শুটকি ব্যবসায়ে চাঙ্গা হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অর্থনীতি, প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা
এক সময় জীবিকা নির্বাহের জন্য শুধু কৃষিকাজ আর মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার চরলালপুর গ্রামের বাসিন্দারা এখন শুটকি ব্যবসায়ে ঝুঁকছে, চাঙ্গা হচ্ছে অত্র অঞ্চলের অর্থনীতি।
প্রতি বছর গ্রামটির শুটকিপল্লী থেকে অন্তত ১০০ কোটি টাকার দেশীয় মাছের শুটকি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও বাজারজাত করা হয়। তবে পর্যাপ্ত পুঁজি না থাকায় এ ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শুটকিপল্লীতে তৈরি হওয়া শুটকির ৫০ শতাংশই পুঁটি। দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাতের পাশাপাশি ভারতে রপ্তানি হয় পুঁটি শুটকি।
গেল দুই বছর কোভিড মহামারির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চরলালপুরের শুটকি কারবার। মহামারির প্রথম বছরে ব্যবসা না হওয়ায় মজুদ করা শুটকি নষ্ট হয়ে অন্তত ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এছাড়া করোনার দ্বিতীয় বছরেও ভালো ব্যবসা হয়নি। তবে এবার করোনার সংকট কাটিয়ে ভালো ব্যবসা হওয়ার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
শুটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরলালপুর গ্রামে প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মাছ সংগ্রহ, শুটকি তৈরি ও মজুদের কাজ করেন প্রায় তিন শতাধিক বাসিন্দা।
এ ব্যবসায় কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় কয়েকশ নারী-পুরুষের। শুটকিপল্লীতে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের শুটকি তৈরি হয়। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মাছ সংগ্রহ করে পুরোদমে চলে শুটকি তৈরির কার্যক্রম। এ সময় শুটকি তৈরির পাশাপাশি মজুতও করেন ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে লালপুর শুটকিপল্লী থেকে আকার ও মানভেদে প্রতিকেজি পুঁটি শুটকি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, ট্যাংরা প্রতি কেজি ৬০০-৭০০ টাকা দরে। এছাড়া শোল মাছের শুটকি ১০০০-১২০০ টাকা, বাইম শুটকি ১৫০০-১৭০০ টাকা, কাইক্কা ১০০০-১২০০ টাকা, গইন্না ৫৫০-১০০০ টাকা এবং রুই শুটকি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা দামে।
শুটকি ব্যবসায়ীরা জানান, ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে শুটকি ব্যবসার জন্য ঋণ সুবিধা পান না। এর ফলে বিভিন্ন সমিতি ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হয়। ফলে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করে ব্যবসা থেকে তেমন লাভ হয় না।
শুটকি ব্যবসাকে আরও বড় করার জন্য সব ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ কিংবা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার দাবি জানান তারা।
শুটকিপল্লীর ব্যবসায়ী সুকমল দাস জানান, প্রতিবছর অর্ধকোটি টাকার শুটকি বিক্রি করেন তিনি। তবে পুঁজির সংকটের কারণে ব্যবসা বড় করতে পারছেন না।
বর্তমানে তার ডাঙ্গিতে ১৫ লাখ টাকার শুটকি আছে। এগুলো বিক্রির পর আবারও মাছ কিনে শুটকি তৈরি করবেন।
আরেক ব্যবসায়ী নিখিল দাস বলেন, গেল কয়েক বছর ধরে নদী ও খাল-বিলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে কম। এর ফলে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচা মাছ পাওয়া যায় না। এতে করে মাছের দাম বেশি পড়ায় শুটকি তৈরিতে খরচ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এর প্রভাব পড়ছে শুটকির দামে।
তিনি আরও বলেন, "আমাদের অধিকাংশ ব্যবসায়ী পুঁজি সংকটে আছেন। শুধুমাত্র কিছু বড় ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পান। এছাড়া শুটকি ব্যবসায় সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায়, ব্যবসাটিকে বড় করা যাচ্ছে না। যদি ব্যবসার পরিধি বাড়ানো যায়, তাহলে এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।"
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরবিন্দ বিশ্বাস বাপ্পি এ ব্যাপারে বলেন, 'শুটকিপল্লীতে আমরা ব্যবসায়ীদের জন্য পল্লী উন্নয়ন ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করেছি। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকে।
"এছাড়া শুটকি শুকাতে ড্রায়ার মেশিনের জন্য আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। শুটকি ব্যবসার অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপই আমরা নিচ্ছি।"