আম্বানি, জাকারবার্গ, বেজোস…ট্রাম্পের অভিষেকে ধনকুবের ও শীর্ষ নির্বাহীদের মেলা
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আশপাশে দেখা গেল প্রযুক্তি খাতের ধনকুবের, বিদেশি কূটনীতিক ও শীর্ষস্থানীয় সিইওদের মেলা। তাদের অনেকেই ওয়াশিংটনের সেন্ট জনস চার্চ এবং ইউএস ক্যাপিটলে ট্রাম্পের ভাষণের আগে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অভিষেক দিবসের চার্চ সেবা সাধারণত তেমন একটা নজর কাড়ে না। কিন্তু এবার এই পর্বও যেন যুক্তরাষ্ট্র ও নামিদামি মানুষদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। হোয়াইট হাউসের কাছেই অবস্থিত ওই চার্চে একে একে প্রবেশ করেন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা।
ক্ষমতায় ফেরার দ্বিতীয় পর্বে ট্রাম্পের প্রতি প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের এই আনুগত্য বিশেষভাবে চোখে পড়ছে। বিশেষ করে ইলন মাস্কের মতো বিলিয়নিয়ারদের তার ঘনিষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যা দেখে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষ সতর্কবার্তাও দিয়েছেন।
নিচে অভিষেক দিবসের কয়েকজন বিশিষ্ট অতিথির নাম দেওয়া হলো।
টেসলা সিইও ইলন মাস্ক
বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং টেসলা, স্পেসএক্স ও এক্স-এর প্রধান ইলন মাস্ক নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে বিজয়ী করতে ২৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেন। ট্রাম্পও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন।
চার্চ সেবায় মাস্ক একাই উপস্থিত হয়েছিলেন।
টিকটক সিইও শৌ জি চিউ
ট্রাম্পের অভিষেকের আগের দিন রোববার টিকটক এক বিবৃতিতে বলে, ট্রাম্পের সহায়তায় মার্কিন ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাপটির সেবা ফের চালু করা সম্ভব হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে রোববার টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও ট্রাম্প ঘোষণা দেন, সোমবার তিনি ক্ষমতায় ফিরেই অ্যাপটির প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে আনবেন।
তিনি আরও জানান, ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ব্যবহারকারীর এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র যৌথ উদ্যোগ নেবে।
মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গ
নভেম্বরে ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ ঘোষণা দেন, তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানি মেটা প্ল্যাটফর্মস যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্ট চেকিং কার্যক্রম বন্ধ করছে। পাশাপাশি অভিবাসন ও লিঙ্গ পরিচয়ের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণও শিথিল করার ঘোষণা দেন তিনি।
ট্রাম্পের রক্ষণশীল সমর্থকদের চাপে পড়ে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প একসময় জাকারবার্গকে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিলেও মেটা সিইও নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছেন।
চার্চ সেবায় জাকারবার্গ তার স্ত্রী, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রিসিলা চ্যানের সঙ্গে আসেন।
মিরিয়াম অ্যাডেলসন
ক্যাসিনো খাতের ধনকুবের এবং রিপাবলিকান দলের অন্যতম বড় দাতা মিরিয়াম অ্যাডেলসন প্রিজার্ভ আমেরিকা সুপার পিএসি-র নেতৃত্বে রয়েছেন, যা ট্রাম্পের প্রচারণায় বিশাল অঙ্কের অনুদান দিয়েছিল। ইসরায়েলে জন্ম নেওয়া অ্যাডেলসন এবং তার প্রয়াত স্বামী শেলডন ২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রথম বিজয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
ভারতীয় ধনকুবে মুকেশ আম্বানি
ভারতের শীর্ষ ধনী এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানিও ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ বাজারমূল্যে ভারতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। জ্বালানি ও রিটেইল ব্যবসার মতো বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে তাদের। ট্রাম্পের প্রাক-অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আম্বানি।
আর্নো পরিবার
এলভিএমএইচ-এর সিইও বার্নার্ড আর্নো তার স্ত্রী হেলেন মের্সিয়ে এবং দুই সন্তান ডেলফিন আর্নো ও আলেকজান্ডার আর্নোকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে হাজির হন। আর্নোর পাঁচ সন্তানই বিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল পণ্য প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। ডেলফিন আর্নো ফ্যাশন ব্র্যান্ড ডিঅর-এর প্রধান, আর আলেকজান্ডার যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জুয়েলারি ব্র্যান্ড টিফানি অ্যান্ড কোং-এর রিব্র্যান্ডিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্রান্সে ফিরছেন। সেখানে তিনি এলভিএমএইচের ওয়াইন ও স্পিরিট বিভাগ পরিচালনা করবেন। ফ্রান্সের সবচেয়ে ধনী পরিবার আর্নোদের মালিকানাধীন এলভিএমএইচের বাজারমূল্য প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার।
অ্যামাজনে চেয়ারম্যান জেফ বেজোস
রকেট কোম্পানি ব্লু অরিজিন ও ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার মালিক জেফ বেজোস এ বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তার সংবাদপত্রের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছেন। এর ফলে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী কমালা হ্যারিসের জন্য সমর্থনপত্র প্রকাশ বন্ধ রাখা হয়। অ্যামাজন তাদের প্রাইম ভিডিও প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করছে। বেজোসের বাগদত্তা লরেন সানচেজ তার সঙ্গে ক্যাপিটলে উপস্থিত ছিলেন।
গুগল সিইও সুন্দর পিচাই
অ্যামাজন ও মেটার মতো অন্যান্য বড় কোম্পানির মতো অ্যালফাবেট-এর মালিকানাধীন গুগলও ট্রাম্পের অভিষেক তহবিলে ১ মিলিয়ন ডলার করে অনুদান দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন সম্ভবত বাইডেন সরকারের অধীনে নেওয়া গুগল ভেঙে দেওয়ার মতো কঠোর অ্যান্টিট্রাস্ট নীতিগুলো শিথিল করবে।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
ট্রাম্প একসময় বরিস জনসনকে 'ব্রিটেনের ট্রাম্প' আখ্যা দিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে জনসন ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ইউক্রেনের বিজয়ের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে জনসন ছিলেন অন্যতম জোরালো সমর্থক। এই ভূমিকাকে তিনি আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন।