টাইটানের অক্সিজেন প্রায় শেষ, চলছে চূড়ান্ত তল্লাশি
আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ সাবমার্সিবল 'টাইটান'-এর সন্ধানে বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনের মতো জোর তল্লাশি চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার একাধিক টিমসহ, সমুদ্র ও আকাশপথ থেকে চলছে সর্বাত্মক অনুসন্ধান। পাঁচজন যাত্রী নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সাবমার্সিবলটিতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অক্সিজেনের মজুদ রয়েছে। ফলে সময়ের সাথে যুদ্ধ করছেন উদ্ধারকারীরাও।
মিনিভ্যান আকারের এই সাবমার্সিবলটি রবিবার বেলা আটটায় যাত্রা শুরু করে। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত জাহাজ 'টাইটানিক' এর ধ্বংসাবশেষ দেখতে দুই ঘণ্টার ট্রিপের ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরেই পানির ওপরে থাকা সাপোর্ট শিপের সঙ্গে সাব এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর পেরিয়ে গিয়েছে চার দিন, কিন্তু এখনও হদিস মেলেনি অভিযাত্রীদের।
'টাইটান' এর নির্মাতা ও এই অভিযানের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওশানগেট বলছে, টাইটান ৯৬ ঘণ্টা চলার মতো অক্সিজেন নিয়ে রওনা দিয়েছিল, যা বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
তবে অক্সিজেন কতক্ষণ থাকবে তা বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন, সাবমার্সিবলে এখনও কতটা শক্তি রয়েছে এবং ভেতরে থাকা যাত্রীরা নিজেদের শান্ত রাখতে পেরেছেন কিনা।
তবুও, অক্সিজেন হ্রাস পাওয়ার কাউন্টডাউন শুধুমাত্র একটা অনুমানভিত্তিক ডেডলাইন হিসেবে দেওয়া। এর পেছনে এই অনুমান কাজ করছে যে সাবমার্সিবলটি এখনও অক্ষত আছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বা সমুদ্রের গভীরে কোথাও আটকা পড়েনি।
দিকে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড হারিয়ে যাওয়া পর্যটকবাহী সাবমার্সিবলের এলাকা থেকে থেকে আবারও শব্দ শোনা গেছে জানানোর পর সাবমার্সিবলে থাকা যাত্রীদের পরিবার এবং উদ্ধারকারীরাও আশান্বিত হয়ে উঠেছিল।
বুধবার মার্কিন কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে শব্দতরঙ্গ ব্যবহারে শব্দ শনাক্তের তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে ক্যাপ্টেন জেমি ফ্রেডরিক জানান, উদ্ধারকারী দল এখনো নিশ্চিত নয় যে, শব্দটি সাবমেরিন থেকে আসা আওয়াজই কি-না। উদ্ধারকাজে জড়িত থাকা দলগুলো 'শব্দের উৎস' খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
যদিও কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে এখনো নিখোঁজ যাত্রীদের জীবিত উদ্ধারের আশা প্রকাশ করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন ফ্রেডরিক বলেন, "আমাদের আশাবাদী থাকতে হবে।"
একজন পাইলট এবং চারজন যাত্রী নিয়ে গত রবিবার ছোট আকৃতির 'টাইটান' সাবমার্সিবল আটলান্টিকের তলদেশে ডুব দেয়। কিন্তু এর এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরেই প্যারেন্ট জাহাজের সাথে সাবমেরিনটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ ম্যাসাচুসেটসের কেপ কড থেকে প্রায় ৯০০ মাইল (১৪৫০ কিলোমিটার) পূর্বে এবং নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জন'স থেকে ৪০০ মাইল (৬৪৪ কিলোমিটার) দক্ষিণে অবস্থিত।
২১ ফুট লম্বা, নিখোঁজ সাবমার্সিবল 'টাইটান'-এ থাকা যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ৫৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার হ্যামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) এবং তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান; এরা দুজনেই ব্রিটিশ নাগরিক।
যেহেতু যাত্রীদের সাবমার্সিবলের ভেতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দেওয়া হয়েছে, তাই সাব এর ভেতর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায়ও তাদের নেই। এমনকি তারা উপরে ভেসে উঠলেও, বাইরে থেকে কোনো সদস্য যদি দরজা না খুলে দেয় তাহলে যাত্রীরা বের হতে পারবে না।
১৯১২ সালে যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রাতেই ভাসমান হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে টাইটানিক ডুবে যায়। এই দুর্ঘটনায় জাহাজে থাকা ২ হাজার ২০০ যাত্রী ও ক্রুদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার জন নিহত হন। ১৯৮৫ সালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার হয়।