সর্বাধিক আসন পাওয়া এনএফপি জোট কারা? কে হবেন ফ্রান্সের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটে কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালির (আরএন) জয়যাত্রাকে আটকে দিয়েছে বামপন্থি জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট।
ডানদের হতাশ করে রোববার (৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার ভোটে অধিকাংশ আসনে জয় পেয়েছে বাম জোট, জয় পেয়েছে ১৯৮ আসনে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর মধ্যপন্থি এনসেম্বল জোট জয় পেয়েছে ১৬৯ আসনে আর মেরিন লা পেনের নেতৃত্বাধীন কট্টর ডানপন্থি আরএন মোট ১৪৩ আসনে জয় পেয়েছে।
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটে জয় পেয়েছিল কট্টর ডানপন্থিরা। তবে দ্বিতীয় দফার ভোটে বামপন্থি জোটের জয়ে কট্টর ডানপন্থি সরকারের ক্ষমতায় আসা বন্ধ হলেও, কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় পার্লামেন্টে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
যেখানে এক মাস আগেও নিউ পপুলার ফ্রন্টের (এনএফপি) কোনো অস্তিত্ব ছিল না, সে জোটটি এখন ফ্রান্সের নির্বাচনে সংসদে সর্বাধিক আসন জিতেছে এবং এখান থেকেই ফ্রান্স পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পেতে পারে।
১৯৩৬ সালে ক্ষমতা লাভ করা থেকে কট্টর ডানপন্থীদের আটকে দেয়া মূল পপুলার ফ্রন্টকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বামপন্থী জোট নিজেদের নাম দিয়েছিল নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি)।
এ জোটটি বিভিন্ন দল নিয়ে গঠিত: কট্টর-বামপন্থী ফ্রান্স আনবোড পার্টি, মধ্যপন্থি সোশ্যালিস্ট পার্টি, গ্রিন ইকোলজিস্ট পার্টি, ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টি, মধ্য-বামপন্থি প্লেস পাবলিক এবং অন্যান্য ছোট দল। তবে দলগুলো প্রায়ই নিজেদের মাঝে দ্বিমত পোষণ করে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনে খারাপ ফলের জেরে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আগাম নির্বাচনের ঘোষণাও দেয়ার পর জোটটি গঠন করা হয়।
ফ্রান্সের সমাজতান্ত্রিক নেতা অলিভিয়ার ফাউর জোট গঠনের ব্যাপারে বলেছিলেন, 'ইউরোপীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ইমানুয়েল মাখোঁ এমন এক জুয়া খেললেন যখন ডানপন্থিরা সবচেয়ে শক্তিশালী। শুধু ঐক্যবদ্ধ বামই এটা আটকাতে পারবে।'
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর এনএফপি জোটের প্রতিটি দল আলাদাভাবে নির্বাচনী ফলাফল উদযাপন করেছে। জোট কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেবে তা স্পষ্ট নয়। তবে জোটের নেতাদের মধ্যে সব থেকে এগিয়ে আছেন ফ্রান্স আনবোড পার্টির ৭২ বছর বয়সী নেতা জাঁ লিক মিলোশঁ। তার দল বামজোটের হয়ে সংসদে ৭৪ টি আসন জিতেছে।
ফ্রান্স আনবোড পার্টির নেতা জাঁ লিক মিলোশঁ-এর বিরুদ্ধে নির্বাচনে ইহুদিবাদকে ব্যবহার অভিযোগ রয়েছে; বিগত তিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলটি প্রচারণার জন্য ইহুদিবাদকে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি ফ্রান্সের ইহুদি ভোটারদের ওপর চালানো আইফপ-এর একটি সার্ভে থেকে দেখা গেছে, মিলোশঁ এর দল ক্ষমতায় এলে ৫৭ শতাংশ ফরাসি ইহুদি ভোটার ফ্রান্স ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
মিলোশঁ প্রধানমন্ত্রী না হলে তার জায়গায় জন্য আরও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হতে পারেন সমাজতান্ত্রিক নেতা অলিভিয়ার ফাউর বা প্লেস পাবলিকের মধ্যপন্থি নেতা এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রাফায়েল গ্লুকসম্যান।
নির্বাচনে প্রথম হওয়া নিউ পপুলার ফ্রন্টের এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি ও খাদ্যের মতো নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা, ন্যূনতম মাসিক মজুরি নিট ১,৭৩২ ডলারে উন্নীত করা, সরকারি খাতের কর্মীদের বেতন বাড়ানো ও ধনীদের ওপর সম্পদ কর বসানো। দলটি ফল পাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বলেছে, তারা দেশ পরিচালনা করতে চায়।
এনএফিপি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠনের জন্য জোটটিকে আরো একটি জোট গঠন করতে হবে। সরকার গঠনের জন্য ফ্রান্সে ২৮৯টি আসনের প্রয়োজন হলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেউ না পাওয়ায় বাম জোটকে সরকার গঠন করতে হলে অন্যদের সমর্থন নিতে হবে। তাই দেশটিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের সম্ভাবনাই এখন বেশি।
এর ফলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা অনিশ্চিত। মাখোঁর এনসেম্বল পার্টি জানিয়েছে, দলটি ফ্রান্স আনবোডের সাথে কাজ করবে না এবং দলটিকে আরএন-এর মতোই কট্টরপন্থী বলে অভিহিত করেছে।
ফ্রান্সের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আত্তাল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, 'কোনও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কট্টরপন্থা দ্বারা পরিচালিত করা যায় না।'
আবার জনগণের খরচ বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি এনএফপি নির্বাচনের আগে দিয়েছিল, তা একই সাথে যেমন আর্থিক বাজারের চিন্তার কারণ হতে পারে তেমনি ফ্রান্সের জন্য অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।