টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া নিয়ে সতর্ক করেছিলেন জেমস ক্যামেরন
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে রবিবার (১৮ জুন) আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওশানগেট এক্সপেডিশনস-এর পর্যটকবাহী সাবমার্সিবল 'টাইটান'। সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে, ফুরিয়ে আসছে অক্সিজেনের মজুদ। এমন সংকটের মধ্যেই অতীতে গভীর সমুদ্রে একাধিকবার অভিযানে যাওয়া কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরনের অভিজ্ঞতার সামনে নিয়ে এসেছে সিএনএন।
এদিকে হারিয়ে যাওয়া পর্যটকবাহী সাবমার্সিবলের এলাকা থেকে আবারও শব্দ শোনা গিয়েছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে শব্দতরঙ্গ ব্যবহারে শব্দ শনাক্তের তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই মুহূর্তে ভ্যান-সাইজের এই ছোট সাবটি উদ্ধারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার একাধিক উদ্ধারকারী দল কাজ করছে। রবিবার অভিযান শুরুর এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরে সাপোর্ট শিপের সাথে এই ডুবোযানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাগরের ৩৮০০ মিটারেরও গভীরে অবস্থিত টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ, যেখানে অভিযান চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এবং চ্যালেঞ্জিং। তবে 'টাইটান' নামক এই সাবমার্সিবলে যারা উঠেছেন, তারা আগে থেকেই এর ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত ছিলেন।
এ পরিস্থিতিতে মেক্সিকান অভিনেতা অ্যালান এস্ট্রাডার দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। ডেইলি মেইল সূত্রে জানা যায়, এই অভিনেতা বলেছেন যে সকল ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকার পরেও তিনি ২০২২ সালের জুলাইয়ে 'টাইটান' সাবমার্সিবলে চড়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
এস্ট্রাডা জানান, তাদের অভিযান সংক্ষিপ্ত করে আনা হয়েছিল যখন এই সাব এর শক্তির উৎস ৪০ শতাংশে নেমে এসেছিল।
তিনি বলেন, "এই সাবমার্সিবলের দুটি ব্যাটারি আছে, যখন দ্বিতীয় ব্যাটারিতে মাত্র ৪০ শতাংশ অবশিষ্ট ছিল, তখন দ্রুত আমাদের পানির উপরে তুলে আনা হয়। অর্থাৎ, তারা চার ঘণ্টা আপনাকে পানির নিচে রাখবে বললেও, তা সম্পূর্ণ হয় না।"
যদিও অভিনেতা জানিয়েছেন যে, তাদের এই ট্রিপ আসলে ২০২১ সালে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তখন 'টাইটান' সাব এর কিছু 'ত্রুটির' কারণে অভিযানে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
ডেইলি মেইলকে এস্ট্রাডা বলেন, যে দুই ঘণ্টা তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল, সেই সময়টা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ সময়।
"১০০০ মিটার যাওয়ার পর আমাদের পাইলট যোগাযোগ সিস্টেমে একটা সমস্যা খুঁজে পান। কিন্তু আমাদের অবশ্যই পানির ওপর থাকা সাপোর্ট শিপের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতেই হবে, তা নাহলে আমরা অতল সমুদ্রে হারিয়ে যেতে পারি", বলেন এস্ট্রাডা।
সতর্ক করেছিলেন জেমস ক্যামেরনও
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিখ্যাত হলিউড চলচ্চিত্র 'টাইটানিক' এর নির্মাতা জেমস ক্যামেরন তার সিনেমাটি নির্মাণের আগে ৩৩ বার সাগরের তলদেশে গিয়েছিলেন।
এছাড়াও, ২০১২ সালে ক্যামেরন 'ডিপ সি চ্যালেঞ্জারস' নামক একটি সাবমার্সিবলে চড়ে মারিয়ানা ট্রেঞ্চেও গিয়েছিলেন। তবে সমুদ্রের তলদেশে এমন অভিযানে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি সতর্ক করেছিলেন আগেই। ২০১২ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, "আপনি পৃথিবীর এমন এক জায়গায় যাচ্ছেন যেখান থেকে কোনো নিস্তার নেই। এটা এমন না যে আপনি জরুরি সংস্থাকে কল দিলেন আর তারা আপনাকে উদ্ধারে চলে আসলো।"
২০০৯ সালে প্লেবয়'কে ক্যামেরন বলেছিলেন, তিনি কোনো প্রেমের কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে 'টাইটানিক' নির্মাণ করেননি। "আমি টাইটানিক সিনেমা বানিয়েছি কারণ আমি এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে চেয়েছিলাম, এই নয় যে ধ্বংসাবশেষ দেখে সিনেমা বানানো ছিল আমার মূল লক্ষ্য", বলেন ক্যামেরন।
টাইটানিক সিনেমার জন্য ফুটেজ ধারণ করতে ক্যামেরন ১৯৯৫ সালে প্রথমবার সাগরের তলদেশে গিয়েছিলেন রাশিয়ার মালিকানাধীন একটি সাবমার্সিবলে করে।
রবিবার নিখোঁজ হওয়া সাবমার্সিবল 'টাইটান'-এ থাকা যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ৫৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার হ্যামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) এবং তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান; এরা দুজনেই ব্রিটিশ নাগরিক।