ইরানের বাবর-৩৭৩ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৩০০ কিমি দূর থেকে স্টেলথ এফ-৩৫ শনাক্ত করতে পারবে?
গত ৮ নভেম্বর ইরান দেশটির বাবর-৩৭৩ মিসাইল সিস্টেমের একটি আপগ্রেডেড ভার্সন প্রকাশ করেছে। ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য (স্যাম) এ মিসাইল সিস্টেমটির পাল্লা ৩০০ কিলোমিটারের বেশি বলে দাবি করেছে দেশটি। ইরানি কর্তৃপক্ষে আরও দাবি, অনেক দূর থেকেই এফ-৩৫'র মতো স্টেলথ যুদ্ধবিমান শনাক্ত করতেও সক্ষম বাবর-৩৭৩। খবর দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস-এর।
মিসাইল সিস্টেম প্রদর্শন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদরেজা আশতিয়ানি। এ সময় একটি সায়াদ বি৪ দূরপাল্লার মিসাইল নিক্ষেপের মাধ্যমে ওই মিসাইল সিস্টেমটি পরীক্ষা করা হয়।
ওই পরীক্ষায় বাবর-৩৭৩'এর রাডার ৪৫০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তু সফলভাবে শনাক্ত করেছে বলে দাবি ইরানের। প্রায় ৪০৫ কিমি দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুকে ট্র্যাক করে তারপর ৩০০ কিমি দূর থেকে এটিকে ধ্বংস করে বাবর-৩৭৩।
এ মিসাইল সিস্টেম আপগ্রেডের আগে এটি কেবল ৩৫০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত, ২৬০ কিমি দূরত্বে তা ট্র্যাক, ও ২০০ কিমি দূরত্বে সেটি ধ্বংস করতে পারত।
একটি ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স (অসিন্ট) টুইটার হ্যান্ডেলের বরাত দিয়ে ইউরেশিয়ান টাইমস জানিয়েছে, ওই পরীক্ষায় ইরান সম্ভবত এইচইএসএ কারার টার্গেটিং ড্রোন ব্যবহার করেছে।
আরও জানা গেছে, পরীক্ষার সময় মিসাইলটির সর্বোচ্চ উচ্চতা ২৭ কিমি থেকে বেড়ে ৩২ কিমি-তে পৌঁছায়। ইরানের এয়ার ডিফেন্স ফোর্স-এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলিরেজা সাবাহিফার্দের বরাত দিয়ে দেশটির তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ১২.২ কিমি উচ্চতায় টার্গেট ড্রোনটি ধ্বংস করা হয়।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মোকাবিলা করতে পারবে বাবর-৩৭৩?
ওই ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টুইটার হ্যান্ডেলে ইরানের এ পরীক্ষাটি নিয়ে একাধিক টুইট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, টার্গেট ড্রোনের রাডার ক্রস সেকশন (আরসিএস) ও সায়াদ বি৪ মিসাইলের এক্স-ব্যান্ড রাডারকে মাপকাঠি হিসেবে ধরে তার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেলথ যুদ্ধবিমান এফ-৩৫-এর তুলনা করলে, বাবর-৩৭৩ মিসাইল সিস্টেম ৯০ কিমি দূর থেকে মার্কিন এই স্টেলথ বিমানকে প্রতিহত করার সক্ষমতা রাখে।
তবে টুইটে আরও জানানো হয়েছে, কেবল সেমি-অ্যাক্টিভ রাডার হোমিং (এসএআরএইচ) বা সিকার এইডেড গ্রাউন্ড গাইডেন্স (এসএজিজি) ব্যবহার করে গাইড করা মিসাইলের পক্ষেই এমনটা করা সম্ভব।
রাডার ক্রস সেকশন দ্বারা কোনো বস্তু একটি রাডারে কত সহজে ধরা পড়বে তা বোঝায়। অন্যভাবে বলতে গেলে, কোনো টার্গেটের আরসিএস হচ্ছে একটি রাডারে ওই টার্গেটের কতটুকু অংশ দেখতে পারে তা। মার্কিন এফ-৩৫-এর আরসিএস মাত্র ০.০০১৫ থেকে ০.০০৫ বর্গমিটার। আবার এক্স-ব্যান্ড ও এস-ব্যান্ড রাডারে সিস্টেমের বিরুদ্ধে স্টেলথ যুদ্ধবিমানগুলো সবচেয়ে বেশি স্টেলথ হিসেবে কাজ করতে পারে বলে বিবেচনা করা হয়।
এসব হিসেবের কথা মাথায় রেখে ইরানের বাবর-৩৭৩ মিসাইল সিস্টেম আদৌ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী এ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-৩৫'কে শনাক্ত করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
'আমার তো মনে হয় এক্স-ব্যান্ড রাডারকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে গুরুত্ব দিয়েই এফ-২২ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানগুলো তৈরি করেছেন প্রকৌশলীরা,' বলেন ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, রাডার, ও সামরিক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ টমাস উইদিংটন।
এসময় তিনি এফ-৩৫'র রাডার জ্যামিং সিস্টেম কাজ শুরু হলে বাবর-৩৭৩ আর এটির টার্গেট লক ধরে রাখতে পারবে কিনা সে প্রশ্নও তোলেন।
এফ-৩৫'র হুমকি ভিএইচএফ ব্যান্ড রাডার
অসিন্ট টুইটার হ্যান্ডেলে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বাবর-৩৭৩ মিসাইল সিস্টেম রাশিয়ার তৈরি ত্রিমাত্রিক ভিএইচএফ এইএসএ রাডার ব্যবহার করে অ্যাক্টিভ রাডার হোমিং গাইডেন্সের মাধ্যমে সায়াদ-বি৪ মিসাইল দিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ কিমি দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার তৈরি ভিএইচএফ (ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি) রাডারগুলো মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মতো স্টেলথ বিমানগুলোর জন্য মারাত্মক হুমকি।
তবে লম্বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারণে ভিএইচএফ রাডারগুলোর পক্ষে কোনো মিসাইলকে সঠিকভাবে গাইড করে লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয় না। বর্তমানে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন রাশিয়ান ডিজাইনারেরা।