ট্রুডোর পদত্যাগের পর কানাডার ভবিষ্যৎ কী?
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সোমবার (৬ জানুয়ারি) তার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েক মাস ধরে জনপ্রিয়তার পতন এবং লিবারেল দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের পর তিনি বলেছেন, নতুন নেতা নির্বাচিত হলে তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন। খবর বিবিসির।
এই পদত্যাগের মাধ্যমে কানাডার রাজনীতির একটি দীর্ঘ অধ্যায় শেষ হতে চলেছে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ট্রুডো লিবারেল পার্টিকে রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা থেকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছিলেন।
পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও ট্রুডো বলেছেন, নতুন লিবারেল নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি দল এবং দেশের নেতৃত্বে থাকবেন।
তবে ট্রুডোর পদত্যাগের পর কাকে পরবর্তী নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হবে এবং আসন্ন ফেডারেল নির্বাচন কীভাবে সামলানো হবে, তা নিয়ে দলে চর্চা তুঙ্গে। সবার মনেই এখন প্রশ্ন—এরপর কী হতে চলেছে?
প্ররোগড পার্লামেন্ট কী?
সোমবার কানাডীয়দের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাস্টিন ট্রুডো জানান, দেশের গভর্নর জেনারেল তার পার্লামেন্ট প্ররোগ করার অনুরোধ গ্রহণ করেছেন। প্ররোগড পার্লামেন্ট মানে হলো সংসদ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা, যেখানে বিতর্ক ও ভোটসহ সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, তবে সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে না।
এটি সংসদীয় প্রক্রিয়ার একটি সাধারণ অংশ হলেও কখনো কখনো রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সময় কিনতে সরকার এটি ব্যবহার করে।
সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্টে ট্রুডো পার্লামেন্ট প্ররোগ করেছিলেন, যখন তার সরকার একটি চ্যারিটির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে নৈতিকতার প্রশ্নে বিতর্কের মুখে পড়েছিল।
এবারের প্ররোগেশন ২৪ মার্চ পর্যন্ত সংসদের কার্যক্রম স্থগিত রাখবে।
কে হবেন লিবারেল পার্টির পরবর্তী নেতা?
লিবারেল পার্টি সম্ভবত প্ররোগেশন চলাকালীন সময়ের মধ্যেই নতুন নেতা নির্বাচনের চেষ্টা করবে। তবে কীভাবে নেতা নির্বাচন করা হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
কানাডার ফেডারেল পার্টিগুলোর নেতৃস্থানীয় নির্বাচন সাধারণত চার থেকে পাঁচ মাস ধরে চলে। এর মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব নির্বাচন সম্মেলনও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সোমবার ট্রুডো জানান, নতুন নেতা একটি 'দৃঢ়, দেশব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার' মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন।
লিবারেল পার্টির প্রেসিডেন্ট সচিত মেহরা বলেছেন, জাতীয় বোর্ডের একটি বৈঠক এই সপ্তাহেই ডাকা হবে নতুন নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে।
ট্রুডোর পর কে দলের হাল ধরবেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থীর নাম আলোচনায় এসেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, পরিবহনমন্ত্রী অনিতা আনন্দ এবং সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকার মার্ক কার্নি।
পরবর্তী নির্বাচন কবে?
কানাডায় পরবর্তী ফেডারেল নির্বাচন অবশ্যই অক্টোবরের মধ্যে হতে হবে। তবে এবার তার আগেই ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মতামত জরিপে দ্বিগুণ অগ্রগামী অবস্থানে থাকা প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি কয়েক মাস ধরে হাউস অব কমন্সে একাধিক অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন বাধ্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অনাস্থা ভোটে সরকারকে ৩৩৮ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমর্থন পেতে হয়। লিবারেল পার্টি ১৭টি আসনে পিছিয়ে রয়েছে, ফলে তাদের কানাডার অন্যান্য দলের সদস্যদের সমর্থন প্রয়োজন।
এখন পর্যন্ত বামপন্থী নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ট্রুডোকে সরকার ধরে রাখতে যথেষ্ট সমর্থন দিয়েছে।
তবে সোমবার ট্রুডো সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর, এনডিপি নেতা জগমিত সিং বলেন, তিনি লিবারেল পার্টির পতন ঘটানোর পক্ষে ভোট দেবেন, নেতা যেই হোন না কেন।
তিনি বলেন, 'তারা আরেকটি সুযোগ পাওয়ার যোগ্য নয়।'
২৪ মার্চের মধ্যে লিবারেল দলের নেতৃত্বে যিনি আসবেন, তার জন্য শাসনের সময় খুবই সীমিত থাকবে।
প্ররোগেশন শেষে প্রথমে একটি আস্থা ভোটের আয়োজন হবে। সরকার যদি এই আস্থা ভোটে হেরে যায়, তাহলে হয় পদত্যাগ করতে হবে, নতুবা সংসদ ভেঙে ফেডারেল নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
এক জরিপ বলছে, যদি আজই কানাডায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি সহজেই জয়লাভ করবে।
পিয়েরে পলিয়েভ্রে কে?
মতামত জরিপ অনুসারে, কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পলিয়েভ্রে কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
২০২২ সালে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর একজন কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন এবং বারবার আগাম নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছেন।
পলিয়েভ্রে নিজেকে 'অ্যান্টি-এলিট' এবং 'অ্যান্টি-ট্রুডো' হিসেবে উপস্থাপন করেন, যিনি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এপ্রিল মাসে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি ট্রুডোকে 'উন্মাদ' এবং 'চরমপন্থী' বলে আখ্যা দেন। পরবর্তীতে, এই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত করা হয়।