১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তার প্রশাসন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
সোমবার দায়িত্ব গ্রহণের পর ওভাল অফিসে নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষরের সময় তিনি এ ঘোষণা দেন।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে উত্তর আমেরিকার বাণিজ্য নীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। এর জেরে মার্কিন ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়াতে পারে।
মেক্সিকো ও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম তিন বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে।
গত বছর মেক্সিকো থেকে ৪৭৫ বিলিয়ন ডলার ও কানাডা থেকে ৪১৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা দেশটির মোট আমদানির ৩০ শতাংশ।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র গত বছর কানাডায় ৩৫৪ বিলিয়ন ডলার এবং মেক্সিকোতে ৩২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ।
ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ করলে দেশ দুটিও পাল্টা শুল্ক বসাতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
সোমবার একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের বাণিজ্য নীতির রূপরেখা তুলে ধরেন। তবে সূত্র জানিয়েছে, এই আদেশটি কেবল 'অস্থায়ী ব্যবস্থা'; এতে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত নতুন বৈশ্বিক শুল্ক আরোপের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
সোমবার স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির কারণ খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে অযৌক্তিক বাণিজ্য নীতিগুলো চিহ্নিত করা এবং বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য উন্নয়নের পথ খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া এই আদেশে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা বাণিজ্যচুক্তি (ইউএসএমসিএ) কীভাবে মার্কিন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের ওপর প্রভাব ফেলছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে থাকা উচিত কি না, তা বিশ্লেষণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারি সংস্থাগুলোকে।
নির্বাচনি প্রচারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রাম্প যেন মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের ওপরই ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপ করতে পারেন, সে কৌশল নির্ধারণে নিয়মিত বৈঠক করছে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক দল। সেই সময়ই এই অস্থায়ী আদেশ এল।
অভিষেক ভাষণেই ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি শুল্কনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চান।
তিনি আরও দিয়েছেন, 'এক্সটার্নাল রেভিনিউ সার্ভিস' নামে একটি নতুন সরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে, যা শুল্ক সংগ্রহের দায়িত্বে থাকবে।
তবে কীভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক দলে এখনও মতবিরোধ রয়েছে। এছাড়া শুল্ক আরোপের আইনি ভিত্তি নিয়েও আলোচনা চলছে, কারণ এতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও কোম্পানিগুলো আদালতে মামলা করতে পারে।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বাস্তবায়ন হলে তা মার্কিন অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। মার্কিন জনগণ ইতিমধ্যেই টানা উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় ক্লান্ত। এর মধ্যে এই নতুন শুল্ক আরোপ পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূলত বিদেশি পণ্য আমদানি করা মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোই শুল্ক পরিশোধ করে। তবে আদতে বাস্তবে সেই বাড়তি খরচ সাধারণ ভোক্তাদের কাঁধেই চাপানো হয়—ফলে পণ্যের দাম বাড়ে।
ট্রাম্প বারবার আশ্বস্ত করেছেন, এই শুল্ক মূলত বিদেশি দেশগুলোই বহন করবে, মার্কিন ভোক্তারা নয়। তবে পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স-এর সাম্প্রতিক গবেষণা উল্টোটা বলছে—ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্ক নীতি বাস্তবায়িত হলে মার্কিন ভোক্তাদের কার্যত শিশুদের খেলনা থেকে শুরু করে বিদেশি স্নিকার, এমনকি খাদ্যপণ্যও বেশি দামে কিনতে হবে।
বিশেষত বিদেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, খেলনা ও খেলাধুলার সরঞ্জামের দাম অনেক বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছে পিটারসন ইনস্টিটিউট। পাশাপাশি পরিবহন সরঞ্জাম, রাসায়নিক ও অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য আমদানিতেও নতুন কর আরোপ করা হবে।
তবে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সমর্থকদের দাবি, এসব আমদানি শুল্ক কৌশলগতভাবে ব্যবহার করা হবে মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য। এতে দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন ভোক্তারা উপকৃত হবে।
ট্রাম্প প্রথম মেয়াদেও কয়েকবার শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। তবে যখনই বিদেশি দেশগুলো আলোচনার টেবিলে এসেছে, তিনি সেই হুমকির তীব্রতা কমিয়ে এনেছেন।
মূলধারার বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদই আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি সংকট ফের মাথাচাড়া দেবে। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দেবে এবং পূর্ণমাত্রার বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হবে। অতীতে দেখা গেছে, মার্কিন শুল্ক আরোপের পর অন্যান্য দেশও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মার্কিন গাড়ি, সয়াবিন ও হুইস্কিসহ বহু পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক বসানো হয়েছিল।