ত্বকের ক্যান্সারের প্রথম ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক’ টিকা নিলেন ব্রিটিশ ব্যক্তি
প্রাণঘাতী ত্বকের ক্যান্সার 'মেলানোমা'র বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রথম 'ব্যক্তিকেন্দ্রিক' এমআরএনএ টিকার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা হয়েছে যুক্তরাজ্যে।
হার্টফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা ৫২ বছর বয়সি ব্রিটিশ স্টিভ ইয়াং প্রথম টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের একজন। গত বছরের আগস্টে ইয়াংয়ের মাথার খুলির ত্বক থেকে মেলানোমায় আক্রান্ত কোষ অপসারণ করা হয়।
এ টিকাদানের লক্ষ্য, তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অবশিষ্ট ক্যান্সার কোষগুলোকে চিহ্নিত করে নির্মূল করতে সাহায্য করা।
আশা করা হচ্ছে, এর ফলে তার ত্বকের ক্যান্সার আর ফিরে আসবে না।
ইয়াং বিবিসি রেডিও ফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, '[এ পরীক্ষা] আমাকে সম্ভাব্য অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো অনুভূতি আস্বাদনের সুযোগ করে দিয়েছে।'
এমআরএনএ-৪১৫৭ (ভি৯৪০) নামের এ টিকা বর্তমানে প্রচলিত কিছু কোভিড টিকার মতো একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো হয়েছে। এখন টিকাটির চূড়ান্ত পর্যায়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হসপিটালসের (ইউসিএলএইচ) চিকিৎসকরা এ টিকার পাশাপাশি পেমব্রোলাইজুমাব বা কিট্রুডা নামের আরেকটি ওষুধ দিচ্ছেন। কিট্রুডাও ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করে।
মডার্না ও মার্ক শার্প অ্যান্ড ডোম (এমএসডি) এই যৌথ চিকিৎসা উদ্ভাবন করেছে। তবে এ চিকিৎসা এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে।
অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের বিশেষজ্ঞরাও এ টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন, ব্যাপক পরিসরে টিকাটি ব্যবহার করা সম্ভব কি না।
এ টিকা ব্যক্তিকেন্দ্রিক—অর্থাৎ একেক রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী এর গঠন পরিবর্তন করা হয়।
প্রত্যেক রোগীর নিজের টিউমারের জিনগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মেলানোর জন্য টিকাটি তৈরি করা হয়েছে। ক্যান্সার কোষগুলোতে পাওয়া যায়, এমন মার্কার বা অ্যান্টিজেনের ওপর আক্রমণ চালাতে সক্ষম প্রোটিন বা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শরীরকে নির্দেশ দেয় এ টিকা ।
ইউসিএলএইচের গবেষক ড. হেদার শ বলেন, মেলানোমায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ করে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে টিকাটির। ফুসফুস, মূত্রাশয় ও কিডনির টিউমারের মতো অন্যান্য ক্যান্সারের ওপরও এ টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
হেদার শ বলেন, এ টিকা রোগীর জন্য কাস্টম-বিল্ট, অর্থাৎ প্রত্যেক রোগীর জন্যই আলাদাভাবে বানানো। এক রোগীকে যে টিকা দেওয়া হবে, সেই টিকা আরেক রোগীকে দেওয়া যাবে না; কারণ দ্বিতীয় রোগীর ওপর টিকাটি কাজ করবে না।
তিনি বলেন, 'এটি আসলেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক।'