শিশুরাও ইসরায়েলি সৈন্যদের নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না, স্টেডিয়ামে আটকে রাখার ভিডিও প্রকাশ্যে
ফিলিস্তিনি বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ ও অন্তত দুই শিশুকে গাজার উত্তরাঞ্চলের একটি স্টেডিয়ামে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) ধরপাকড় করে আটকে রেখেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও ক্লিপে ঠিক এমনটাই দেখা গিয়েছে।
একটি ক্লিপে দুটি অল্প বয়স্ক ছেলেকে অন্তর্বাস খুলে স্টেডিয়ামে আইডিএফ সদস্যদের নির্দেশ অনুযায়ী উভয় হাত উপরে তুলে হাঁটতে দেখা যায়। অন্য আরেকটি ক্লিপে ঐ ছেলেদের অন্য কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের সাথে একই লাইনে সারিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ভিডিওটি ঠিক কবে শুট করা হয়েছে সেটি সিএনএন এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে গণমাধ্যমটির পক্ষ থেকে ভিডিওটির একটি ভৌগলিক অবস্থান আন্দাজ করা হয়েছে; যেটি মূলত গাজার ইয়ারমুক স্টেডিয়াম। একই অঞ্চলে মানবধিকার সংগঠন ইউরো-মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের পক্ষ থেকে গাজাবাসীদের আটকের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সিনএনএন-এর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে ভিডিওগুলো সম্পর্কে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তবে এখনো পর্যন্ত বাহিনীটির পক্ষ থেকে সাড়া প্রদান করা হয়নি।
গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী কয়েকশ ফিলিস্তিনি পুরুষ ও শিশুকে আটক করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আইডিএফ আগে দাবি করেছিল যে, বিস্ফোরক বহন করছে কি-না সেটি নিশ্চিত হতেই আটক করা হয়েছিল।
ভিডিওজুড়ে দেখা যায়, অনেক পুরুষের গায়ে অন্তর্বাস পর্যন্ত নেই। কিছু ক্লিপে বন্দীরা হাত পিঠের পেছনে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে। কেউ কেউ আবার চোখ বাঁধা অবস্থায় এক লাইন করে রয়েছেন। এমতাবস্থায় ইসরায়েলি সৈন্যরা তাদের নজরদারি ও তল্লাশি করছে।
প্রকাশিত ক্লিপে বেশকিছু নারী ও শিশুদেরও জিম্মি অবস্থায় দেখা যায়। তেমনি একটি ক্লিপে দেখা যায়, স্টেডিয়ামে গোলপোস্টের সামনে ঘাসের উপর বসে আছে সম্পূর্ণ পোশাক পরিহিত তিনজন নারী। তাদের চোখ ও হাত বাঁধা। আর গোলপোস্টের উপর একটি ইসরায়েলি পতাকা ঝুলতে দেখা যায়। একইসাথে ফিলিস্তিনি বেশ কয়েকজন পুরুষকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় ঐ নারীদের পাশে বসে থাকতে দেখা যায়।
ক্লিপে পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে সামরিক যান ও বুলডোজারও দেখা যায়। মূল ভিডিওটি গত ২৪ ডিসেম্বর ইয়োসি গামজু লেটোভা নামের এক ব্যক্তি আপলোড করেন। ফেসবুক প্রোফাইল অনুসারে তিনি একজন ফটোগ্রাফার ও শিল্পী।
অলাভজনক সংস্থা ইউরো মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের তথ্যমতে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরের শেখ রাদওয়ান পাড়া থেকে কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে কয়েক ডজন নারীও রয়েছে। এদের ইয়ারমুক স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মানবাধিকার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, "১০ বছরের কম বয়সী শিশু থেকে ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ সেখানে রয়েছে। অনেক ফিলিস্তিনি পুরুষদের অন্তর্বাস ছাড়া সমস্ত পোশাক খুলে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে। ঐ একই স্টেডিয়ামে আটক মহিলাদের সামনে তাদের অপমানজনকভাবে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে।" একইসাথে সংস্থাটির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আটকের ছবিগুলো তদন্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় অন্তত ২১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আর আহত হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার জন। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
এদিকে আগ্রাসন বন্ধ না করলে পুনরায় ইসরায়েলের সাথে আলোচনায় বসবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে হামাস। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আল-রিশক এমনটাই জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "হামাসের নেতৃত্ব আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ও গণহত্যার স্থায়ী অবসান চায়। আমাদের জনগণ এই আগ্রাসনকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ দেখতে চায়। অল্প সময়ের জন্য একটি অস্থায়ী বা আংশিক যুদ্ধবিরতির জন্য অপেক্ষা করতে চায় না। কেননা এর পরে তারা পুনরায় মারাত্মকভাবে আগ্রাসন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে পারে।"
এদিকে হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না করার আগ পর্যন্ত সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল। আর তাই বোমাবর্ষণ এবং একটি স্থায়ী স্থল আক্রমণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তেল আবিব।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলের অভিযান আরও অনেক মাস ধরে অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন আইডিএফ এর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ হার্জি হালেভি। গত মঙ্গলবার আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, "লড়াইটি একটি জটিল এলাকাজুড়ে হচ্ছে। অতএব, যুদ্ধ আরও অনেক মাস ধরে চলবে এবং আমরা বিভিন্ন উপায়ে কাজ করব। যাতে করে সময়ের সাথে সাথে অর্জনগুলো ধরে রাখা যায়।"