সাড়ে ৮টার পর দোকান বন্ধ! সরকারের নির্দেশ মানতে নারাজ পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং জ্বালানি খরচ কমাতে পাকিস্তানে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে সকল দোকানপাট, বাজার ও শপিংমল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানান, মন্ত্রিসভা অনুমোদিত এই পদক্ষেপের ফলে দেশটির প্রায় ৬২ বিলিয়ন রুপি (২৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সাশ্রয়ের আশা করা হচ্ছে।
তবে সরকারের নির্দেশনা মানতে নারাজ পাকিস্তানের ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকেরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার দেশটির বৃহত্তম শহর লাহোর, করাচি এবং পেশোয়ারে সরকারের বেধে দেওয়া সময়ের পরেও সব বড় বড় শপিংমল এবং বাজারে দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা যায়।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারের ব্যবসায়ীদের সংগঠন সারহাদ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোহাম্মদ ইসহাক রয়টার্সকে বলেন, "আমরা এই নির্দেশ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি।"
লাহোরের খেলনা ব্যবসায়ী মালিক মুহাম্মদ রাজা বলে ওঠেন, "নতুন এই নীতি আমাকে এবং আমার ব্যবসাকে শেষ করে ছাড়বে। আমার ব্যবসা শুরুই হয় রাত আটটার পর যখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা-মাকে সাথে নিয়ে খেলনা কিনতে আসে।"
পাকিস্তানের প্রধান শহরের মার্কেটগুলো একটু রাত করেই খোলা রাখার প্রবণতা রয়েছে, সচরাচর রাত ১১টার আগে দোকান বন্ধ করা হয় না। এর কারণ, অধিকাংশ ক্রেতাই সন্ধ্যা থেকে বের হতে শুরু করেন।
পাকিস্তানের বাণিজ্যিক কেন্দ্র করাচিস্থ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, মোহাম্মদ আজমল বালুচও একই সুরে জানালেন যে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যবসার সময় কমাতে নারাজ।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে মাত্র একমাসের আমদানি খরচ যোগানো সম্ভব। তাই সরকার এই মুহূর্তে পাকিস্তানে বিদ্যুৎ, গ্যাসের মতো জ্বালানির ব্যয় কমাতে চাইছে।
আইএমএফের কাছ থেকে ১.১ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন বিলম্বিত হওয়ায় পাকিস্তানের ঋণ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাধ্য হয়েই এমন পদক্ষেপ নিতে হলো সরকারকে। আইএমএফের সাথে ইসলামাবাদের কিছু বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে অর্থ আসতে দেরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
গতমাসে পাকিস্তানের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১১.৭ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে; এরমধ্যে মাত্র ৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের শুরুতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তুলনায় পাকিস্তানের বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।