কানাডার প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার ঘোষণা ট্রুডোর
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সোমবার (৬ জানুয়ারি) তার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েক মাস ধরে জনপ্রিয়তার পতন এবং লিবারেল দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের পর তিনি বলেছেন, নতুন নেতা নির্বাচিত হলে তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন।
২০১৫ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ট্রুডো অটোয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, 'দল যখন পরবর্তী নেতা নির্বাচন করবে, তখন আমি প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় নেতা উভয় পদ থেকেই সরে দাঁড়াব।' তবে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি কতদিন থাকবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
তিনি আরও জানান, লিবারেল দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া হবে 'শক্তিশালী এবং দেশজুড়ে প্রতিযোগিতামূলক'।
ট্রুডোর এ ঘোষণার ফলে এটি স্পষ্ট হলো যে, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ মাসে ক্ষমতা নেওয়ার সময়ও কানাডার নেতৃত্বে তিনিই থাকবেন। ট্রাম্পের সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধের জবাব দেওয়া এবং নতুন প্রশাসনের প্রতি কানাডার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া নির্ধারণের দায়িত্ব থাকবে তার ওপর।
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই কানাডার সব আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ট্রুডো বলেছেন, তিনি এ ধরনের পদক্ষেপের কড়া জবাব দেবেন।
লিবারেল দলের ভেতরে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা গত বছর থেকেই কমছিল। তবে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় ডিসেম্বরে, যখন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেন।
একটি কড়া ভাষার পদত্যাগপত্রে ফ্রিল্যান্ড অভিযোগ করেন, ট্রুডো কানাডার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার পরিবর্তে ভোটারদের খুশি করার জন্য রাজনৈতিক কৌশলে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।
ফ্রিল্যান্ডকে লিবারেল দলের নেতৃত্বের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক গভর্নর এবং ব্যাংক অব কানাডার প্রাক্তন প্রধান মার্ক কার্নির নামও।
ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক লরি টার্নবুল বলেন, সাধারণত লিবারেল দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ হতে চার থেকে ছয় মাস সময় লাগে। তবে এবার তা আরও দ্রুত করতে হবে।
তিনি এএফপিকে বলেন, 'যদি আগামী নির্বাচনের আগে দলের নতুন কোনো নেতা নির্বাচিত না হয়, তবে তাহলে [ট্রুডোর] পদত্যাগের কোনো অর্থ দাঁড়াবে না।'
ট্রুডোর লিবারেল দল বর্তমানে ভোটের হিসাবে বিরোধী কনজারভেটিভদের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। গত বছর সংসদে তিনবার অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েও অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে এটি।
ট্রুডোর সংখ্যালঘু সরকার এতদিন বামপন্থী নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) সমর্থনে টিকে ছিল। তবে ডিসেম্বরে এনডিপি জানায়, তারা পরবর্তী সুযোগে ট্রুডো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে ভোট দেবে।
জাস্টিন ট্রুডো নিশ্চিত করেছেন, তিনি কানাডার গভর্নর জেনারেলের কাছ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত সংসদের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুমতি পেয়েছেন।
এতে লিবারেল দলের জন্য নতুন নেতা নির্বাচন করার সময় পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে বিরোধীদের অনাস্থা ভোট আনার সুযোগও সীমিত হবে।