কন্যাকুমারীতে মোদির ৪৫ ঘণ্টার ধ্যানও রক্ষা করতে পারেনি বিজেপিকে! তামিলনাড়ুতে বিজেপি আসন শূন্য
হিন্দি বলয়ে দাপট থাকলেও বিগত লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ ভারতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি বিজেপি। তাই এ নির্বাচনে দক্ষিণ ভারতে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে মরিয়া ছিল দলটি। কিন্তু কাজ হলো না। মোদি তথা মোদির দল বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে। মোদির হিন্দুত্ববাদ এবার ধাক্কা খেয়েছে।
নির্বাচনের আগে নানাভাবে হিন্দুত্ববাদকে ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়েছেন মোদি। এরই ধারাবাহিকতায় মোদি নির্জনে গিয়ে ধ্যানও করেন। সঙ্গে তিনি দাবিও করেন, ঈশ্বর তাকেই মনোনীত করেছেন। কিন্তু ভোটে সেই সমর্থন মিলল না।
ভারতীয় সংবাদপত্র আনন্দবাজার রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে: নরেন্দ্র মোদি শেষ দফার ভোটের প্রচার শেষ করেই তামিলনাড়ুর উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে গিয়ে কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ শিলা, 'ধ্যানমণ্ডপম'-এ ৪৫ ঘণ্টা ধ্যান করেন। কিন্তু সেই ধ্যান নিষ্ফলই থাকল।
তামিলনাড়ুতে বিজেপিকে কোনো সুরক্ষা দিতে পারল না। বিজেপি রাজ্যটিতে জিততে পারেনি একটিও আসন। মোদির এনডিএ জোট মাত্র একটি আসন পেয়েছে। ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট, হিন্দুত্ববাদী আবেগ এখানে উসকে দিয়েও লাভ হয়নি মোদি-অমিত শাহদের।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, তামিলনাড়ুতে এবার একপেশে লড়াই হয়েছে। রাজ্যের শাসকদল ডিএমকে ২২টি আসন পেয়েছে। কংগ্রেস পেয়েছে ৯টি আসন। সিপিএম এবং সিপিআই ২টি করে আসন পেয়েছে। বিরোধী ইনডিয়া জোটের অন্য দুই শরিক দল একটি করে আসন পেয়েছে। প্রধান বিরোধী দল এডিএমকে কোনো আসন পায়নি।
হিন্দি বলয়ে দাপট অব্যাহত থাকলেও এতদিন দক্ষিণ ভারতে প্রভাব ফেলতে পারেনি মোদির বিজেপি। তাই এবারের নির্বাচনে দক্ষিণ ভারতে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে মরিয়া ছিলেন মোদি। বিশেষত তামিলনাড়ুর জন্য আলাদা পরিকল্পনা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও রাজ্যটিতে কোন আসন পায়নি বিজেপি। কিন্তু এবার সেই ধারা পাল্টাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মোদি এবং অমিত শাহ। কিন্তু মোদি জাদু কাজ করল না।
নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে বারবার তামিলনাড়ু গেছেন মোদি। রোড-শো, জনসভা কিছুই বাদ দেননি। তামিলনাড়ুর বিজেপি নেতৃত্বও আদাজল খেয়ে নেমেছিল। মোদি প্রতিটি সভায় হিন্দুত্ববাদী আবেগ উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি কচ্চতীবু দ্বীপের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। ভোটের মুখে এই দ্বীপ সংক্রান্ত একটি তথ্য প্রকাশ্যে এসেছিল। তথ্য জানার অধিকার আইনের (আরটিআই) মাধ্যমে পাওয়া সেই রিপোর্ট সামনে রেখে কংগ্রেস ও ইন্দিরা গান্ধীকে নিশানা করেন মোদি। জনসভায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কচ্চতীবু দ্বীপ নিয়ে প্রতিবেদন ছাপানো হয়।
কচ্চতীবু দ্বীপের অধিকার নিয়ে তামিলনাড়ুতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। তামিলনাড়ুর অনেকের দাবি, ১৯৭৪ সালের চুক্তি প্রত্যাহার করে কচ্চতীবু দ্বীপ আবার ভারতকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু কোনো সরকারই সে দাবি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায়নি।
এবারের ভোটে সেই আবেগকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিল বিজেপি। সাক্ষাৎকারে মোদি বলেছেন, ''ভগবান রামের নাম রয়েছে, এমন গ্রামের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি তামিলনাড়ুতেই।" ফলে রাজনীতিবিদদের একাংশ মনে করেছিলেন, তামিলনাড়ুর আঞ্চলিক আবেগ উসকে দেওয়ার পাশাপাশি 'হিন্দুত্ববাদী' তাসও খেলেছেন মোদি।