ধর্ষণ পীড়ন
ফ্যাসিনেইটিং (fascinating) ইংরেজি শব্দটির বাংলা পারিভাষিক শব্দসমূহ হচ্ছে চিত্তাকর্ষক, মনোরম, আনন্দদায়ক, মুগ্ধ করে এমন, চটুল, চঞ্চল, অস্থির, ক্ষিপ্রগামী ইত্যাদি। শব্দটির উৎপত্তি এবং ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা যদি জ্ঞান অর্জন করি, এটির পুনঃব্যবহার করতে গিয়ে আমাদের কারও মনে হয়তো লজ্জার শক্তিশালী বোধ গড়ে উঠতে পারে। কিংবা কারও মাথায় ভীষণ দুষ্টুমি ভর করতে পারে। পেল্লয় প্রেরণায় কেউবা আবার মানুষের মনে আঘাত দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ লাভের বাসনায় ভাসতে পারে।
ল্যাটিন ক্রিয়াবাচক শব্দ 'fascinare'-এর অর্থ হচ্ছে charm (আনন্দ দেওয়া, মজান, বশে আনা ইত্যাদি) অথবা hex (যা দুর্ভাগ্যের কারণ, দুর্ভাগ্যসূচক বস্তু, সম্মোহন ইত্যাদি)।
'fascinare' শব্দটি এসেছে প্রাচীন রোমে ব্যবহৃত 'fascinum' নামক অ্যামিউলিট (amulet) অর্থাৎ মাদুলি, কবজ, তাবিজ , মন্ত্রপূত রক্ষাকবচ থেকে। মন্ত্রপূত এই রক্ষাকবচ 'fascinum', ধারনকারীকে জটিল রোগ এবং মন্দ আত্মা থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করত। এবং রক্ষাকবচটি দেখতে 'phallus', বাংলা উচ্চারণ 'ফ্যালাস'-এর মতন। আর ফ্যালাস হচ্ছে সমুত্তেজিত পুরুষলিঙ্গের প্রতীক। শক্তির উৎসের প্রতীক। পেনিস সদৃশ 'ফ্যালাস' শক্ত, সুন্দর ও উলম্ব।
শব্দ তত্ত্ব বা ব্যুৎপত্তিতে দক্ষ পণ্ডিতগণ মনে করেন, সে কারণেই ফ্যাসিনেইটিং (fascinating) শব্দটির উদ্ভব হয়েছে মূলত 'ফ্যালাস' (phallus) শব্দ থেকে। এখনো অনেক রাজকুমারির হ্যাটের চূড়ায় ফ্যালাস সদৃশ অ্যামিউলিটটি শোভা পায়। যদিও ইংরেজি ভাষার অনেক শব্দ মূলত জার্মানি বা ল্যাটিন ভাষা থেকে উদ্ভূত, তবে এ ভাষার কিছু কিছু শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বেশ অদ্ভুত ও উদ্ভট জায়গা থেকে।
এ নিবন্ধ ইংরেজি শব্দের কিম্ভুতকিমাকার ব্যুৎপত্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য লিখছি না। শক্তির উৎসের প্রতীক 'ফ্যালাস' যা সমাজের জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, মানুষের মনে আঘাত দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ লাভের বাসনায় লিপ্ত হয়েছে, তা নিয়ে লিখছি। ওয়ান ডব্লিউর জন্য আসুরিক শক্তিতে ইঁদুর দৌড়ে অংশগ্রহণের বিষয়ে বলছি।
পরিসংখ্যান মতে, আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। সাধারণত যুদ্ধের সময়ে ধর্ষণের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায় বলে গবেষকদের দাবি। প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসা থেকেই নারীর প্রতি ধর্ষণ নামক সহিংসা চালানো হয়। যুদ্ধের এই ভয়াবহ বিভীষিকাময় চিত্র আঁকতে গেলে শিল্পীর হাত থেকে বারে বারে তার তুলিটি পড়ে যেতে পারে, এটিই স্বাভাবিক।
এ কথা সত্যি যে, গোটা মানবজাতি আজ পৃথিবী নামক যুদ্ধক্ষেত্রে করোনা নামক অদৃশ্য এক অনুজীব শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছে বেঁচে থাকার জন্য। কারণ, অতি হিংস্র, অদ্ভুতুরে এবং ভয়ংকর রকমের অবাধ্য এই শত্রু। যুদ্ধক্ষেত্রে এই শত্রুর মোকাবেলায় আমাদের ব্রহ্মাস্ত্র হচ্ছে মাস্ক, পিপিই, সাবান এবং স্যানিটাইজার। এ দিয়েই অদৃশ্য এই জীবাণুর সঙ্গে আমরা দিন-রাত লড়ে যাচ্ছি। সমগ্র মানবজাতি এখন করোনার বাস্তবতায় হাবুডুবু খাচ্ছে। আমরা মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক নজিরবিহীন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
যখন মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসে আমাদের মাঝে যৌক্তিক ও সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা তৈরি হচ্ছে, জাত-কুল-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি সম্প্রদায় ভালো সামাজিক অভ্যাসগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করছে, শিষ্টাচার মেনে চলার চেষ্টা করছে এবং একে অপরের ব্যাপারে আরও যত্নশীল হচ্ছে; করোনা ভাইরাসের ভয়ে সকলেই যখন ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, ২০২০ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৯৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পালাক্রমে ধর্ষণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে। গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২০৮ জন নারীকে।
মহামারির মাঝে ধর্ষণের এত ব্যাপকতা দেখে মানুষ চরমভাবে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। পুরো সমাজ আতঙ্কিত। ধর্ষণ ও নির্যাতনের নিষ্ঠুরতায় ক্ষত-বিক্ষত আমাদের সমাজ। মিডিয়ায় প্রচারিত প্রাণসংহারিণী করোনা মহামারিতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যার পরিবর্তে ধর্ষণের মর্মান্তিক সংবাদ শিরোনাম বর্তমানে প্রতিনিয়ত জনমনে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। চরম হতাশায় ডুবে গেছি আমরা সবাই। আসলে এখন যা কিছু ঘটছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণের প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। দরকার হলে বিদ্যমান আইনের সংস্কার করাও আবশ্যক। আর নির্যাতিতদের রক্ষা করতে সরকারকে আইনি সাহায্য ও নিরাপত্তা দিতে হবে, যাতে প্রভাব বিস্তার করে দোষীরা রেহাই না পায়।
আমাদের সমাজের অধিকাংশ নির্যাতিতা নারী লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেলেন। তাদের ওপর সংঘটিত পৈশাচিক নির্যাতন নিষ্ক্রিয়তার সঙ্গে গ্রহণ করে অনেক সময় চলে যান লোক চক্ষুর আড়ালে।
সভ্য সমাজের নির্যাতিতা বোনেরা কেন লজ্জায় মুখ লুকাবে?
ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞান ও সমসাময়িক সংস্কৃতির অতি সমালোচিত পেনিস ইনভি'র (ঈর্ষা) ধারণার ধরনে তাদের মাঝে অধুনা মানসিক দুর্বলতা সৃষ্টির সুযোগ নেই। শুনেছি, এ ধরায় আগমনের প্রাক্কালে পৃথিবীর প্রথম মানবীই নাকি প্রথম মানবকে সাহস যুগিয়েছিল। 'যদি পুরুষ হতে পারতাম,' এ রকম অমূলক ধারণা ও ইচ্ছাকে পুষে নারীদের নিজেকে খুব ক্ষমতাহীন মনে করার কোনো কারণ নেই। এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এনাটমিক ডিসটিংকশন বিটুইন সেক্সেস-এর জন্য হীনমন্যতায় ভোগার কোনো যৌক্তিক হেতু নেই।
ধর্ষণের লজ্জা মোটেই নির্যাতিত নারীদের নয়। সেই সকল পিশাচদের উচিত লজ্জায় নিজেদের মুখ ঢাকা। ধর্ষকদের চতুষ্পদ জন্তুর সঙ্গে অনেকেই তুলনা করেন। প্রকৃত পক্ষে, চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টিকর্তার দেওয়া হাজারও অনুগ্রহের অন্যতম। আকার-আকৃতি, শক্তি-বলে এরা আমাদের চেয়ে অনেক ক্ষমতাবান। মানুষ চতুষ্পদ জন্তু থেকে বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়। চতুষ্পদ জন্তুসমূহ যেজন্য সৃষ্টি হয়েছে, তা তারা মেনে চলে। এরা অন্তত তাদের জন্য কোনটা কল্যাণকর কিংবা কোনটা ক্ষতিকর, তা বুঝতে পারে।
সকল সৃষ্টির ওপর মানুষের অবস্থান। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনে হয় আমরা যেন সেটা প্রমাণ করতে পারছি না। দুনিয়াকে উপভোগ করাই যেন আমাদের চরম উদ্দেশ্য। ধর্মমতে, এরা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও অধম। ওরা ভালো-মন্দ কিছুই বোঝার চেষ্টা করছে না। ধর্ষকরা প্রকৃতির সবচেয়ে হিংস্র ও লোভী প্রাণী। শরীরপূজারী এবং অজ্ঞান। দেখেছি, কুকুর কখনো এক লোকমা খাদ্যের কৃতজ্ঞতা ভুলে না, সেক্ষেত্রেও যদি আমরা তাকে শতবার পাথর মেরে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিই। তাই কুকুরের চেয়ে মন্দ এরা।
অনৈতিক কাজ করতে যে কারোই লজ্জা করা উচিত। নিজেকে অন্যায় কাজ হতে বিরত রেখে পবিত্র থাকা উচিত। শুধু খাদ্য খাওয়া, নিদ্রা যাওয়া এবং শারীরিক আস্ফালন করা পশুর কাজ। কভু মানুষের কর্ম নয়।
ধর্মমতে, সকল সৃষ্টিকূলকে শেষ বিচারের দিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সে দিনটি প্রচণ্ড উত্তপ্ত থাকবে। বিচার দিবসে সূর্য মানুষের কাছ থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থান করবে। সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তা কিছু মানুষকে— যেমন, ন্যায়পরায়ণ শাসক, যে যুবকের জীবন গড়ে উঠেছে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে, সে ব্যক্তি- যাকে স্বীয় স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো নারী আহ্বান জানালে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে- 'আমি সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করি'— তার করুণার ছায়াতলে স্থান দেবেন।
অথচ যৌবনের উপস্থিতিতে শক্তির উৎসের প্রতীক 'ফ্যালাস'-এর প্ররোচনা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়ে সে সব নিকৃষ্টের বেপরোয়া বানিয়ে দেয়। 'ফ্যালাস'-এর তাড়নায় তারা ডুবে যায় পাপের সাগরে।
জনগণের সেবাই সৎ শাসকের লক্ষ্য। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এ ঘোর অন্যায়কে বিনাশ করতে হবে। কারণ, হয়তো এ বিষয়ক নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা এবং অনুভূতি সম্প্রতি মানুষের মনে অবিরত ঘুরে বেড়াচ্ছে। সকলের মধ্যে প্রিয়জনদের সুরক্ষা নিয়ে ভয় ও ভাবনা কাজ করছে।
যেটুকু জানি, আসমানি বা জমিনি ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ মূলত মানব চরিত্র উত্তমরূপে গঠন করার নির্দেশনা দিয়েছে এবং পথ দেখিয়েছে। এগুলো নৈতিক ও আধ্যাত্মিক এবং বস্ত্তগত তথা পারলৌকিক ও ইহলৌকিক উভয় দিকের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। যথার্থ জ্ঞান, সত্য ও সৎ স্বভাব অর্জনের জন্য নিছক উপাসনাই যথেষ্ট নয়। এজন্য অন্যায় চিন্তা ও কল্পনা হতে বিরত থাকতে হবে। সমস্ত পাপকাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। অধিক পরিমাণে সৎ কর্ম করতে হবে। আর সৎ কর্ম করাই ধর্ম।
বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জনের সাধনা ও চর্চা এবং মার্জিত শিল্প-সাহিত্যের অনুশীলন আমাদের মাঝে কল্যাণ সাধনের মানসিকতা তৈরি করতে পারে। বেশি বেশি দৈহিক সুখ-শান্তি নিয়ে ব্যস্ত না থেকে হালাল রুটি-রুজির অন্বেষণে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকায় না থেকে মানবতার কল্যাণ সাধনের মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বাঙালির ধর্ম বলতে সামাজিক কর্তব্যবোধ, রিলিজিয়ন, পলিটিক্স- সবকিছুকেই বোঝায়। সৃষ্টিকর্তা বলতেও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বিবর্জিত কোনো অতীন্দ্রিয় সত্তাকে তিনি বুঝেননি; বুঝেছেন সকল মানুষের মধ্যে যিনি স্বয়ং প্রকাশিত- তাকে। তার মতে, বাঙালির দার্শনিক চিন্তায় আবেগ ও বিশ্বাসের মাত্রা যা-ই থাক, সে আবেগ ও বিশ্বাসকে তারা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করেছেন যুক্তি দিয়ে; ধর্মীয় ও দার্শনিক ভাবনাকে তারা প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন একটা সুখি-সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
অনেকের মতে, 'আত্মা' একটা চেতনা- যা অচেতন অবস্থায়ও সজাগ থাকে। মানুষের চেতনার বিকাশের একটা স্তরে মানুষ তার পরিবেশ সম্পর্কে চিন্তা করতে আরম্ভ করে। মানুষ প্রকৃতি জগতের রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করে। প্রকৃতি, জগৎ এবং পরবর্তীকালে মানুষের নিজের দেহ এবং চেতনা সম্পর্কেও সে চিন্তা করতে শুরু করে। ধর্মীয় অনুশীলন ঘনিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন, পবিত্র পারিবারিক বন্ধন অটুট, জাতীয়তাবাদে উদ্দীপ্ত এবং যৌন বিচক্ষণতা সংরক্ষণ করতে অনুপ্রাণিত করে। এর মাধ্যমে নৈতিক কাজ এবং নৈতিক বিনোদন করা মানুষের আদর্শ হয়ে উঠতে পারে।
কোনো রোগের ভয় ওই রোগের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি জীবনের যে কোনো ক্ষেত্র বা পরিধির সঙ্গে ক্রস-মিক্স হতে পারে। এই মহামারিতে অর্থনীতির নিম্নগামীতায় ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়েছে প্রত্যেককে। বিকৃত পাপ ও জঘন্য অপকর্ম করে প্রকাশ্যে আনন্দ লাভ করার মাঝে করোনা পীড়িত পরিস্থিতিজনিত কোনো হতাশা লুকিয়ে আছে কি না, কে জানে। এ ক্ষেত্রে ধর্ম আধ্যাত্মিক প্রযুক্তি-পদ্ধতি প্রদান এবং তা অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট, অসুবিধা ইত্যাদি সহ্য করতে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে, সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে সহনশীল ও আশাবাদী করে তুলতে পারে। সর্বোপরি, মানুষকে সৎ কর্মের দিকে পরিচালিত করতে সহায়তা করতে পারে।
'লজ্জাই নারীর ভূষণ'— এ কথা মানতে যদি পুরুষদের দ্বিধা না হয়, তবে এ কথাও সত্যি যে, লজ্জাই সভ্যতা। আর নারীরাই সভ্যতার সংঘটক। লজ্জা ছাড়া মানুষ হিংস্র হতে পারে। বর্বর হতে পারে। চতুষ্পদ জন্তুর চেয়ে অধম হতে পারে। একজন সুপুরুষ জানে মনের ভেতরের গোপন সব কামনা-বাসনা এবং প্ররোচনা তাকে কীভাবে লজ্জার কথা ভেবে সামলাতে হয়। আর কুপুরুষের হিংস্রতা ও বর্বরতা সামাল দিতে দরকার নৈতিকতা, আইন এবং তার প্রয়োগ।
মানুষই সমাজ ও সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। এসবের চাপে নিজেকে সভ্য করে তুলছে। বলা যায়, যতটা সভ্য তারা, ততটাই মানবিক। কাপুরুষ নারী-শিশু নির্যাতনকারী এবং অসুর ধর্ষকদের কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা পারিবারিক পরিচয় থাকতে পারে না। ধর্ষক কারও বন্ধু হতে পারে না। পরিবার ও সমাজ থেকে তাদের অচিরেই উচ্ছেদ করতে হবে।
শুনেছি, ১৯ শতকে ইউরোপে অসদাচরণ করা পুত্রদেরকে পিতা-মাতারা খোজাকরণ অথবা অন্য কোনোভাবে 'ফ্যালাস'-এ আঘাত দেবার হুমকি দিতেন। তাদের অপশক্তির উৎসের প্রতীক 'ফ্যালাস' খোজাকরণের মাধ্যমে সভ্য মানুষ অমানবিক হতে পারে না। এদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই দিতে হবে। অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা সকলেই ভয়াবহ এই বেলেল্লা কুপুরুষের আধিপত্য থেকে সমাজের মুক্তির জন্য একটি স্থায়ী সমাধান প্রত্যাশা করছি।
- লেখক: বুয়েট শিক্ষক ও কলামিস্ট