জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্র সফর: রিপাবলিকানরা ভবিষ্যৎ সহায়তায় ব্ল্যাঙ্ক চেক দিতে আগ্রহী নয়
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি। আশা করেছিলেন, মার্কিন নীতিনির্ধারকদের নির্দলীয় সমর্থন, যাতে তারা ইউক্রেনকে রক্ষায় বিপুল সহায়তার অনুমোদন অব্যাহত রাখেন। খবর পলিটিকোর
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনেই এপর্যন্ত রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে পারছে ইউক্রেন। দেশটির আইনপ্রণেতাদের কাছে তাই জেলেনস্কির প্রত্যাশা বিপুল। মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণেও তিনি এটি অব্যাহত রাখা এবং আরও বৃদ্ধির অনুরোধ করেন।
জেলেনস্কির ভাষণকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দুই শিবিরের আইনপ্রণেতারাই। পান সজোর করতালি। আপাতদৃশ্যে এটি উষ্ণ অভিবাদন হলেও, কংগ্রেসের পরবর্তী অধিবেশন যখন শুরু হবে তখন ইউক্রেনের প্রতি বড় অঙ্কের সহায়তা অনুমোদনে রাজি নন অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা। এদের মধ্যে দলটির এমন প্রভাবশালীরাও আছেন, যারা নতুন বছরের অধিবেশনে প্রতিনিধি পরিষদে (কংগ্রেস) নেতৃত্বমূলক পদে থাকবেন। সহায়তার বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পক্ষেও নন তারা।
২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ডেমোক্রেট দল। কিন্তু, মধ্যবর্তী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে রিপাবলিকানদের। নতুন কংগ্রেস জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করবে। তখন তাদের হাতেই থাকবে পার্লামেন্টের এই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ।
কংগ্রেসে আপাতত সংখ্যালঘু দল রিপাবলিকানদের নেতা হুইপ স্টিভ স্ক্যালিস গণমাধ্যম পলিটিকোকে বলেন, 'সঠিক জায়গায় টাকা যাচ্ছে কিনা- সেটা নিয়ে আমাদের সঙ্গত উদ্বেগ আছে। মার্কিন করদাতাদের অর্থ, দেশে হোক বা দেশের বাইরে– কোথায় কীভাবে খরচ হচ্ছে তা নিয়ে অবশ্যই বিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে'।
আগামী বছর নতুন কংগ্রেস ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে কিনা জানতে চাইলে স্ক্যালিস বলেন, 'আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে, (ইউক্রেনের জন্য) বরাদ্দ নিয়ে যাতে সঠিক বিতর্ক ও বিশ্লেষণ হয়। আমরা সেই প্রচেষ্টাই চালাচ্ছি'।
বুধবার অবশ্য কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যদের থেকে ইতিবাচক অভ্যর্থনা পান জেলেনস্কি। রিপাবলিকানরা এসময় ইউক্রেন, দেশটির জনগণ ও সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তবে তাদের অনেকেই বলেছেন, দেশটির পেছনে হাজারো কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে তারা নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করবেন।
রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান গ্যারি পালমার বলেন, 'আমি মনে করি তিনি (জেলেনস্কি) চমৎকারভাবে তার ভাষণে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই মূল্যবোধে আমরা সকলে বিশ্বাস করি ও অন্তরে লালন করি। আমাদের বিশ্বাস, বিশ্বের সর্বত্রই দুর্বৃত্ত শাসকেরা এগুলোর জন্য হুমকি'।
তবে তিনি এও বলেন যে, '(সহায়তা দানের ক্ষেত্রে) স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়ে অনেকের উদ্বেগ থাকবে, এটাও জেলেনস্কিও বোঝেন। তিনি সেটা উল্লেখ করেছেন যে, এসব ক্ষেত্রে সবচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজন রয়েছে'।
ইউক্রেনকে এপর্যন্ত ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি শুধু সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহে গতি এনেছে। বুধবার দেশটির জন্য আরও ১৮৫ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়, এর আওতায় ইউক্রেন পাবে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
তবে পুরো পরিস্থিতির ওপর ছায়া ফেলেছে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের আসন্ন নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটেও ইউক্রেনের জন্য দেওয়া বরাদ্দ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন রিপাবলিকান সিনেটররা।