মৃত ঘোষণা করা, ইসরায়েলকে দশকের পর দশক বিভ্রান্ত করে আসা কে এই ইয়াহিয়া সিনওয়ার?
হামাসকে নির্মুল করার উদ্দেশ্যে গাজা উপত্যকায় মারাত্মক নিষ্ঠুর এক সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। হামলার শিকার হচ্ছে এমনকী হাসপাতালও, বলা হচ্ছে হামাসের সামরিক কমান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে গাজার এসব স্বাস্থ্য অবকাঠামো। মিথ্যে প্রচারণার মাধ্যমে যা ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ আরও চরম করারই নামান্তর। ইসরায়েল গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করাকেও এ অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে। তবে এসব কিছুর আছে সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক এক প্রেক্ষাপট।
দশকের পর দশক ধরে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠুর দখলদারি, প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে প্রাণঘাতি শক্তি প্রয়োগ সবকিছুই ঘটেছে পুরো বিশ্বের চোখের সামনে। জায়নবাদি রাষ্ট্রযন্ত্রের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জমিতে বসতিস্থাপনকারী পশ্চিমা দেশ থেকে আসারা চালিয়ে যাচ্ছে অকথ্য নির্যাতন। গাজাকে অবরুদ্ধ রেখে– সেখানকার ফিলিস্তিনিদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত করে, সময়ে সময়ে তাদের ওপর যুদ্ধ নামক একতরফা আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
বিশ্বশক্তিগুলো এসব অন্যায়ে মদত দিয়েছে। আরব দেশগুলোর ফিলিস্তিনপন্থী নেতাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত এবং তারপর আজ্ঞাবহ শাসকদের দিয়ে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের উদ্যোগ নিচ্ছে পশ্চিমারা।
হামাসের এক নেতা নিবিড়ভাবে এ ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেছেন। ইসরায়েলের দাবি, গত ৭ অক্টোবরের দুঃসাহসী হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কলকাঠি নাড়েন তিনিই। অকুতোভয় এবং ক্ষুরধার মেধাসম্পন্ন এই ব্যক্তিটি হচ্ছেন– বর্তমানে গাজায় হামাসের সর্বোচ্চ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
২০১৭ সাল থেকে ইসমাইল হানিয়ার পদে রয়েছেন তিনি।
১৯৬২ সালে গাজা উপত্যকা যখন মিশরের শাসনাধীন ছিল, তখন সেখানকার একটি শরণার্থী শিবিরে জন্ম হয় ইয়াহিয়ার। ১৯৪৮ সালে আরব ইসরায়েল যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়ে খান ইউনিসের এই শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁর মা-বাবা। বড় হয়ে ইয়াহিয়া উচ্চতর শিক্ষা নেন গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এ বছরের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে দুধর্ষ এক আক্রমণ চালায় প্রায় দেড় হাজার হামাস যোদ্ধা। এতে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে প্রায় ১,৪০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়। হামাস যোদ্ধারা দুই শতাধিক ইসরায়েলিকেও জিম্মি করে নিয়ে যায় গাজায়।
অথচ ওই হামলার আগে দুই দশক ইসরায়লের কারাগারে একাধিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে জেল খেটেছেন তিনি। ১৯৮৯ সালে তাঁকে একসাথে চার দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ইসরায়েলের সামরিক ট্রাইব্যুনাল। ২২ বছর সে সাজা কাটান। এরপর ২০১১ সালে হামাসের সাথে এক বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায়, ইয়াহিয়া সিনওয়ার-সহ ১ হাজার ২৬ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ইসরায়েল।
ইয়াহিয়া ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এক সৈনিক। কারাগারে থাকার সময়েও বিশ্বাসচ্যুত হননি কখনো। জেলে থাকার সময়টা বরং হিব্রু ভাষা শিখেছেন। গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করেছেন ইসরায়েলের সমাজ ও রাজনীতিকে।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা- শিন বেথ। অকথ্য নির্যাতনের জন্য যথেষ্ট কুখ্যাত এই সংস্থা। শিন বেথের হয়ে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে কারাগারে 'জিজ্ঞাসাবাদ' করা মিচা কোবি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ' (ভ্লাদিমির) জাবোতনস্কি, (মোনাচেম) বেগিন ও (আইজ্যাক) রবিন থেকে শুরু করে সব ইসরায়েলি নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রকাশিত সমস্ত বইপত্র পড়তেন তিনি। আমাদের সম্পর্কে তলা থেকে চূড়া পর্যন্ত সবকিছুই তিনি জেনেছেন।'
কারাগারে ১৫ বছর কাটানোর পর ইসরায়েলি একটি টেলিভিশন চ্যানেল তাঁর সাক্ষাৎকার নেয়। সেখানে চমৎকার হিব্রু উচ্চারণে কথা বলেন ইয়াহিয়া। এবং, ইসরায়েলি জনগণের কাছে হামাসের সাথে একটি 'হুদনা' বা চুক্তি করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, 'ইসরায়েলের কাছে প্রায় ২০০ পারমাণবিক অস্ত্র আছে, এই অঞ্চলের সর্বাধুনিক বিমান বাহিনীও তোমাদের। আমরা এই সক্ষমতাকে ভালো করেই বুঝি। আমরা জানি, ইসরায়েলকে ভেঙ্গে ফেলার সামর্থ্য আমাদের নেই।'
এসব কিছুই ছিল ইয়াহিয়া সিনওয়ারের কৌশল। কারণ, ৬১ বছরের এই হামাস নেতা বর্তমানে ইসরায়েলের 'মোস্ট ওয়ান্টেড ম্যান'। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু ঘোষণা করে বলেছেন, সে একজন মৃত ব্যক্তি, যে হেঁটে বেড়াচ্ছে।' এর মাধ্যমে তিনি বলতে চেয়েছেন, সিনওয়ারকে যেকোন সময়ে হত্যা করা হবে। ৭ অক্টোবরের পর নেতানিয়াহুর এই ঘোষণা আসে।
যোদ্ধাদের পাশাপাশি সিনওয়ারের মতোন হামাসের নিবেদিতপ্রাণ, ত্যাগী নেতাদের হত্যা করাই গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন ও স্থল অভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্য। যে আগ্রাসনে এপর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার বিশাল অঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপে রূপ দেওয়া হয়েছে– স্থল, আকাশ ও জলপথ থেকে হামলা করে।
ইসরায়েল কেন সিনওয়ারকে প্রাণের শত্রু জ্ঞান করে?
গাজার খান ইউনিস এলাকায় বেড়ে উঠেছেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। সেখানে তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন মোহাম্মদ দেইফ, যিনি আজ হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান। সশস্ত্র এই শাখা গড়ে তোলার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন সিনওয়ার। একইসঙ্গে সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী– মাজদ ফোর্সের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যেসব ফিলিস্তিনিদের সন্দেহ করা হতো, তাদের হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন।
এভাবে ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগেই, ৪০ বছর ধরে দখলদার এ রাষ্ট্রের সঙ্গে যুঝে চলার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন সিনওয়ার। শানিত দৃষ্টি ও লড়াকু চেহারার ছোট চুলের এই ব্যক্তিকে নিজ দায়িত্বে অটল ও অবিচল বলেই জানতেন তাঁর সহকর্মীরা।
ইসরায়েলি রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান থাকায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীকে ধোঁকা দিতেও সক্ষম হয়েছেন। হামাস তাদের শর্তেই গাজা শাসন করছে, এমন ভ্রান্ত ধারণায় রেখেছিলেন তাদের।
সাম্প্রতিক যুদ্ধের আগে, ইসরায়েলি নেতৃত্ব সিনওয়ারকে একজন বিপজ্জনক চরমপন্থী মনে করলেও, ভেবেছিলেন- গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করা এবং ইসরায়েলের থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ছাড় আদায়েই তিনি সচেষ্ট। সিনওয়ারের নেতৃত্বে হামাস তাদের ঘোষিত লক্ষ্য – ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধবংস করা' – থেকে অনেকটাই পিছু হটেছে বলেও তারা মনে করতেন।
সিনওয়ারকে বোঝার এই ভুল থেকেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা ব্যর্থতার শিকার হয় ইসরায়েল। অনেকেরই মতে, সিনওয়ার চূড়ান্ত ধোঁকার বাস্তবায়ন করেছেন।
ইসরায়েলের সাবেক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও ফিলিস্তিনি-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল মিলস্টেইন বলেন, 'আমরা তাঁকে এক কণাও বুঝতে পারিনি। বলতে গেলে, শূন্যভাগও বুঝিনি।'
সিনওয়ারের সহকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী সিনওয়ার স্বল্পভাষী, উগ্র মেজাজের অধিকারী, তাঁর উপস্থিতি সমীহ ও নেতৃত্বের বোধ জাগায়।
১৯৮৯ সালে যখন ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদা বা গণ-অভ্যুত্থান চলছিল, সে সময়ে সিনওয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন মিচা কোবি। শিন বেথের তৎকালীন এ কর্মকর্তার কাছে একজনকে হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন সিনওয়ার। ওই সময় গাজা ও পশ্চিম তীরের অপেক্ষাকৃত ছোট এক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী ছিল হামাস।
সিনওয়ার তখন আবু ইব্রাহিম নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন, এবং শুরু থেকেই আল-কাসসাম ব্রিগেড গড়ে তোলাকে ধ্যানজ্ঞান করেছিলেন। মূলত ইসরায়েলি দোসর ফিলিস্তিনিদের হত্যার জন্যই ওই সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
কোবির দাবি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকদের দমনে নিষ্ঠুর ছিলেন সিনওয়ার। এমন একটি হত্যাকাণ্ডের কথাই তিনি কোবির কাছে গর্বের সাথে স্বীকার করেন। জানান, ওই বিশ্বাসঘাতকের ভাইকে দিয়েই হত্যার কাজটি করান তিনি, যিনি ছিলেন হামাসেরই সদস্য।
জানা গেছে, ওই ব্যক্তিসহ ১২ ফিলিস্তিনিকে (ইসরায়েলি দোসর) হত্যার জন্য ইসরায়েলের একটি গুপ্ত সামরিক আদালত সিনওয়ারকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং সাজার রায় দেয়।
কিন্তু, এমনই তাঁর ব্যক্তিত্ব যে ইসরায়েলি কারাগারে গিয়ে তিনি সেখানে বন্দি সকল ফিলিস্তিনিদের নেতা হয়ে ওঠেন।
জেলে থাকার সময় তাঁর চরিত্র সম্পর্কে ইসরায়েলের এক গোয়েন্দা বিশ্লেষণে বলা হয়, 'তিনি একজন নিষ্ঠুর, কর্তৃত্বপরায়ণ অথচ প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব, বন্ধু ও মিত্রদের কাছে যিনি সমাদৃত, তাঁর আছে অসাধারণ সহ্যশক্তি, ধীশক্তি ও অন্যকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা; তিনি অল্পতেই তুষ্ট থাকেন… কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থাতেও অনেক কিছুই গোপন রাখতে জানেন। খুব সহজেই তিনি আশেপাশের মানুষকে সমবেত করতে পারেন।'
১৯৮০'র দশকে হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের একজন পরামর্শক হিসেবে উত্থান ঘটে সিনওয়ারের। শেখ ইয়াসিন ছিলেন হামাসের সব সদস্যের কাছে পরম শ্রদ্ধেয় এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে, বিশেষত সামরিক কাজে দক্ষতার পরিচয় দেন সিনওয়ার। সঙ্গে বন্ধু হিসেবে পান মোহাম্মদ দেইফকে।
ফিলিস্তিনিদের কাছে, বিশেষত গাজাবাসীর কাছে কিংবদন্তীর এক চরিত্রে পরিণত হয়েছেন সিনওয়ার। পূর্ব জেরুজালেমের এক ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী বলেন, 'তাঁকে নিয়ে অহংকার করেন বহু ফিলিস্তিনি, ফিলিস্তিনের জনপদে তিনি এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।'
হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যেও তাঁর জন্য সমীহ আছে যথেষ্ট। যদিও এর পেছনে তাঁর প্রতি ভয়ও কাজ করে বলে একটি সূত্রের বরাতে দাবি করেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
সূত্রটি ইসরায়েলি নয়, এবং খুব সম্ভবত ফিলিস্তিনি বা আরব। সিনওয়ারের সাথে তাঁর বহু বছরের বোঝাপড়ার সম্পর্ক থাকা ওই ব্যক্তি বলেছেন, '৭ অক্টোবরে ভয়াবহ আক্রমণের আগে কেউই সিনওয়ারকে প্রশ্নের সম্মুখীন করার সাহস করেননি। নিঃসন্দেহে এটা ছিল নিখুঁত সামরিক অভিযান। কিন্তু এর পরিণতি হচ্ছে বাইবেলে বর্ণিত বিপর্যয়ের মতোন ভয়াবহ।'
২০১১ সালে হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিতের মুক্তির বিনিময়ে সিনওয়ার ছাড়া পান। আর ২০১৭ সালে নির্বাচিত হন হামাসের গাজা প্রধান হিসেবে। এসময় তাঁর পূর্বসূরি ইসমাইল হানিয়াকে রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। যদিও গাজায় নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে দেখলে এ পদোন্নতিকে আসলে পদাবনতিই বলা যায়। কারণ, রাজনৈতিক শাখার প্রধান হয়ে হানিয়াকে চলে যেতে হয়েছে কাতারে।
হানিয়ার বিদায়ের পর কালো কোট আর সাদা শার্টের রাজনীতিবিদের সাজে বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেছেন সিনওয়ার, একইসঙ্গে চলতে থাকে তাঁর তেজস্বী জনসভা।
তাঁর নেতৃত্বে হামাসের শক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে – সীমান্ত বিক্ষোভ, ইসরায়েলে দাহ্য পদার্থ বোঝাই বেলুন প্রেরণ ও রকেট নিক্ষেপ – এর মতোন নানান উপায়ে। এসব চাপ মোকাবিলায় ইসরায়েল মিশর, কাতার ও জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় হামাসের সাথে পরোক্ষভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এবছরের শুরুর দিকে ইসরায়েলের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছিলেন, 'রকেট নিক্ষেপ তাদেরকে আমার সাথে কথাবার্তা বলার সামর্থ্য দেয়।'
মধ্যস্ততার মাধ্যমে ইসরায়েলকে গাজার হাজার হাজার বাসিন্দাকে ওয়ার্ক পারমিট দিতে হয়েছে। এমনকি কাতারের আরও আর্থিক সহায়তা গাজায় আসতে দিতে রাজি হয় তেল আবিব।
এভাবেই হয়তো চলতে পারতো, তবে কেন সিনওয়ার ৭ অক্টোবরের হামলার সিদ্ধান্ত নিলেন? কারণটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। তিনি দেখছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দুর্নীতিবাদ, প্রমোদপ্রেমী, আদর্শহীন রাজতন্ত্রগুলো একে একে ইসরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। মার্কিন মধ্যস্ততায় তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দাবিকে সম্পূর্ণ ভুলে গেছে বা অবজ্ঞা করছে। আরব বিশ্বের শাসকদের কাছে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রাম গৌণ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত পশ্চিম তীরে আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে ইহুদি বসতি। পশ্চিম তীর সম্পূর্ণ দখলের পর একদিন গাজারও একই পরিণতি হবে। দূরদৃষ্টিতে সিনওয়ার হয়তো এভাবেই দেখেছেন।
এই যুদ্ধ শুরুর পরে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, হামাসের অন্যতম লক্ষ্য সৌদি-ইসরায়েল কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকে ঠেকানো। আর সেজন্যই প্রয়োজন হয়েছে বিপুল আত্মত্যাগ।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সূত্র ওই আরব/ ফিলিস্তিনি জানান, 'তিনি নম্র, বিনয়ী নন। তাঁর আছে প্রচণ্ড অহংকার, স্থির বিশ্বাস করেন, এই পৃথিবীতে এসেছেন গুরুত্বপূর্ণ এক মিশন নিয়ে।' সিনওয়ারের সেই মিশন হলো- মাতৃভূমির মুক্তি এবং ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান।
ইসরায়েল গাজাকে ধুলার সাথে মিশিয়ে দিতে পারে, হয়তো সিনওয়ারকেও হত্যা করতে পারবে, কিন্তু এই অঞ্চলে ইসরায়েলের আকাঙ্ক্ষা এরমধ্যেই হোঁচট খেয়েছে। এবং মরবেন তবু মাথানত করবেন না– সিনওয়ারের এই ইচ্ছাও হয়তো পূরণ হবে। 'আর সেটাও হবে তাঁর এক প্রকারের বিজয়'- বলেন মিচা কোবি।