তাপসের ব্যাংক হিসেবে ৩০৪.৩৩ কোটি টাকা ও ২৬৩,৭৩৬ ডলারের সন্দেহজনক আমানত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ২৭টি ব্যাংক হিসাবে তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩০৪.৩৩ কোটি টাকা ও ২ লাখ ৬৩ হাজার ৭৩৬ মার্কিন ডলারের সন্দেহজনক আমানতের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, এই লেনদেন গত ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখ থেকে ২০২৪ সালের ১৯ আগস্টের মধ্যে হয়েছে।
এছাড়া, ৭৩.১৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।
আক্তার হোসেন জানান, মোট ডিপোজিটের (জমা) মধ্যে তাপসের অ্যাকাউন্ট থেকে ২৩৪.৮৩ কোটি টাকা এবং ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯১ ডলার তোলা হয়েছে।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, তাপস ৪.৮১ কোটি টাকার স্থাবর ও ১১৩.৮৮ কোটি টাকার অস্থাবরসহ মোট ১১৮.৭০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন।
আয়কর নথি অনুযায়ী, ২০০৬-০৭ করবর্ষ হতে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ৫১.৩৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে তার মোট অর্জিত সম্পদের মূল্য ১৭০.০৫ কোটি টাকা। যদিও তাপস তার আয়কর নথিতে বিভিন্ন খাতে মোট ১৯২.১০ কোটি টাকা আয় প্রদর্শন করেছেন।
তাপসেরর দাখিলকৃত রিটার্নে ২০১২-১৩ থেকে ২০১৪-১৫ করবর্ষে এ তিন বছরে মৎস্য চাষ বাবদ ৯৫.২৪ কোটি টাকা আয় প্রদর্শন করেছেন বলে উল্লেখ করেন। মৎস্য চাষের জন্য ২০১১ সালের জুলাই মাসে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১১টি পুকুরসহ ৪৭.৫৭ একর জমি ৩ বছরের জন্য লিজ নেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালের জুলাইয়ে ১১টি পুকুরের মধ্যে ৩টি পুকুর ২ বছরের জন্য তার স্ত্রী আফরিন তাপসের নামে লিজ প্রদান করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সে জায়গায় ৩টি পুকুর ব্যতীত আর কোনো পুকুর নেই। বাকি জমির মধ্যে বিভিন্ন গাছপালা ও ঘরবাড়ি রয়েছে। তিনি সে জমিতে মাছের চাষ করেছেন, এমন কোনো প্রমাণ অনুসন্ধানকালে দুদক কর্মকর্তারা পাননি।
২০০৯ থেকে ২০২৪ এর আগস্ট পর্যন্ত তিনি এসব সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদক কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
তাপসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি দায়ের হয়েছে।
এছাড়া, ফজলে নূর তাপসের স্ত্রী আফরিন তাপসের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আফরিন তাপস তার স্বামী শেখ ফজলে নূর তাপসের সহায়তায় আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৬.৪০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অসাধু উপায়ে অর্জন করেন।
অন্যদিকে, তার ৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩৯.৮২ কোটি টাকা ও ২,০২,২৫৯ মার্কিন ডলার জমা হয়েছে। এরমধ্যে ৩১.০৭ কোটি টাকা ও ১,৯৩,৭০৪ মার্কিন ডলার উত্তোলন করা হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাপস, তার স্ত্রী আফরিন তাপস এবং তাদের ছোট ছেলে ফজলে নাশওয়ানের সমস্ত অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দেয় ব্যাংকগুলোকে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি জব্দ করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন আগে গত ৩ আগস্ট তাপসকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিঙ্গাপুরগামী একটি ফ্লাইটে দেখা যায়। ওই ফ্লাইটে তাপসের একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল।