প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৭-৫৫ টাকা ও খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ
আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্যবৃদ্ধি এবং এ খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়তে থাকায় এবছর কোরবানীর গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ৭ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খাসির চামড়ার দামও ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে, তবে বকরির চামড়ার দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার অনলাইনে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এ বছর লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৭-৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা, খাসির চামড়া সারাদেশে ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকা দরে বিক্রি হবে।
গতবছর কোরবানীর সময় ঢাকায় গরুর চামড়ার দর ৪০-৪৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৩-৩৭ টাকা, খাসি ১৫-১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
চামড়ার স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারদর, চাহিদা, সরবরাহ, রপ্তানির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঢাকায় গরুর চামড়ার দর প্রতি বর্গফুটে ১০ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করে। আর শিল্প মন্ত্রণালয় ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা শুধু গরুর চামড়ার দামে প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে সম্মতি দেন।
সভার শেষ দিকে ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়নের তথ্য তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গরুর চামড়ার দাম ট্যানারি মালিকদের প্রস্তাবিত দামের চেয়ে বর্গফুটে আরও ২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করলে ব্যবসায়ীরা তা মেনে নেন।
এর আগে, বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য কোরবানীদাতাকেই পশুর চামড়া ছাড়ানোর পর তিন ঘণ্টার মধ্যে লবণ মেশাতে হবে। এজন্য হাটে কোরবানীর পশু কেনার ক্ষেত্রে হাসিলার সময়ও ক্রেতা যাতে প্রয়োজনীয় লবণ কিনে, তা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেন তারা।
এতে আপত্তি জানান তথ্যসচিব মোঃ মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, গতবছর তিনি নিজে গরু কোরবানী দিয়ে চামড়া বিক্রি করেছেন ২৫০ টাকায়। চামড়া এখন মূল্যহীন হয়ে গেছে। গরুর চামড়ার উপযুক্ত দাম নিশ্চিত করা না গেলে কোন কোরবানীদাতা টাকা খরচ করে তাতে লবণ দেবেন না। তাছাড়া, কোরবানীদাতা লবণ মেশাবে, এমন কোন সংস্কৃতিও দেশে নেই। ফলে এ ধরণের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হবে না বলে মত দেন তিনি।
'আমরা যতো কিছুই করি না কেন, মাঠ পর্যায়ে চামড়ার দাম যদি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে কোনকিছুই কাজে আসবে না', বলেন তথ্যসচিব।
তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের দাম বাড়ছে, তাহলে দেশের বাজারে চামড়ার এই অবস্থা কেন? দাম না পাওয়ার কারণে চামড়ার প্রতি মানুষের মমত্ববোধ নেই। ছাগলের চামড়া মানুষ এখন গাছে ঝুলিয়ে রাখছে। এ অবস্থায় কোরবানী দাতা লবণ মেশাতে গিয়ে যে বাড়তি খরচ করবেন, তার দাম সে চামড়া বিক্রি করে পাবে কিনা, তা আগে নিশ্চিত করতে হবে।'
তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে শিল্পসচিব বলেন, 'যিনি ১ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনছেন, তিনি ১০০ টাকা দিয়ে ৮ কেজি লবণও কিনতে পারবেন।'
অন্যদিকে বাণিজ্য সচিব বলেন, 'যিনি কোরবানী দিচ্ছেন, তিনি লাভ-লস হিসাব করেন না। মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ-লসের হিসাব করে। এই দেশে আমার বয়সও ৬০ বছর হতে চলেছে। কোরবানী দাতা চামড়ায় লবণ দেবেন- এমন সামাজিক আন্দোলন শুরু করতে হবে। দেশের স্বার্থে নতুন ব্যবস্থাপনা গড়তে হবে।'