মার্কিন নির্বাচন: আর বাকি ১০ দিন—হ্যারিস–ট্রাম্পের প্রচারণা তুঙ্গে, জরিপ কী বলছে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র দশ দিন বাকি। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস দখলের লড়াই এখন গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঙ্গরাজ্যে (সুইং স্টেট) হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প উভয়ই তাদের সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে পুরোদমে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
টেক্সাসে গায়িকা বিয়ন্সে, তার সাবেক ব্যান্ড ডেসটিনির চাইল্ড-এর সঙ্গী কেলি রোল্যান্ড এবং জনপ্রিয় কান্ট্রি সিঙ্গার উইলি নেলসন হ্যারিসের পক্ষে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে তাদের তারকাসত্তার প্রভাব কাজে লাগিয়েছেন।
অন্যদিকে, ট্রাম্প তার প্রচারণার অংশ হিসেবে জনপ্রিয় পডকাস্টার জো রোগানের সঙ্গে তিন ঘণ্টার এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে অংশ নেন। পরে তিনি মিশিগানে ভ্রমণ করেন, সেখানে অপেক্ষমাণ একটি ছোট্ট জনসমাবেশেও বক্তব্য রাখেন।
সর্বশেষ জনমত জরিপ কী বলছে?
নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের ২০–২৩ অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালিত সর্বশেষ জাতীয় জরিপে দেখা যাচ্ছে, হ্যারিস এবং ট্রাম্প দুজনই জাতীয় পর্যায়ে ৪৮ শতাংশ সমর্থন নিয়ে সমান অবস্থানে রয়েছেন। বাকি ৪ শতাংশ ভোটার এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
নারী ভোটারদের মধ্যে হ্যারিস ৫৪ শতাংশ সমর্থন নিয়ে ট্রাম্পের ৪২ শতাংশকে ছাড়িয়ে এগিয়ে আছেন। তবে পুরুষ ভোটারদের ক্ষেত্রে ট্রাম্প ৫৫ শতাংশ সমর্থন নিয়ে হ্যারিসের ৪১ শতাংশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সি ভোটারদের থেকে হ্যারিস ৫৫ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন, যেখানে ট্রাম্পের সমর্থন ৪৩ শতাংশ। তবে ৪৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সি ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প ৫১ শতাংশ সমর্থন নিয়ে হ্যারিসের ৪৪ শতাংশকে পেছনে ফেলেছেন।
হ্যারিসের জন্য উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন আমেরিকা ভুল পথে চলছে। অন্যদিকে মাত্র ২৭ শতাংশ দেশ সঠিক পথে রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন।
বিভিন্ন জাতীয় জরিপের গড় নির্ধারণকারী ফাইভথার্টিএইটের পোল ট্র্যাকার জানিয়েছে হ্যারিস ৪৮ শতাংশ সমর্থন নিয়ে ট্রাম্পের ৪৬.৬ শতাংশের চেয়ে সামান্য এগিয়ে রয়েছেন। তবে তার এ লিড সপ্তাহের শুরুর ১.৮ শতাংশ থেকে কমে ১.৪ শতাংশ হয়েছে।
জাতীয় জরিপগুলো ভোটারদের মনোভাব নিয়ে মূল্যবান তথ্য দিলেও চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারিত হবে ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে, যা বিভিন্ন রাজ্যের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে গঠিত।
নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সাতটি রাজ্য (সুইং স্টেট)—অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, উত্তর ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন। একত্রে এ রাজ্যগুলোর ৯৩টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের জন্য অপরিহার্য ২৭০টি ভোটের এক-তৃতীয়াংশ।
ফাইভথার্টিএইটের সর্বশেষ জরিপের গড় অনুসারে, উত্তর ক্যারোলিনায় ট্রাম্প গড়ে এক শতাংশ সমর্থনে এবং অ্যারিজোনা ও জর্জিয়ায় দুই শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। মিশিগান, নেভাদা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনে হ্যারিস ও ট্রাম্পের মধ্যে সামান্য ব্যবধান রয়েছে; পেনসিলভানিয়া ও নেভাদায় ট্রাম্প সামান্য এগিয়ে, আর মিশিগান ও উইসকনসিনে হ্যারিস সামান্য লিডে রয়েছেন।
জনমত জরিপে যে ইঙ্গিতই থাকুক না কেন, নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল যেকোনো দিকেই যেতে পারে।
শুক্রবার কমলা হ্যারিস কী করেছেন?
শুক্রবার হ্যারিস টেক্সাসের হিউস্টনে গায়িকা বিয়ন্স নোলস, কেলি রোল্যান্ড এবং উইলি নেলসনের সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন।
এ প্রচারণা কর্মসূচিতে হ্যারিস গর্ভপাত অধিকারের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। এর মাধ্যমে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে তার পার্থক্য তুলে ধরতে ও নারী ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছেন।
টেক্সাস ১৯৭৬ সাল থেকে কোনো ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীকে সমর্থন করেনি, এবং এবারও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেখানে ৪০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
তবে ডেমোক্র্যাটরা আশা করছেন, নির্বাচনের ঠিক আগে গর্ভপাত অধিকারের পক্ষে কমলা হ্যারিসের বক্তব্য টেক্সাসের ভোটারদের মধ্যে তার জন্য একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করবে।
রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ অ্যাবটের নেতৃত্বে টেক্সাসে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কঠোর গর্ভপাত-বিরোধী আইন কার্যকর রয়েছে।
শুক্রবার কী করেছেন ট্রাম্প?
শুক্রবার ট্রাম্প টেক্সাসে প্রচারণায় অংশ নিয়ে অস্টিনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় পডকাস্টার জো রোগানের 'দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্স' পডকাস্টের একটি পর্ব রেকর্ড করেন।
বিশেষ করে তরুণ পুরুষদের মধ্যে তার লাখ লাখ অনুসারী রয়েছে। ইউটিউবে তার পডকাস্টের ১.৭৫ কোটি ও স্পটিফাইতে ১.৪ কোটি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। মিডিয়া মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, তার পডকাস্টের শ্রোতাদের গড় বয়স ২৪ বছর।
রোগানের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প আবারও আয়কর বাতিলের পক্ষে তার সমর্থনের কথা বলেন এবং শুল্কের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
এরপর তিনি মিশিগানের ট্র্যাভার্স সিটিতে একটি সমাবেশে অংশ নেন। সেখানে তিনি হ্যারিসের আরব-আমেরিকান সম্প্রদায়ের সঙ্গে টানাপোড়েনের বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ সম্প্রদায়ের সমর্থন নির্বাচন জয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
আরব-আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ সমর্থন নিয়ে হ্যারিসের ৪৩ শতাংশের চেয়ে এগিয়ে আছেন। আরব নিউজ/ইউগভ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রতি হ্যারিসের প্রশাসনের অব্যাহত সমর্থন নিয়ে এ সম্প্রদায়ের অনেকেই অসন্তুষ্ট।
'কমলা মিশিগানে আরব ও মুসলিম জনসংখ্যার মাঝে একেবারে পতনের মুখে,' মন্তব্য করেন ট্রাম্প। 'তিনি তাদের চাকরি বিদেশে পাঠিয়েছেন, তাদের এলাকায় অপরাধ বাড়িয়েছেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা বিস্ফোরণ্মুখ অবস্থায় পৌঁছেছে। এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে যা আমরা আগে দেখিনি।'
ট্রাম্প সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান লিজ চেনির সঙ্গে হ্যারিসের জোটের কথাও উল্লেখ করেন। লিজ চেনি হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণা করছেন। চেনি ইরাক যুদ্ধের অন্যতম কুশীলব ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির কন্যা, দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্পের সঙ্গে তার বিরোধ। ট্রাম্প জনসমাবেশে বলেন, 'কমলা মুসলিম-বিরোধী লিজ চেনিকে সঙ্গে নিলে মুসলিমরা কেন কমলাকে সমর্থন করবে?'
হ্যারিস ও ট্রাম্পের পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
শনিবার মিশিগানের কালামাজুতে সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার সঙ্গে একটি সমাবেশে অংশ নেবেন কমলা হ্যারিস।
মিশেল ওবামার জন্য এটি হবে হ্যারিসের প্রচারণায় অংশগ্রহণের প্রথম ইভেন্ট। শনিবারই মিশিগানে প্রাথমিক ভোটগ্রহণের প্রথম দিন।
অন্যদিকে, ট্রাম্পও শনিবার পেনসিলভানিয়ায় একাধিক ইভেন্টে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে তার দিন শুরু হবে মিশিগানে একটি সমাবেশ দিয়ে।
ট্রাম্পের রানিং মেট জেডি ভ্যান্সও প্রচারণায় রয়েছেন; পেনসিলভানিয়ার এরি ও হ্যারিসবার্গে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার আগে তিনি আটলান্টায় একটি প্রচারণা ক্যাম্পেইনে যাবেন।