম বলেছেন, সেই দামেই পশুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। তাদের (ব্যবসায়ী) বলা দামে চামড়া বিক্রি না করলে, হয়ত আর বিক্রিই হত না বলে জানিয়েছেন তারা।
বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম কোরবানির গরু কিনেছিলেন ৯৫ হাজার টাকায়। এই গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ৩০০ টাকায়।
চামড়া বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার গরুর চামড়া ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকার গরু চামড়া সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তারা বলছেন, ২৫-৩০ বর্গফুটের কাঁচা চামড়া সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নিচের ১৪ থেকে ২০ বর্গফুটের কাঁচা চামড়া সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় কিনেছেন ব্যবসায়ীরা।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুর রশীদ। তিনি এবার ১০০ গরুর চামড়া ও ১ হাজার ৫০০ খাসির চামড়া কিনেছেন। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, 'সকালের দিকে চামড়ার দাম একটু বেশি থাকলেও, বিকেলে একদমই দাম কমে যায়। আড়তদারদের নির্ধারণ করে দেয়া দামেই চামড়া কিনেছি। তবে আড়তে চামড়ার আমদানি অনেক বেশি এ কারণে দাম কম বলা হচ্ছে। দাম নিয়ে শঙ্কায় আছি।'
অন্যদিকে চামড়ার দাম এবার ভালো ছিল বলছেন আড়তদার ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। অনেকে ক্রেতা না পেয়ে চামড়া দান করেছেন এ বিষয়টি মেনে নিতে নারাজ ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। কথা হয় বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চামড়ার আড়তদার আব্দুল মতিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'গতবারের তুলনায় এবার চামড়ার দাম ভালোই আছে। অনেকে কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে না পেরে দান করেছেন বিষয়টা সঠিক নয়। দাম এবার ভালোই ছিল।'