ধোলাইখাল, জিঞ্জিরাকে হালকা প্রকৌশল কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান ব্যবসায়ীদের
ঢাকায় রেপ্লিকা পণ্য উৎপাদনের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত ধোলাইখাল ও জিঞ্জিরাকে হালকা প্রকৌশল কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
'ইমপোর্ট সাবস্টিটিউট ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ: প্রসপেক্টস অফ দ্য লাইট-ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর' শীর্ষক এক সেমিনারে এ আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা বলেন, নকল যন্ত্রাংশ তৈরির অভিযোগে সরকারি কর্তৃপক্ষ প্রায়ই ধোলাইখাল ও জিঞ্জিরা এলাকায় অভিযান চালায়।
এসব এলাকায় উৎপাদিত পণ্য সারাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও, এসব অভিযানের কারণে তাদের ব্যবসা হয়রানির সম্মুখীন হয়। তাই এ এলাকায় যেসব ব্যবসা রয়েছে, সেগুলোকে চাপের মুখে না ফেলে বরং আনুষ্ঠানিক কাঠামোতে রূপান্তর করা উচিত বলে মত দেন ব্যবসায়ীরা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, "ধোলাইখাল ও জিঞ্জিরায় স্থানীয় ছোট হালকা প্রকৌশল কেন্দ্রগুলোকে আনুষ্ঠানিক করার মাধ্যমে আমরা অর্থনীতিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পথ সুগম করতে পারি।"
ধোলাইখাল এবং জিঞ্জিরায় প্রায় ৭,৫০০টি দোকান, কারখানা এবং ওয়ার্কশপ রয়েছে। এসব দোকানে প্রায় ৬০ হাজার লোক কাজ করেন।
এলাকার ব্যবসায়ীরা মূলত মোটর যন্ত্রাংশ, ছোট ছোট যন্ত্রাংশ এবং যানবাহন ও বিভিন্ন শিল্পের খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করে থাকেন।
ডিসিসিআই সভাপতি সমীর সাত্তার বলেন, উপযুক্ত নীতি সহায়তা পেলে হালকা প্রকৌশল খাত খাদ্য, চামড়া এবং পাদুকা, ইলেকট্রনিক্স, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং ওষুধ শিল্পের মতো কয়েকটি প্রধান স্থানীয় খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প হিসেবে কাজ করতে পারে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপিতে ২৭.৩৫% বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে হালকা প্রকৌশল খাতের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হালকা প্রকৌশল পণ্য আমদানির উপর বর্তমান শুল্ক কাঠামো স্থানীয় হালকা প্রকৌশল খাতের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে শুল্ক কাঠামোতে যথাযথ পরিবর্তন আনার জন্য একটি গবেষণা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন সমীর সাত্তার।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ালটনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শোয়েব হোসেন নোবেল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের হালকা প্রকৌশল খাত ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ে ভূমিকা রাখে, জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ৩%, এবং এ খাত বার্ষিক ১০% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ খাতে প্রায় ১৬ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে, যা স্থানীয় চাহিদার ৫০% পূরণ করে।
২০২১-২২ অর্থবছরে হালকা প্রকৌশল খাতের রপ্তানি ছিল ৭৯৬ মিলিয়ন ডলার।
এম এ মান্নান বলেন, "কোরিয়া, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, চীনের মতো দেশগুলো যখন হালকা প্রকৌশল খাতে সাফল্য অর্জন করেছে, তখন বাংলাদেশও ভবিষ্যতে সফল হবে। আমরা সঠিক পথেই আছি।"
তিনি এ বিষয়ে একমত যে, এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে যথেষ্ট স্থিতিস্থাপক, এবং সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সমস্ত নীতি সহায়তা দেওয়া হবে।
বিভিন্ন নীতি নিয়ে সরকারি সংস্থার মধ্যে অসঙ্গতি বেসরকারি খাতের জন্য ভালো নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে নীতিগত সমন্বয় বাড়ানোর চেষ্টা করবে সরকার।
জাপানের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জে একটি অটোমোবাইল গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও করছে সরকার।
প্যানেল ডিসকাশন অংশে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মানোয়ার হোসেন বলেন, এখন আমাদের তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য প্রতিশ্রুতিশীল খাতে নজর দিতে হবে।
"মানব পুঁজিতে আমাদের বিনিয়োগ এখনও দুর্বল।"
তিনি এ খাতে নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ফেয়ার গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে হালকা প্রকৌশলের বাজার ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরশাদ হক বলেন, অনেক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়।