আমেরিকা কী রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক যুদ্ধে জড়াবে?
স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে বিশ্ববাসী পারমাণবিক যুদ্ধ নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন না হলেও- আবার সেই ভয়কেই উসকে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষপর্যন্ত বিধ্বংসী পরমাণু যুদ্ধেও রূপান্তরিত হতে পারে।
বাইডেনের এই বিবৃতির ব্যাখ্যা হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তারা না দিলেও এটা পরিষ্কার যে, পেন্টাগন ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তাভাবনা করেই এগুচ্ছেন। কৃষ্ণসাগরে পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে ইউক্রেনের কোনো সামরিক ঘাঁটিতে পরমাণু হামলার মতো সব ধরনের সম্ভাবনার কথাই মাথায় রেখেছে তারা।
তবে শুক্রবার হোয়াইট হাউজ জানায়, রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে এমন কোনো লক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের নজরে আসেনি।
স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর ৩০ বছর হয়ে গেছে, এরমধ্যে কেউ আর পরমাণু হামলার বিপর্যয় নিয়ে মাথা ঘামায়নি। ১০ কিলোটন ও ১০০ কিলোটন বোমার মধ্যে কোনটা কী রকম বিপর্যয় সৃষ্টি করবে সেই আলাপও এখন অতীত। কিন্তু আসলেই কী তাই? জো বাইডেন তাহলে কীসের কথা বলছেন?
সৈন্যদের পিছু হটার সম্ভাবনা থেকে পুতিনের নিউক্লিয়ার হুমকি
গত মাসে এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলগুলোর দখল বজায় রাখতে প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবেন বলে ইঙ্গিত দেন।
পূর্ব ইউক্রেনের যে চারটি প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে- সেগুলো রক্ষায় 'সবধরনের পন্থা' অবলম্বন করবেন বলে মন্তব্য করেন পুতিন।
এছাড়াও, ১৯৪৫ সালে জাপানে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু যুদ্ধের সূত্রপাত করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বাইডেন বলেন, যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে থাকলে কিউবান মিসাইল সংকটের পর প্রথমবারের মতো আমরা সরাসরি পারমাণবিক হামলার হুমকিতে রয়েছি।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা ক্ষীণ
শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, পুতিনের পারমাণবিক সরঞ্জামাদি পরিবহনের কোনো প্রমাণ নেই। বিশেষ করে, রাশিয়ার দুই হাজার ছোটখাটো অস্ত্রের মজুদে এর কোনো সন্ধান মিলেনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে পুতিন রাশিয়ার পরমাণু শক্তি সংস্থাকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানালেও তাদের কোনো কার্যক্রমের প্রমাণ নেই। কিন্তু, কার্চপ্রণালীর সেতুতে হামলার মতো ঘটনায় ক্ষুদ্ধ ও অপমানিত পুতিন যেকোনো সময় আক্রোশে ফেটে পড়তে পারেন এমন সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
ক্ষীণ হলেও সবরকম সম্ভাবনার কথাই মাথায় রাখছেন মার্কিন কর্মকর্তারা
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর সময়ের তুলনায় এখন এসে পুতিনের পরমাণু চাল নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
বেশকিছু পরাজয়, ক্ষয়ক্ষতির উচ্চহার এবং রাশিয়ান তরুণদের যুদ্ধে যুক্ত হওয়া নিয়ে জন-অসন্তোষের মাঝে পুতিন নিউক্লিয়ার ভীতিকেই রাশিয়ার ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস ফেরানোর উপায় হিসেবে দেখছেন।
বেশ কয়েক মাস ধরেই পেন্টাগন, মার্কিন নিউক্লিয়ার ল্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে পরমাণু বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতির একটা সম্ভাব্য দৃশ্য দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে, এ অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে তাও বের করার চেষ্টা করছে তারা।
তবে পুতিল কোন কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবেন- তা এখনও অস্পষ্ট। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ ঠেকানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলকে বসবাস অযোগ্য করতে পরমাণু হামলার হুমকি দিবেন পুতিন।
- সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস থেকে সংক্ষেপিত