কোমর্বিড ও নন-ভ্যাকসিনেটেড ওমিক্রন আক্রান্তদেরই মৃত্যুঝুঁকি বেশি
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনায় আরও ৩৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
গত ৫ দিন ধরে প্রতিদিন তিরিশের বেশি মৃত্যু হচ্ছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মত ওমিক্রন এখনো ততোটা মারাত্মক আকার ধারণ না করলেও রোগীর সংখ্যা বাড়ায় কোভিডে মৃত্যুও বাড়ছে। নন-ভ্যাকসিনেটেড, কোমর্বিড (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগে ভুগছে) ও বয়স্ক রোগীদের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী বলেন, "রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে মৃত্যুর হারও বেড়ে যায়। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে কোভিড রোগীদের উপসর্গ মৃদু হলেও মৃত্যু বাড়ছে।"
তিনি বলেন, "এখনো অনেক মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা কাজ করে, ভ্যাকসিন নিতে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে তারা এখন ভিকটিম। বয়স্ক, কোমর্বিড ও নন-ভ্যাকসিনেটেড রোগীরা এখন বেশি মারা যাচ্ছে। হাসপাতালে আমরা নন-ভ্যাকসিনেটেড ও কোমর্বিড রোগী বেশি পাচ্ছি।"
দেশে টানা ১২ দিন ধরে দশ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এখন দেশে কোভিড রোগীদের ৮৫% অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত, মৃদু উপসর্গের কারণে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকছেন অধিকাংশ রোগী।
তবে সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। সব বয়সীরা আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে বয়স্কদের ভর্তির হার বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
ডা. ফরহাদ বলেন, "ভ্যাকসিন নেয়ার পরও যারা কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির হার কম, তারপরও যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট কম লাগছে। মূলত নন-ভ্যাকসিনেটেড রোগীদের বেশি অক্সিজেন বা হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা প্রয়োজন হচ্ছে।"
"বুস্টার ডোজ নেয়ার পরও আক্রান্ত হয়েছেন এখন পর্যন্ত এমন কোনো কোভিড পজিটিভ রোগী আমি পাইনি। কোভিডে মৃত্যু কমাতে সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া মাস্ক পরতে হবে ও যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতে হবে", যোগ করেন তিনি।
শুধু বাংলাদেশে নয়, আমেরিকাতেও ভ্যাকসিন না নেওয়া ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তির হার বেশি।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ইমার্জেন্সি ফিজিশিয়ান ডা. মেগান র্যানি গত ১লা ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান, যেসব বয়স্ক ব্যক্তিরা এখনো ভ্যাকসিনের বুস্টার নেননি, তাদের অতিরিক্ত অক্সিজেন বা হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বেশিরভাগই টিকা নেননি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে দেশে কোভিডে মারা গেছে ৩২২ জন। তাদের মধ্যে ৭৩% কোভিড ভ্যাকসিন নেয়নি। মৃতদের মধ্যে ৬০% এর অধিক কোমর্বিড রোগী ছিলেন।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, "দেশে এখন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ডমিনেন্ট করছে, তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টও আছে। এখন যারা কোভিড পজিটিভ হয়ে মারা যাচ্ছে তাদের মধ্যে ডেল্টা, অমিক্রন সব ভ্যারিয়েন্টই রয়েছে।"
"কোমর্বিড রোগী, বয়স্ক মানুষেরা যে কোন ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যারা টিকা নেয়নি, কোমর্বিডিটি আছে, বয়স্ক- তাদেরই মূলত বেশি প্রাণহানি ঘটছে। এখন দিনে ১২ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ডমিনেন্ট করলে মৃত্যু ২০০ ছাড়িয়ে যেত", বলেন ডা. আলমগীর।
তিনি আরো বলেন, "ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে উপসর্গ মৃদু হলেও মৃত্যু হয় না, সে ধারণা ভুল। আমেরিকাতে ওমিক্রনে মৃত্যুহার ২০%। আমাদের এখানে আমেরিকার তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা কম।"
উচ্চ সংক্রামক করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সাম্প্রতিক সপ্তাহে আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে; সেখানে গড়ে প্রতিদিন করোনায় মৃতের সংখ্যা ২,৫০০।