সুন্দরবনে দুই মাসের জন্য কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা
প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় সুন্দরবনে দুই মাসের জন্য কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। তবে এই সময়ে লোকালয়ে কাঁকড়া ক্রয় বা বিক্রয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে কোন বনজীবীকে কাঁকড়া ধরার অনুমতি পত্র দিবে না বন বিভাগ।
খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, প্রজনন মৌসুম হওয়ায় প্রতি বছরই এই সময়ে কাঁকড়া ধরার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এইবারও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
বন বিভাগ থেকে জানা গেছে, সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরণের জন্য ১২ হাজার নৌকাকে বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। ওইসব নৌকাগুলি নিয়ে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে জেলেরা মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করেন।
সুন্দরবনে ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে শুধু শিলা কাঁকড়া জেলেরা আহরণ করে বিক্রি করেন। তবে এই সময়ে কাঁকড়া ধরার অনুমতি না দিলেও মাছ ধরার অনুমতি বহাল রয়েছে।
খুলনার কালাবগি গ্রামের বনজীবী বিয়াদুল ইলসাম যিনি গত ২০ বছর ধরে সুন্দরবন থেকে মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করেন। তার ভাষ্যমতে, শীত মৌসুমে সুন্দরবন থেকে বেশি পরিমাণ কাঁকড়া আহরণ করা যায়। কাঁকড়া ধরার জন্য জেলেরা সাধারণ বাঁশের তৈরি খাঁচা ও ফাঁদ ব্যবহার করেন। এই সময়ে কাঁকড়া না ধরার অনুমতি না থাকায় জেলেরা মাছ ধরার জন্য অনুমতি পত্র নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, সুন্দরবনে মৌসুম ভেদে কখনো মাছ, কখনো কাঁকড়া ধরার নিষেধাজ্ঞা আসে। এছাড়া গোলপাতা ও মধুও বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আহরণ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
নানা সময়ে বিভিন্ন রকমের নিষেধাজ্ঞার কারণে বেকার হয়ে পড়ে এ এলাকার দরিদ্র জেলেরা। এই সময়ের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কোন রকমের সহায়তা দেওয়া হয় না, বলেন তিনি।
তবে সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) জিয়াউর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞাটা দেওয়া হয়েছে মূলত কাঁকড়ার বংশ বৃদ্ধি করার জন্য। কারণ শীতে কাঁকড়া ডিম ছাড়ে, তখন এরা ক্ষুধার্ত থাকায় ধরা অনেক সহজ হয়। তাই এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কাঁকড়ার হার বৃদ্ধি পাবে। আর এতে জেলারাই উপকৃত হবেন।
সুন্দরবনের কাঁকড়া ক্রয় বিক্রয়ে সব থেকে বড় মোকাম রয়েছে বাগেরহাটের ভাগা বাজারে। সেখানের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার কাঁকড়া ওই খানের ব্যবসায়ীরা ঢাকাতে পাঠান। সেখানের ব্যবসায়ীরা বিদেশে রপ্তানি করেন।
ভাগা বাজারের কাঁকড়া ব্যবসায়ী আসাদুল কবীর বলেন, "নিষেধাজ্ঞার সময়ে এই বাজারে কাঁকড়া ক্রয় বিক্রয়ের হার এক তৃত্বীংশে নেমে আসে। লোকালয়ে চাষ করা কিছু কাঁকড়া দিয়ে আমরা ব্যবসাটা টিকিয়ে রাখি।"