‘অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও, ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক ধরে রাখবে’
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারক দেশগুলোর ওপর নতুন করে শুল্কারোপের কথাও বলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের আইনও আরো কঠোর হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সহায়তাও কমতে পারে। তার এসব সিদ্ধান্ত বাকি বিশ্বের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
এসব সিদ্ধান্তের প্রভাব বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই বা কেমন হবে? বিশেষত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে। এসব বিষয়ে জানতে সাবেক একজন কূটনীতিকের সাথে কথা বলেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। তিনি হলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির। তার বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরা হলো—
এম. হুমায়ুন কবির: নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নির্বাহী আদেশে সই করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অভিবাসন নীতিতে বাংলাদেশিদের ওপর প্রভাব পড়বে। জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বাতিল করার ফলে— প্রবাসী বাংলাদেশি-সহ বৈশ্বিকভাবে অন্য দেশগুলোর প্রবাসীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সংস্থা– ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এরমধ্যেই বিভিন্ন শহরে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। এটি চলমান থাকলে অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসীরা আরো উদ্বেগের মধ্যে পড়বেন, অনেকে বাংলাদেশে ফেরত আসার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ব্যয় পর্যালোচনা করতে, ৯০ দিনের জন্য দেশটির আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। আমাদের এখানকার রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মানবিক সহায়তাও— এতে ব্যাহত হতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি চিন্তার বিষয়, কারণ রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে এবং এই সংকট সমাধানে আমরা জয়েন্ট রিসপন্স প্ল্যানের অধীনে আসা আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভর করি।
এই সহায়তার একটি বড় অংশের তহবিল আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যা আগামী তিন মাসের জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়লো। এর প্রভাব বহুগুণ হয়ে যাবে বলে মনে করি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছেন ট্রাম্প। এসব সিদ্ধান্তের-ও প্রভাব নিশ্চিতভাবেই পড়বে। বাংলাদেশ জলবায়ু- ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ; অন্যদিকে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও ভঙ্গুর। এসব খাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ও তহবিল হারানো— আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য আরো অনিশ্চয়তা ও প্রতিকূলতার সৃষ্টি করবে।
ট্রাম্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিপ্রায় হলো, তিনি সব দেশ থেকে করা আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসাতে চান। শুরুটা হবে ফেব্রুয়ারিতে চীনকে দিয়ে। যদিও তিনি এবিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা এখনও দেননি, কিন্তু এটি বাস্তবায়িত হলে— আমাদের রপ্তানিখাতের ওপরও একটি পরোক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরার জন্য বাংলাদেশে একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, চলছে সংস্কার প্রচেষ্টা। সংস্কারের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ যদি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়, এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র হিসেবে রূপান্তরিত হতে পারে— তাহলে অত্র অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক লক্ষ্যগুলো অর্জনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠবে। তাই আমি মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে একটি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রক্ষা করবে ট্রাম্পের প্রশাসন।