সমালোচনা সত্ত্বেও ‘সরকারি ঋণ বিল-২০২২’ পাস
বিরোধী দলের সংসদ ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও সরকারের ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক করার লক্ষ্যে 'সরকারি ঋণ বিল-২০২২' সংসদে পাস হয়েছে বৃহস্পতিবার।
আইনের একটি ধারায় বলা আছে, বাজেট ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে অর্থায়ন বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সরকার দেশি বা বিদেশি মুদ্রায় গৃহীত সুদ বা মুনাফা যুক্ত যেকোনো প্রকারের ঋণ ও বিনিয়োগ সংগ্রহ করতে পারবে।
এই ধারা নিয়েও বিরোধীরা আপত্তি তোলেন। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
অন্যান্য বিরোধী সংসদ সদস্যের মধ্যে জাতীর পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান সমালোচনা করে বলেন, এই আইনের মাধ্যমে সরকারের ঋণ গ্রহণের একটি অবাধ সুযোগ তৈরী করা হচ্ছে।
এভাবে আইন আনা কিসের ইঙ্গিত জানতে চেয়ে জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এটি একটি ভয়ানক আইন। এতে সরকারকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাহীন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। জনগণ কি এই ক্ষমতা সরকারকে দিয়েছে?
বিএনপির হারুনুর রশিদ বলেন, আইনে যে 'অন্য কোন উদ্দেশ্যে'র কথা বলা হয়েছে সেটা সুনির্দিষ্ট হওয়া দরকার ছিল। তাই এই বিলে যথেষ্ট ত্রুটি রেখে উত্থাপন করা হয়েছে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে দুর্নীতির ভয়াবহ বিস্তার ঘটছে। জনগণের অর্থ লুটপাট ও আত্মসাৎ হচ্ছে। এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারের বিষয়ে বিলের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নাই।
তিনি বলেন, দেশের ঋণ দিনে দিনে বাড়ছে। প্রয়োজনের থেকেও বেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে। উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটছি কিন্তু জাতীয় স্বার্থ কতটা রক্ষা হচ্ছে।
এই আইন আনার যুক্তির প্রশ্ন তুলে ফখরুল ইমাম বলেন, সার্বভৌম বন্ড দেশকে বিক্রি করার একটি কৌশল। এই বন্ডে স্বাক্ষর করলে অবশ্যই সেটা পরিশোধ করতে হবে। তারা যেভাবেই হোক এটা আদায় করে ছাড়বে। না দিতে পারলে একটি এলাকা দখল করে নিয়ে যাবে।
এদিকে টেকসই ঋণ নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঋণ কৌশলপত্র তৈরি, ঋণের ঝুঁকি নিরূপণ এবং সরকারের দায়ের হিসাবকে আরও প্রসারিত করার লক্ষ্যে নতুন আইনে ৪০টি ধারা রয়েছে।
'সরকারি ঋণ বিল ২০২১'- এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বা জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মিথ্যা তথ্য সম্পর্কিত সংঘটিত অপরাধ আমলে নিতে পারবেন না।
কোনো ব্যক্তি নিজের বা কারো পক্ষে সরকারি সিকিউরিটি বা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের আওতায় ইস্যু করা সার্টিফিকেটের স্বত্ব অর্জনের জন্য মিথ্যা তথ্য দিলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা হবে।
কোনো সরকারি সিকিউরিটি বা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের সার্টিফিকেটের মেয়াদ পূর্তির পর আসল ও মুনাফা দিয়ে দেওয়া হলে এ বিষয়ে সরকারের আর কোনো দায় থাকবে না। সরকারি সিকিউরিটির ধারক কোনো প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হলে বা অবসায়ন হলে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিযুক্ত প্রশাসক সিকিউরিটির বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে বিধান রাখা হয়েছে।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার সরকারি সিকিউরিটি নিয়ম মেনে হস্তান্তর করার পর ওই ব্যক্তিকে সিকিউরিটির আসল বা সুদের বিষয়ে দায়ী করা যাবে না। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরকার যে ঋণ নেবে তার যথাযথ গ্যারান্টি এ বিলের মাধ্যমে থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বিলে সরকারি ঋণ অফিসগুলোর ভূমিকা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক সরকারি সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিধান রাখা হয়েছে।
স্বাভাবিক ডিপোজিট ব্যবস্থার পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক ডিপোজিট ব্যবস্থা 'সুকুক' নামে শুরু করা 'বন্ড' এ আইনের অধীনে আনা হয়েছে। এটি আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সার্কুলার দিয়ে চালু করা হয়েছিল।
বিলে বলা হয়েছে, সরকারি ঋণ আইনের মাধ্যমে কত টাকা হলো এবং তার কী অবস্থা বা মুনাফা বা সুদ দেওয়া হলো তা জনগণকে জানানো হবে।